সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

রেমিট্যান্স যোদ্ধারা গভীর অন্ধকারে

প্রবাসী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে হবে : ড. মোস্তাফিজুর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০২০, ১২:০৩ এএম

প্রবাসী শ্রমিকদের বলা হয় রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। করোনায় সেই প্রবাসী শ্রমিকরা চোখে অন্ধকার দেখছেন। কারোনার কারণে যারা দেশে আসতে বাধ্য হয়েছেন তারা যেমন বিপদে পড়েছেন; তেমনি যারা বিদেশে রয়ে গেছেন তারাও ভবিষ্যত অন্ধকার দেখছেন। কোনো কিছুতেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না কাজ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে। অথচ এদের অধিকাংশই জমি-বাড়িঘর বিক্রি করে এবং ব্যাংকে ঋণ নিয়ে বিদেশ গেছেন।

প্রবাসী শ্রমিকদের শঙ্কার কারণ জানতে চইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অনারারি ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো প্রবাসীদের আয়। করোনার প্রভাবে এখন মধ্যপ্রাচ্যসহ উন্নত অনেক দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেকে কর্মী ছাঁটাই করছে, আবার অনেকে ছাঁটাইয়ের চিন্তাভাবনা করছে। মধ্যপ্রাচ্যে তেলের বাজার সহসা উঠবে বলে মনে হচ্ছে না। এর ফলে অনেক প্রবাসী এখন সঙ্কট ও চিন্তার মধ্যে আছেন। ফলে সরকারকে ক‚টনৈতিকভাবে উদ্যোগী হয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।

মো. আশরাফুল ইসলাম ওমানে থাকেন। মামাতো ভাই মো. মাইদুলকে নিয়ে ওমান গিয়েছিলেন ৬ লাখ টাকা খরচ করে। মাইদুল ৬ মাস যেতে না যেতে ফিরে এসেছে। ব্যাংকের ঋণ এখন আশরাফুলের ঘাড়ে। করোনা সময় প্রায়ই কাজ বন্ধ থাকে। নিজের উপার্জিত যা ছিল তা ভেঙে খেয়েছেন। এখন সামনে কাজ থাকে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। বললেন, কি হয় বলা মুশকিল। আল্লাহর ওপর ভরসা করে রয়েছি; কাজ থাকলে ঋণ পরিশোধ করতে পারবো। না হলে দেশে ফিরে জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

তানভীর ইসলাম ৭ বছর যাবত মালয়েশিয়ায় আছেন। রেস্টুরেন্টে চাকরি করেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ফেব্রæয়ারি থেকে সবকিছু পাল্টে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে রেস্টুরেন্ট। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তানভীর। প্রায় পাঁচ মাস বেকার। পুঁজি ভেঙে খেয়েছেন। আইনের কঠোরতা ও নানা বিধিনিষেধের কারণে অন্য কোনো কাজও করতে পারছে না। এখন ধার-দেনা করে এখন দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন। দেশে ফেরত আসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তানভীরের সামনে।

আশরাফুল কিংবা তানভীর নয়; এমন লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের আগামীর অনিশ্চয়তার কথা ভেবে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ভিসার মেয়াদ বাড়ানো, বিলম্বে কাজে যোগদানের জন্য ছুটি বাড়ানো ইত্যাদির উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও প্রবাসী শ্রমিকরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তাদের বক্তব্য এসব শুধুই কথার কথা বাস্তবের সঙ্গে মিল নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির প্রধান চার খুঁটির একটি হচ্ছে প্রবাসী আয়। পৃথিবীর ১৬৯টি দেশে এক কোটি ২২ লাখ প্রবাসী আছেন। গত অর্থবছরে প্রবাসী শ্রমিকরা বৈধপথেই রেকর্ড পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। হুন্ডি এবং অন্যান্য পথে পাঠানো টাকা হিসাবে আনলে এর পরিমাণ আরও ৪-৫ বিলিয়ন ডলার বেশি হয়। করোনার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর। এরই মধ্যে কুয়েত, বাহরাইন, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি কর্মী ফেরত আনার জন্য তাগাদা দেয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ ও খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তরুণ-যুবকরা যাতে প্রবাসে থেকে কাজ করে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারে সে জন্য সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত। রেমিটেন্স যোদ্ধারা যাতে সে দেশে থেকে কাজ করতে পারেন সে জন্য ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করা দরকার। কাজ হারিয়ে শ্রমিকরা দেশে ফিলে আসতে বাধ্য হলে এসব মানবসম্পদ সরকারের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
বিবেক ১১ জুলাই, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
রেমিটেন্স যোদ্ধারা অন্ধকারে পড়লে গোটা দেশই তো অন্ধকারে ডুববে।
Total Reply(0)
কামাল ১১ জুলাই, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
হে আল্লাহ আমাদের করোনা মহামারির প্রভাব থেকে রক্ষা করো।
Total Reply(0)
দর্শন ই ইসলাম ১১ জুলাই, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
প্রবাসীদের যে কোনো মূল্যে বাঁচাতে হবে। নাহলে দেশে কঠিন অবস্থা নেমে আসবে।
Total Reply(0)
জাবের পিনটু ১১ জুলাই, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান একটি খাত যদি ঝুঁকির ‍ুমখে পড়ে তাহলে দেশের জন্য অশনি সংকেত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন