ইসলামী পরিভাষায় ‘হাদী’ একটি অতি মর্যাদাপূর্ণ শব্দ এবং এর অর্থ হেদায়েতকারী, সত্যের পথ প্রদর্শক, দিশারী। ইসলাম ধর্মের প্রচারকবৃন্দ সবাই ‘হাদী’ নামে খ্যাত।
তবে বঙ্গ-আসামে বিশেষভাবে হজরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.) ইসলামের তবলীগ-প্রচারে এক অনন্য সাধারণ ভ‚মিকা পালন করেছিলেন বলে তিনি বঙ্গ-আসামের ‘হাদী’ নামে খ্যাত। মাওলানা আবু ইবরাহীম শায়খ বখশ ছিলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের জৌনপুরের মোল্লাটোলা মহল্লার অধিবাসী। তিনি সিদ্দিকী বংশের একজন ফারসিবিদ আল্লাহভক্ত লোক ছিলেন। তিনি জৌনপুরের কালেক্টরেটে সেরেস্তাদার পদে চাকরি করতেন। তারই একমাত্র পুত্র কারামত আলী। কালে তিনি ‘হাদিয়ে বঙ্গ-আসাম’ নামে খ্যাতি লাভ করেন।
বাংলাদেশ ও আসামে ইসলামের তবলীগ-প্রচারে বিখ্যাত পীর মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.) তাঁর জবান ও কলম দ্বারা যে বলিষ্ঠভাবে জেহাদী ভ‚মিকা পালন করেন, এ দেশে ইসলাম প্রচারের ইতিহাসে তা এক স্বতন্ত্র অধ্যায়রূপে পরিগণিত হয়। তাঁর সমগ্র জীবনের ৭৫ বছরের মধ্যে তিনি ৫৭ বছর ইসলাম প্রচারে লিপ্ত ছিলেন। এই গোটা সময়টাই তিনি শিরক ও বেদাতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকেন এবং অসংখ্য লোক এ ধর্মের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।
প্রথমে মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.) তাঁর নিজের জেলায় ও তার আশপাশের এলাকায় যথা আজমগড়, গাজীপুর, ফয়েজাবাদ ও সুলতানপুরে ইসলাম প্রচার করেন। অতঃপর তিনি বাংলাদেশ ও আসামে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে জৌনপুর থেকে কলকাতায় আসেন। তারপর তিনি বাংলাদেশ ও আসামের প্রায় সর্বত্র প্রচার তৎপরতায় লিপ্ত থাকেন। মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.) এমন এক সময়ে প্রচারকার্যে আত্মনিয়োগ করেছিলেন, যখন বঙ্গ-আসামসহ গোটা হিন্দুস্থানে চলছিল ইসলামের করুণ অবস্থা। বেদাত, কুসংস্কার ও বিধর্মী প্রভাবে পরিপূর্ণ।
এ জন্য আধুনিক যুগের একজন প্রখ্যাত আরব লেখক হজরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.)-কে সংস্কার, অসাম্প্রদায়িক, শান্তিপ্রিয় বলে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আমিলা আলা তাতহিরিল এতেকাদাতিল ইসলামিয়াহ আলআল হিন্দিয়াহ, মিনাল আদাতিল ও ছানিয়াহ।’
অর্থাৎ পৌত্তলিক রীতিনীতি ও আচার-আচরণ থেকে হিন্দুস্থানী মুসলমানদের যাবতীয় এতেকাদ বিশ^াসকে পরিশুদ্ধ করার জন্য মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.) কাজ করে গেছেন। তিনি জৌনপুরে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয় বঙ্গ-আসামে।
বিশেষত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (রহ.) বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে সফর করেন এবং শিরক-বেদাত প্রভৃতি অনৈসলামিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে থাকেন। তাঁর হাতে দলে দলে লোক বায়াত হয়ে সঠিক পথের অনুসরণ করতে থাকে। বহু স্থানে তিনি মাদ্রাসা-মসজিদ কায়েম করেন। এতদ্ব্যতীত তিনি আরবী-উর্দুতে ৪৯ খানা পুস্তক প্রণয়ন করেন এবং তাঁর বেশ কিছু পুস্তক তখন মাদ্রাসায়ও পাঠ্য ছিল।
বাংলার এই মহান হাদী ও মুজাহেদ হিজরী ১২১৫ সালের ১৮ মহররম মোতাবেক ১৮০০ সালের ১২ জুন জৌনপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং হিজরী ১২৯০ সালের ২ রবিউসসানি মোতাবেক ১৮৭৩ সালের ৩০ মে ইন্তেকাল করেন। রংপুরে তাঁর মাজার অবস্থিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন