বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হাদিয়ে বঙ্গ-আসাম মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.)

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

ইসলামী পরিভাষায় ‘হাদী’ একটি অতি মর্যাদাপূর্ণ শব্দ এবং এর অর্থ হেদায়েতকারী, সত্যের পথ প্রদর্শক, দিশারী। ইসলাম ধর্মের প্রচারকবৃন্দ সবাই ‘হাদী’ নামে খ্যাত।

তবে বঙ্গ-আসামে বিশেষভাবে হজরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.) ইসলামের তবলীগ-প্রচারে এক অনন্য সাধারণ ভ‚মিকা পালন করেছিলেন বলে তিনি বঙ্গ-আসামের ‘হাদী’ নামে খ্যাত। মাওলানা আবু ইবরাহীম শায়খ বখশ ছিলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের জৌনপুরের মোল্লাটোলা মহল্লার অধিবাসী। তিনি সিদ্দিকী বংশের একজন ফারসিবিদ আল্লাহভক্ত লোক ছিলেন। তিনি জৌনপুরের কালেক্টরেটে সেরেস্তাদার পদে চাকরি করতেন। তারই একমাত্র পুত্র কারামত আলী। কালে তিনি ‘হাদিয়ে বঙ্গ-আসাম’ নামে খ্যাতি লাভ করেন।

বাংলাদেশ ও আসামে ইসলামের তবলীগ-প্রচারে বিখ্যাত পীর মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.) তাঁর জবান ও কলম দ্বারা যে বলিষ্ঠভাবে জেহাদী ভ‚মিকা পালন করেন, এ দেশে ইসলাম প্রচারের ইতিহাসে তা এক স্বতন্ত্র অধ্যায়রূপে পরিগণিত হয়। তাঁর সমগ্র জীবনের ৭৫ বছরের মধ্যে তিনি ৫৭ বছর ইসলাম প্রচারে লিপ্ত ছিলেন। এই গোটা সময়টাই তিনি শিরক ও বেদাতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকেন এবং অসংখ্য লোক এ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।

প্রথমে মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.) তাঁর নিজের জেলায় ও তার আশপাশের এলাকায় যথা আজমগড়, গাজীপুর, ফয়েজাবাদ ও সুলতানপুরে ইসলাম প্রচার করেন। অতঃপর তিনি বাংলাদেশ ও আসামে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে জৌনপুর থেকে কলকাতায় আসেন। তারপর তিনি বাংলাদেশ ও আসামের প্রায় সর্বত্র প্রচার তৎপরতায় লিপ্ত থাকেন। মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.) এমন এক সময়ে প্রচারকার্যে আত্মনিয়োগ করেছিলেন, যখন বঙ্গ-আসামসহ গোটা হিন্দুস্থানে চলছিল ইসলামের করুণ অবস্থা। বেদাত, কুসংস্কার ও বিধর্মী প্রভাবে পরিপূর্ণ।

এ জন্য আধুনিক যুগের একজন প্রখ্যাত আরব লেখক হজরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.)-কে সংস্কার, অসাম্প্রদায়িক, শান্তিপ্রিয় বলে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আমিলা আলা তাতহিরিল এতেকাদাতিল ইসলামিয়াহ আলআল হিন্দিয়াহ, মিনাল আদাতিল ও ছানিয়াহ।’

অর্থাৎ পৌত্তলিক রীতিনীতি ও আচার-আচরণ থেকে হিন্দুস্থানী মুসলমানদের যাবতীয় এতেকাদ বিশ^াসকে পরিশুদ্ধ করার জন্য মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.) কাজ করে গেছেন। তিনি জৌনপুরে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয় বঙ্গ-আসামে।

বিশেষত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.) বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে সফর করেন এবং শিরক-বেদাত প্রভৃতি অনৈসলামিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে থাকেন। তাঁর হাতে দলে দলে লোক বায়াত হয়ে সঠিক পথের অনুসরণ করতে থাকে। বহু স্থানে তিনি মাদ্রাসা-মসজিদ কায়েম করেন। এতদ্ব্যতীত তিনি আরবী-উর্দুতে ৪৯ খানা পুস্তক প্রণয়ন করেন এবং তাঁর বেশ কিছু পুস্তক তখন মাদ্রাসায়ও পাঠ্য ছিল।

বাংলার এই মহান হাদী ও মুজাহেদ হিজরী ১২১৫ সালের ১৮ মহররম মোতাবেক ১৮০০ সালের ১২ জুন জৌনপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং হিজরী ১২৯০ সালের ২ রবিউসসানি মোতাবেক ১৮৭৩ সালের ৩০ মে ইন্তেকাল করেন। রংপুরে তাঁর মাজার অবস্থিত।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
তোফাজ্জল হোসেন ১৯ জুন, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
ইতিহাস সাক্ষী হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্‌ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর হাতে সরাসরি এক কোটি লোক কালেমা পড়ে মুসলমান হয় । আর তাঁর মুরিদ খোলাফাগণের হাতে আরো দুই কোটি মানুষ মুসলমান হয় । সর্বমোট তিন কোটি অমুসলিম কালেমা পড়ে মুসলমান হয়
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ১৯ জুন, ২০২০, ১:৪৩ এএম says : 0
যে সকল রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের অধিকাংশই হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্‌ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর মুরিদ বা মুতাকিদ ছিলেন । কাজেই ইতিহাস গবেষণা করলে একথা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় যে, বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক স্থপতি হলেন; হাদিয়ে বাঙ্গাল শাহ্‌ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) ।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ১৯ জুন, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) বাংলাদেশ ও ভারতের বহু স্থানে সুদীর্ঘ একান্ন বছর ধরে ধর্ম প্রচার ও ধর্ম সংস্কার মূলক কার্যাদি সুসম্পন্ন করার পর অবশেষে ১২৯০ হিজরীতে রংপুর শহরে আগমন করেন
Total Reply(0)
মরিয়ম বিবি ১৯ জুন, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) বাংলাদেশ ও ভারতের বহু স্থানে সুদীর্ঘ একান্ন বছর ধরে ধর্ম প্রচার ও ধর্ম সংস্কার মূলক কার্যাদি সুসম্পন্ন করার পর অবশেষে ১২৯০ হিজরীতে রংপুর শহরে আগমন করেন
Total Reply(0)
বিবেক ১৯ জুন, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ !! বাংলাদেশে কয়েকটা শিরক, বেদয়াত মুক্ত মাজার থাকলে অবশ্যই হাদিয়ে বাঙ্গাল শাহ্ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ)-এর মাজার সবার উর্ধে ।
Total Reply(0)
মুহাম্মাদ ইমরান ১৯ জুন, ২০২০, ১০:৩০ এএম says : 0
বাংলাদেশীরা ধন্য এমন একজন ওয়ালীয়ে কামিল পেয়ে।
Total Reply(0)
jack ali ১৯ জুন, ২০২০, ১২:১০ পিএম says : 0
Now our so called Islamic Scholar's are fighting each other rather to preach Islam in our country. Majority People in our country don't know What is Islam. Scholar's duty to establish Allah's law in our country and also other muslim populated country.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন