শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

সবুজ প্রকৃতি জীবনের বড় অনুষঙ্গ

প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ আবু নোমান

‘বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস’ আজ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দিবসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ভবিষ্যতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ও জলবায়ু পরিবর্তন । ইতোপূর্বে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সন্মেলনে যেসব কেস স্ট্যাডি উপস্থাপিত হয় তাতে বাংলাদেশের ক্ষতির বিষয়টি প্রাধান্য পায়। সন্মেলনে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্থ দেশ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, নদ-নদী, বনভূমি, সরকার, রাজনীতি, জাতি, ধর্ম, জনসংখ্যা  ও শিক্ষাদীক্ষা প্রভৃতি নিয়ে গঠিত হয় কোনো স্থানের পরিবেশ। ‘প্রকৃতি সংরক্ষণ’ বলতে বুঝায়  সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত স্বাভাবিক ও নৈসর্গিক বস্তুর সংরক্ষণ; যা কোন মানুষের পক্ষে সৃষ্টি সম্ভব নয়। আল্লাহ বলেন, আমি মেঘ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত সৃষ্টি করি এবং তা দিয়ে উৎপাদন করি শস্য, উদ্ভিদ, পাতা ও ঘন উদ্যানরাজি (আননাবা)। পারিভাষিকভাবে পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ব্যাপক বিশ্লেষণধর্মী। অল্প কথায় এর সংজ্ঞায়ন সম্ভব নয়। সংক্ষেপে বলা যায়, আমরা আমাদের চারপাশে যা কিছু দেখি বা যেসব উপাদান বা বস্তুসম্ভার, অবলোকন করি এবং যা প্রকৃতির সঙ্গে জীবজগতের সম্পর্ক ও সহাবস্থানসহ আমাদের স্বাস্থ্য, ভালোমন্দ ও সুখ-দুঃখের ওপর কর্তৃত্ব করে, তাই আমাদের পরিবেশ। বনভূমি ও বন্য পশুপাখি আল্লাহপাকের দান ও প্রকৃতির শোভাবর্ধক। যার সৃষ্টি কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। ক্রমাগত বনভূমি উজাড় করার ফলে বনের পাখিরা অস্তিত্বের হুমকিতে পড়ে তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে। একই সঙ্গে বনাঞ্চলে ফলজ উদ্ভিদ কমে যাওয়ায় খাদ্যসঙ্কটও বাড়ছে।
প্রতিটি মানুষ নিজের ও পরিবারের উন্নয়নের জন্য দিন-রাত আপ্রাণ প্রচেষ্টা করে থাকে। মানুষের হৃদয়াঙ্গম করা উচিত, উন্নয়নের যত উপাদান, উপকরণ যেমন- জীবজগত, মানবজগত, আলো, পানি বাতাস, গাছ-গাছালি সবই প্রকৃতির দান ও নেয়ামত। মানুষ যদি এর সঙ্গে বিরূপ আচরণ করতেই থাকে তার ফলাফল অবশ্যই ভালো হবে না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহপাক হুশিয়ারি করে বলেন, ‘আল্লাহ কখনও পরিবর্তন করেন না সেসব নিয়ামত, যা তিনি কোনো জাতিকে দান করেছিলেন, যতক্ষণ না সে জাতি নিজেই পরিবর্তিত করে দেয় নিজের জন্য নির্বাচিত বিষয়। বস্তুত আল্লাহ শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী’ (আনফাল)। মানুষ তার যাবতীয় প্রয়োজন, খাদ্য, পানি, আলো ও বাতাস সবকিছু প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে। আর আল্লাহপাক মানুষকে পরিবেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করার মতো বিবেক, বুদ্ধি, চিন্তাশক্তি ও জ্ঞানদান করেছেন। ‘নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদাদান করেছি। আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি। তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি,’ (বনি ইসরাইল)।
সবুজ প্রকৃতি না থাকলে মানুষের অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে। অবারিত ফসলের মাঠ আর বৈচিত্র্যময় বনাঞ্চল, বৃক্ষের সজীবতা ও সবুজ শ্যামলীমায় পূর্ণ অনিন্দ্যসুন্দর আমাদের বাংলাদেশ। এরকম প্রাকৃতিক পরিবেশের নিবিড় বন্ধনেই গড়ে ওঠে মানব সভ্যতা। গাছে গাছে ফল, ফুল, পাখির মিষ্টি মধুর কিচিরমিচির, আকাশ থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টি, মাঠ ভরা সোনার ফসল সবই আল্লাহর দান। আল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছি পুরাপুরি ভারসাম্য রক্ষা করতে।’ ‘আমি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে, অতঃপর আমি তা সংরক্ষিত করি, আমি তা অপসারিত করতেও সক্ষম। পানি দিয়ে তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করি, যেখানে তোমাদের জন্য অনেক ফল রয়েছে যা তোমরা আহার কর’ (মু’মিন)।
গাছপালা, বনজঙ্গল, তরুলতা ও উদ্ভিদ মানুষের জীবনের বড় অনুষঙ্গ। মানুষের জীবন এগুলো ছাড়া কল্পনা করা যায় না। প্রাণীকূল অক্সিজেন ছাড়া বাঁচে না। আর এ অক্সিজেনের সম্পূর্ণটাই আসে গাছপালা থেকে।
দিন দিন মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তিত হচ্ছে, সেই সাথে বাড়ছে নানামুখি চাহিদা। শিল্প-কারখানা বর্ধিতায়ন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, উঁচু-উঁচু দালালকোঠার চাহিদা নগরায়নকে ত্বরান্বিত করছে। আর ক্রমবর্ধিত এই নগরায়ন আমাদের সবুজ সতেজ প্রাকৃতিক পরিবেশকে মøান করে দিচ্ছে। নগরাঞ্চলগুলো এখন কনক্রিটের জঞ্জালে পূর্ণ, এখানে বৃক্ষের সজীবতা কিংবা খাল, জলাভূমির শোভা খুঁজে পাওয়া কঠিন। আপাতদৃষ্টিতে লাভজনক মনে হলেও ভিনদেশী আগ্রাসী উদ্ভিদের কারণে বনাঞ্চলের পরিমাণ কমে আসছে। তামাক চাষ, রাক্ষুসে প্রজাতির সেগুন, রেইনট্রি, ইউক্যালিপ্টাস কিংবা আকাশমণি ধরণের গাছগুলো এদেশের পরিবেশকে ভারসাম্যহীতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব কোনো কোনো প্রজাতির গাছের ওপর পাখিরা পর্যন্ত বসে না, যার ফল পাখিরা খায় না। এসব গাছে পাখিরা বাসাও বাঁধে না। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক জাতের পাখি ও প্রাণি।
প্রকৃতি সংরক্ষণের উপাদান ও গুণাগুণ নষ্ট হলে পৃথিবীর ভারসাম্য হারিয়ে পরিবেশ বিপর্যয় ও বসবাসের অনুপযোগী হবে। মানুষের জন্য ক্ষতিকর ও কষ্টদায়ক এমন কিছুই ইসলাম সমর্থন করে না। কোরআন ও হাদিসের আলোকে আল্লাহর সৃষ্টি গাছপালা, পশুপাখি, বনজঙ্গল, পাহাড় পর্বত, নদীনালা, সাগর, মহাসাগর, মাটি, পানি, বাতাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমিত ব্যবহার, গুণাগুণ বজায় রাখা, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা আমাদের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব।
প্রতি বছর শীতকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী পাখির আগমনে মুখরিত হয়। এসব পাখি সমৃদ্ধ করছে এদেশের জীববৈচিত্রের ভান্ডার। অনিন্দ্য সুন্দর এ পাখিগুলো আমাদের প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। শীতের শুরুতেই আমাদের হাওর, বাওড়, মোহনা, উপকূলীয় এলাকা এবং চরাঞ্চলগুলো পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। খাদ্য ও আশ্রয়ের সন্ধানে এসব পাখি হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে আসে। পাখিরা ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমন, মাটিকে উর্বর করাসহ জলজ পরিবেশকে সুন্দর রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু জলাভূমি কমে যাওয়া এবং ফাঁদ, জাল ও বিষটোপের কারণে এ পাখির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এছাড়াও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা এবং আমাদের মত কৃষিভিত্তিক দেশে ফসলের ক্ষতিকর পোকা দমনে উভচর প্রাণি ব্যাঙের গুরুত্ব আমরা হয়তো খুব কমই অনুভব করি। ব্যাঙ যেমন ক্ষতিকর পোকা দমন করে, সেই সাথে ব্যাঙ থেকে মানুষের উপকারী অনেক ওষুধ আবিস্কার করা হচ্ছে। জীববিজ্ঞানীদের মতে ব্যাঙ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম।
একটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সামগ্রিক আয়তনের ২৫ ভাগ বনভূমি সংরক্ষণ করার দাবি করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। রাসূল (সা.) আজ থেকে প্রায় ১৫শ’ বছর আগে পরিবেশ সংরক্ষণ তথা সামাজিক বনায়নের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। গাছপালা লাগানোর ব্যাপারে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেছেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো গাছ লাগায় অথবা কোনো শস্য বপন করে এবং (উৎপাদিত ফল বা ফসল) থেকে কোনো মানুষ ও পশুপাখি খায়, এটা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে’। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঝড় জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন মানুষ। মালদ্বীপ রাষ্ট্রটি পানির নিচে হারিয়ে যেতে পারে, এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে সাগরের তলদেশে ব্যতিক্রমধর্মী মন্ত্রিসভার বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল।
পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা অত্যন্ত স্পষ্ট। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে পরিবেশ সংরক্ষণে বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহপাক পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য পাখ-পাখালী, পশু, হিং¯্র জন্তু, বিষাক্ত সাপ ও বিচ্ছু সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। যেমন- বাঘ, সিংহ, বিষাক্ত সাপ, মৌমাছি, কুমির এদেরকে আল্লাহ বনের পাহাদার হিসেবে রেখেছেন। এজন্য নবী (স.) বিষাক্ত সাপকেও বিনা কারণে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।
আমাদের জাতীয় বন সুন্দরবন। এ বনকে ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে। বলা হয়ে থাকে, ‘করলে রক্ষা সবুজ বন, থাকবে পানি, বাঁচবে জীবন’। অথচ সেই সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য আজ নানা কারণে ধ্বংসের পথে। দেশের মোট আয়তনের মাত্র ১৭ ভাগ বনাঞ্চল। আর এ বনাঞ্চল থেকেই আসে ৭৫ ভাগ পানি। বন থেকে পানি যাচ্ছে, পরে সেটা বাষ্পীভূত হচ্ছে তারপর আবার বনেই ফিরে আসছে। যদি বন না থাকে তাহলে এই চক্রটিই আর থাকবে না। মানব সৃষ্ট কোনো সমস্যা যেন দেশের বনভূমিকে হুমকির মধ্যে না ফেলে সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়াসহ বন ও হাওর রক্ষায় আরও গবেষণার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের সংবিধানে ১৮(ক) অনুচ্ছেদ বলা হয়- ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যত নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন’। ধারাটি বাংলাদেশের সংবিধান ও সরকারি খাতা-কাগজের মধ্যেই কি শুধু সীমাবদ্ধ? এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উন্নত বিশ্ব হতে যে অনুদান বা অর্থসহায়তা প্রদান হচ্ছে তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরী। বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণে বন ও বন্যপ্রাণীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ‘বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ, বাঁচায় প্রকৃতি বাঁচায় দেশ’ প্রকৃতি ও দেশ এর অস্তিত্ব রক্ষায় নদ-নদী, পাহাড়, বন ও জলাশয় রক্ষায় সঠিক আইনী কাঠামো এবং আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা এখনই জরুরী। বনভূমি দখল, জলদস্যু, বনদস্যু, গাছ চোর, মাছ চোর, মৌ চোরসহ সুন্দরবন রক্ষায় সরকারের ফরেষ্ট অফিস, এফ. জি. (ফরেষ্ট গার্ড), এ.সি.এফ. (সরকারি বন সংরক্ষক), ডি.এফ.ও (বিভাগীয় বন কর্মকর্তা)সহ বিভিন্ন সংস্থা থাকা সত্ত্বেও কাজের কাজ কি হচ্ছে, দেখার বিষয়। এ জন্য বনবিভাগের কাজের সমন্বয়সহ এ খাতে সৎ ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির উপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলে আসছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
আমাদের বনাঞ্চলগুলো প্রাকৃতিক সম্পদের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতিটি বনেই সঞ্চিত রয়েছে বন্যপ্রাণী ও অন্যান্য সম্পদ। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি বন ও বনজ সম্পদের উপর নির্ভর করেই বেঁচে আছে এদেশের লাখো কোটি মানুষ। শুধুমাত্র সুন্দরবনের সম্পদের উপর সরাসরি নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ। পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রয়েছে বছরব্যাপী বিভিন্ন দিনে ও নামে ব্যাপক প্রচার। আন্তর্জাতিক বন দিবস, বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস, আন্তর্জাতিক নেচার সামিট, বাঘ দিবস, পরিবেশ দিবস, ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস, বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ দিবস, বিশ্ব জলবায়ু সন্মেলন, ধরিত্রী সন্মেলন প্রভৃতি। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুস্থ ও টেকসই পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যেই এধরনের দিবস পালন করা হয়।
ভারতের আগ্রসী, অন্যায় ও অন্যায্য পানি ছিনতাই নদী শাসনের কারণে অতিবন্যা, উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা, স্বাদু পানির প্রবাহ হ্রাস, লোনা পানির অনুপ্রবেশ ও লবণাক্ততা সৃষ্টি হচ্ছে, যা দেশের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণ। অপরিকল্পিতভাবে নদীতে বাঁধ দেয়া ও দূষণের মাধ্যমে এদেশের অসংখ্য নদী ধুঁকে ধুঁকে মারা পড়ছে। এক সময়ে বাংলাদেশে দেড় হাজারের মতো নদী ছিল। ভারতীয়দের বাঁধ, নদী ও পানি দখলজনিত কারণে দেশের ১৫৮টি নদী এখন রুগ্ন ও মূমুর্ষ হয়ে পড়েছে। ১৭টি নদী একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অন্তত ৮টির অস্তিত্ব এখন বিলুপ্তির পথে। মানুষের বসবাসযোগ্য থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় বস্তু হচ্ছে পানি। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ৬০টি আয়াতে পানির কথা উল্লেখ করেছেন। ‘সারা পৃথিবীর যত বস্তু সবগুলো আমি তৈরি করেছি পানি হতে’ (আম্বিয়া)। দুনিয়ায় যা কিছু প্রাণ পেয়েছে তা কেবল পানি থেকেই পেয়েছে। পানি নিয়ে পবিত্র কোরআনের এ তত্ত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) পানিকে দূষণমুক্ত রাখতে বলেছেন। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি অনাবাদি জমিকে চাষ করে, সে সওয়াব পায়। বর্ণিত আছে, ‘আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে, আগামীকাল কেয়ামত হবে, আপনি তবু আজকেই একটি গাছ লাগান’। মুহাম্মদ (সা.) কৃষি কাজ ও বৃক্ষ রোপণকে সওয়াবের কাজ বলে অভিহিত করেছেন। যারা গাছ লাগায় তারা আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করে। যারা বিনা প্রয়োজনে গাছ নষ্ট করে তারা দোজখে নিক্ষিপ্ত হবে।
আল্লাহতায়ালা পাহাড়-পর্বতকে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে পাহাড়-পর্বতের সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, ‘আর পাহাড়কে আমি পেরেক হিসেবে সৃষ্টি করেছি’ (নাবা)। জমিনকে ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচানোর জন্যই এই পাহাড়ের সৃষ্টি। বর্তমানে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা পাহাড় কাটাকে পরিবেশের জন্য হুমকি মনে করছেন। সব দেশেই পাহাড়-পর্বত কাটা নিষিদ্ধ। পৃথিবীর মানুষকে গাছপালা ও পাহাড়-পর্বতকে ধ্বংস না করার জন্য সতর্কবাণী দিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালাকে) স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য থেকে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি (আল্লাহ) তার বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়’ (রূম)।
abunoman72@ymail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন