যে সকল মানুষ খেয়াল-খুশি, কামনা-বাসনা, ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, ব্যাহত: তারা নিজেদেরকে মুমিন-মুসলমান বলে পরিচয় প্রদান করলেও তাদের অন্তরের সুকুমার বৃত্তিগুলো নষ্ট, ধ্বংস ও সর্বনাশ হয়ে যায়।
ফলে, গোনাহের কাজে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা সর্বদা তাদের পেছনে লেগেই থাকে। যার দরুন এই শ্রেণির লোকেরা অমঙ্গল ও অকল্যাণের নিগঢ় হতে বিমুক্ত হতে পারে না। আর পারে না বলেই মহান রাব্বুল আলামীন তাদের হাল হাকিকতের বিশ্লেষণ এভাবে করছেন।
ইরশাদ হয়েছে : ‘হে রাসূল : আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল খুশিকে নিজের মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে? আল্লাহপাক জেনে বুঝেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন, এবং তার কর্ণে ও তার হৃদয়ে মোহর করে দিয়েছেন, এবং তার চক্ষুর উপর রেখেছেন আবরণ। সুতরাং আল্লাহর পর কে তাতে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সূরা জাসিয়া : আয়াত ২৩)।
এই আয়াতে কারীমায় সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশির অনুসরণ অন্তরের উপর সীলমোহরের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারপর এই সীল মোহরের প্রভাব ও ছাপ অন্তরের পর্দায় অবরণ তৈরি করতে থাকে এবং পরিণামে তা শরীরের সকল অংশে সংক্রমিত হয়ে পড়ে। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন: আল্লাহ তার কর্ণ ও হৃদয়ে মোহর করে দিয়েছেন, এবং তার চক্ষুর উপর রেখেছেন আবরণ।
সুতরাং যে ব্যক্তি অন্তরের সঠিকতা কামনা করে, সে প্রতি পদক্ষেপে সাবধান হয়ে চলে এবং প্রবৃত্তির অনুসরণের মাধ্যমে অন্তরের রোগাক্রান্ত হওয়া থেকে সতর্ক হয় এবং নিজেকে ধ্বংসের হাত হতে রক্ষা পাওয়ার উপায় অন্বেষণ করে। কারণ গোনাহের কাজ অন্তরকে অন্ধ করে দেয়, আল কোরআনের এই বিশেষত্বটি এভাবে ঘোষণা করা হয়েছে : না, এটা নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনের ওপর মরিচারূপ জমে গেছে। (সূরা মুতাফ্ফীদিন : আয়াত ১৪)।
সুতরাং যারা আল্লাহপাকের উপদেশকে মেনে চলে তারা প্রবৃত্তির অনুসরণে গোনাহ বা পাপের দ্বারা স্বীয় অন্তরগুলোকে কলুষিত হতে দেয় না; এমন কি পরিচ্ছন্ন অন্তর দ্বারা পুণ্যাশ্রয়ী জীবন গঠনে সর্বদাই তৎপর থাকে। ইমাম মুসলিম (রা.) হযরত হুযাইফা বিন আল ইয়ামান (রা.) থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, আমি মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি এরশাদ করেছেন : ফিতনা সমূহ মানুষের অন্তরসমূহে এমনভাবে আসতে থাকবে যেভাবে মাদুর বা চাটাই বুনার খেজুরপাতাগুলো একটিরপর একটি সংলগ্ন হয়ে থাকে।
সুতরাং যে অন্তর উক্ত ফিতনার মধ্যে জড়িত হবে সে ফিতনা তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো নকসা সৃষ্টি করে দিবে। আর যে অন্তর উক্ত ফিতনাকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করবে, তবে তার অন্তরের মধ্যে একটি সাদা নূরানী নোকতা লেগে যাবে। এমনিভাবে কালো ও সাদা নুকতা পড়ে অন্তর দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়বে। একটি স্বেত পাথরের ন্যায় ধবধবে সাদা। যতদিন আকাশ ও ভূমন্ডল প্রতিষ্ঠিত থাকবে ততদিন কোনো ফিতনা তাকে ক্ষতি করতে পারবে না।
আর অপর অন্তরটি কালো মিশ্রিত উল্টানো কলসীর ন্যায়। যে কোনো ভালো কথাকে বুঝবে না। মন্দ কথাকে মন্দ বলে জ্ঞান করবে না। ফলে প্রবৃত্তির আনুগত্য করাই তার একমাত্র লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হবে। এতে করে ভালো ও মন্দের পার্থক্য করার শক্তি ও উপলব্ধি সে হারিয়ে ফেলবে। পাপ ও অন্যায়ের তীব্র আকাক্সক্ষার হিন্দোল দোলায় সে আন্দোলিত হতে থাকবে।
এভাবে গোনাহ অন্তরকে সব দিক হতে পরিবেষ্টন করে নেয়। কোনো ব্যক্তি যখন তার প্রবৃত্তি কামনার অনুসরণ করে এবং গোনাহের কাজে লিপ্ত হয় তার অন্তরে প্রতিটি গোনাহের প্রতিফল অন্ধকার প্রবেশ করে এবং তা অন্ধকার করে তোলে। এবং যখন সে গোনাহের কাজে ধারাবাহিকভাবে লেগে থাকে এবং এর জন্য তাওবাহ করে না তার অন্তর জুড়ে ক্রমাগতভাবে অন্ধকারের সৃষ্টি হতে থাকে এবং তা বৃদ্ধি হতেই থাকে। ফলে বৃদ্ধি হয়ে তাকে এমন পর্যায়ে তাকে হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্যবিমুঢ় করে তোলে।
এতে করে তার দুর্ভাগ্যের পাল্লা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং সে এমনভাবে ধ্বংসে নিপতিত হয় যে, সে তা বুঝতেও পারে না এবং অন্তরের অন্ধকারকে আরও গভীরতর করে তোলে। এক পর্যায়ে এই গোনাহগারের মুখ সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠে এবং তা কালো আবরণে ঢাকা পড়ে যায় এবং তার এই রূপ সকলেই দেখতে পায়। (নাউজু বিল্লাহ)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন