মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

দীর্ঘ ৮৫ বছর পর তুরস্কের আয়া সোফিয়ায় উচ্চারিত হলো আজানের আল্লাহু আকবার ধ্বনি

২৪ জুলাই শুক্রবার প্রথম জুমা আদায় করা হবে, জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ঘোষণা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০২০, ৯:৪১ এএম | আপডেট : ৩:০৮ পিএম, ১১ জুলাই, ২০২০

তুরস্কের শীর্ষ আদালত আজ শুক্রবার আয়া সোফিয়াকে ১৯৩৪ সালের তৎকালীন সরকারের যাদুঘরে পরিণত করার আদেশটি বাতিল করেছে। যার ফলে এখন বিখ্যাত এই স্থাপনাটি আবারো মসজিদে রূপান্তরিত করতে আর কোন বাধা রইল না।
 
তুরস্কের প্রশাসনিক আদালত ১৯৩৪ সালের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দেয়ার কয়েক মিনিটের পরেই প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ১০ জুলাই আয়া সোফিয়াকে মসজিদ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার জন্য আদেশ জারি করেন।
এই রায় প্রকাশের পরই খুশিতে মেতে উঠে তুর্কিরা। তারা ইস্তাম্বুলের আয়া সুফিয়ার আশেপাশে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত করে তোলেন। জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক তাত্ক্ষণিক ভাষণে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব
এরদোগান তুরস্কের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে আয়া সুফিয়াকে ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত করেন। আনুষ্ঠানিক আজান ধ্বনিত হয় এবং ২৪ জুলাই শুক্রবার ৮৫ বছর বন্ধ থাকার পর প্রথম জুমার নামাজ পড়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
 
আদালত জানায়,“১৯৩৪ সালে মন্ত্রিসভার যে সিদ্ধান্ত অনুযায় মসজিদ হিসেবে এর ব্যবহার বাদ দিয়ে যাদুঘরে রুপান্তরিত করেছিল তা আইন মেনে করা হয়নি”।
 
আয়া সোফিয়াকে জাদুঘর থেকে মসজিদে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় তুর্কি সরকার। কিন্তু জাদুঘর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থা দেশটির আদালতে এ বিষয়ে মামলা করলে রায় দেওয়ার আগে ২ জুলাই শুনানিতে আদালত পক্ষগুলোর যুক্তি শুনেন।
 
পিটিশনে বলা হয়েছে, আয়া সোফিয়া ইস্তাম্বুল বিজেতা উসমানিয়া সুলতান দ্বিতীয় মেহমুদ- এর নিজস্ব সম্পত্তি যা ১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল দখলের মাধ্যমে অর্জন করে এই ধর্মীয় স্থাপনাকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছিলেন।
 
আয়া সোফিয়া বিশ্বের অন্যতম ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন যা ষষ্ঠ শতাব্দীতে বায়জান্টাইন সম্রাজ্যের আমলে নির্মাণ করা হয়েছিল। এটা গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ হিসেবে ব্যবহৃত হত। পরবর্তীতে ১৪৫৩ সালে উসমানিয়া খিলাফতের সময় ইস্তাম্বুল বিজয়ের মাধ্যমে মুসলিমদের হস্তগত হয়। ১৯৩৫ সালে তুর্কি সেকুলার পার্টি এটিকে জাদুঘরে রূপ দেয়। তবে এটিকে পুনরায় মসজিদ হিসেবে রূপান্তরের দাবি উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
 
যদিও কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে স্থাপনাটিকে মুসলিম উসমানীয় উত্তরাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে আবার মসজিদে রূপান্তরিত করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। আবার অন্যরা বিশ্বাস করেন, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য সাইটের অংশ হিসেবে খ্রিস্টান ও মুসলিম সংহতির প্রতীক হিসেবে একটি যাদুঘর থাকা উচিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, গ্রিস ও ইউনেস্কো এই রায় প্রকাশের আগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
 
আয়া সোফিয়ার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে আঙ্কারার বক্তব্য হলো, এটি একান্তই তুরস্কের আভ্যন্তরীণ বিষয়।
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছিলেন যে, যারা আয়া সোফিয়া সম্পর্কে তুরস্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে তারা সরাসরি তুরস্কের সার্বভৌমত্বের দিকে আঙুল তুলছে।
 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত সপ্তাহে একটি বিবৃতিতে তুরস্ক সরকারকে আয়া সুফিয়াকে জাদুঘর হিসেবে রাখার আহ্বান জানিয়েছিল।
তখন তুর্কি প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন, তুরস্কে ৪৩৫টি গীর্জা ও সিনাগগ রয়েছে যেখানে খ্রিস্টান ও ইহুদিরা প্রার্থনা করতে পারে।
 
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালান গত ৯ জুলাই বৃহস্পতিবার আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, নামাজের জন্য ইস্তাম্বুলের আয়া সোফিয়াকে পুনরায় খোলার ফলে এটি তার পরিচয় থেকে বঞ্চিত হবে না, বরং এটি সর্বদা বিশ্বের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
 
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রধান মসজিদগুলো যেমন ব্লু মসজিদ, ফাতিহ ও সুলায়মানিয়া মসজিদগুলো যেমন দর্শনার্থী এবং ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত এটিও তেমনি থাকবে।
 
২০১৫ সালে, একজন আলেম ৮৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের জন্য আয়া সোফিয়ার ভিতরে কোরআন তেলাওয়াত করেছিলেন। পরের বছর থেকে, তুরস্কের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ পবিত্র রমজান মাস ও মুহাম্মদ সা. এর উপর কোরআন নাজিলের বছরকে কেন্দ্র করে কোরআন তেলাওয়াত ও সম্প্রচার শুরু করে।
 
উল্লেখ্য, আয়া সোফিয়া মধ্যযুগের রোম সাম্রাজ্যের সাবেক রাজধানী ইস্তাম্বুলের (বর্তমান তুরস্ক) প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি মসজিদ যেটি আদিতে গির্জা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
 
এটি স্থাপন করা হয়েছিল মূলত অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে। এই স্থাপনাটি অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে স্থাপনের পর থেকে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। এর এটিকে ক্যাথলি গির্জায় রূপান্তর করা হয় ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে, যা ১২৬১ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। তারপর এটি পুনরায় অর্থোডক্স গির্জায় রূপান্তর করা হয়, যার মেয়াদকাল ১২৬১-১৪৫৩ সাল পর্যন্ত। কিন্তু এর পর মানে পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইস্তাম্বুল মুসলিম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
ফলে এই স্থাপনাটিকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়। যার নতুন নামকরণ হয় "ইম্পিরিয়াল মসজিদ", যা প্রায় ৫০০ বছর স্থায়ী হয়।
 
এরপর এই স্থাপনাটি ১৯৩৫ সালে আধুনিক তুরস্কের স্থপতি ও স্বাধীন তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক যাদুঘরে রূপান্তর করেছিলেন।
 
২০১৮ সালে এরদোগান কোরআন তিলাওয়াত করে সুলতান দ্বিতীয় মুহামেদ সহ আয়া সোফিয়ার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা সকলের রুহের মাগফেরাতে কামনা করে মোনাজাত করেছিলেন। 
 
সূত্র, ডেইলি সাবাহ ও হুররিয়্যাত ডেইলি নিউজ
 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (16)
মোহাম্মদ সোহেল ১১ জুলাই, ২০২০, ১১:৩৭ এএম says : 2
আলহামদুলিল্লাহ ত্রটা শুখবর মুসলিম উম্মাহ জন্য
Total Reply(0)
আবু আব্দুল্লাহ ১১ জুলাই, ২০২০, ১১:৪১ এএম says : 2
AL HAMDULILLAH GOOD NEWS
Total Reply(0)
মোঃ আনোয়ার আলী ১১ জুলাই, ২০২০, ১২:০৭ পিএম says : 2
আলহামদুলিল্লাহ
Total Reply(0)
Mizanur Rahman ১১ জুলাই, ২০২০, ১২:২১ পিএম says : 2
Valo laglo khobor ta dekhe
Total Reply(0)
Abdullah al Masum ১১ জুলাই, ২০২০, ১:০৬ পিএম says : 2
muslim ummah jindabad....turki jindabad***
Total Reply(0)
Zahir Rahan ১১ জুলাই, ২০২০, ১:২৩ পিএম says : 2
আলহামদুলিল্লাহ ত্রটা শুখবর মুসলিম উম্মাহ জন্য
Total Reply(0)
ম নাছিরউদ্দীন শাহ ১১ জুলাই, ২০২০, ২:১১ পিএম says : 3
ইসলামের পক্ষে কাজ করতে হলে। ঈমান আকিদা মজবুত করতে হবে। তুরস্কের রাষ্ট্রপতি বিশ্বের মুসলমানদের এই বিশ্বাসের স্থান শক্তিশালী করছে। ক্ষন স্থায়ী ক্ষুদ্র জীবনের কিসের বাহাদুরি কিসের অহংকার মৃত্যুর পর চিরস্থায়ী জান্নাত নিবেন। না ভয়ংকর জাহান্নাম নিবেন আপনাকে ঠিক করতে হবে। সামান্য ক্ষুদ্র নমুনা করোনা মরলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ পরিবারের কেও নাই। আজকে সমাজকাঠামোয় প্রভাবশালী অর্থশালী প্রশাসনের সব্বোউচ্চ ব‍্যাক্তি এবং জাতীয় ন‍েতৃবৃন্দ গভীর ভাবে চিন্তা করুন। মৃত্যুর জন্যেই আপনার ঘরের দুয়ারের কড়া নাড়ছে। আল্লাহ্ যাকেই হেফাজতের মাধ্যমে রাখবেন তিনি নিরাপদে থাকবেন। একজন পকৃত মুসলমানদের মত চলার আল্লাহর সাহায্য চান। নিশ্চিতরূপে আল্লাহ্ সাহায্য করবেন। আমিন।
Total Reply(0)
mostafizur rahman ১১ জুলাই, ২০২০, ৫:৩৬ পিএম says : 1
It is good and great news for the Muslim world.
Total Reply(0)
RIAJUL ISLAM ১১ জুলাই, ২০২০, ৫:৪১ পিএম says : 1
আলহামদুল্লিাহ্, আল্লাহ্ সবাইকে নেদ হায়াত ও হেদায়েত দান করুক। আল্লাহ্ সব মুসলমানকে মাফ করে দিও। আমীন
Total Reply(0)
আ,ফ,ম, মহিউদ্দিন খান ১১ জুলাই, ২০২০, ৫:৫৩ পিএম says : 1
আলহামদুলিল্লাহ চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। হে আল্লাহ আয়া সোফিয়ার ন্যায় পৃথিবীর সকল মসজিদ গুলো তোমার ইবাদতে্র জন্য খোলে দাও। নিঃসন্দেহে এটা ইসলামের সুস্পষ্ট বিজয়। " সত্য সমাগত মিথ্যা বিতারিত'' হে আসমান জমিনের মালিক! পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এরদোয়ানের মত মর্দে মুমিন তৈরি করে দাও। তার হায়াত, হিম্মত বাড়িয়ে দাও।
Total Reply(0)
jack ali ১১ জুলাই, ২০২০, ৬:২৫ পিএম says : 1
Russian enemy of Allah they have turned thousand of Masjid into Alcohol drinking place and turned into Horse Stable.. They Killed nearly 50 millions muslim and also they burned all the Qur'an.. Russian government barred muslim to pray or fast, they are not allowed to keep beard also women are not allow to wear Hijab.. For the last so many years they are killing muslims/raping in Chechnya/Dagestan. The are killing muslim in Syria. They used newly developed nearly 276 type of weapon in Syrian Muslim and also they have destroy millions of House/hospital/schools/medical college/universities/shopping centre/Bazar.. you name it. May Allah destroy russian Bastard. Ameen
Total Reply(1)
Sunny ১৩ জুলাই, ২০২০, ১১:০৯ এএম says : 0
Pora lekha koren. Tarpor bujben ashol shoytan ke.
Mamun Abdullah ১১ জুলাই, ২০২০, ৬:৩৪ পিএম says : 1
মুসলমানদের বিজয়অর্জন
Total Reply(0)
Mamun Abdullah ১১ জুলাই, ২০২০, ৬:৩৫ পিএম says : 1
মুসলমানদের বিজয়অর্জন
Total Reply(0)
আ,ফ,ম, মহিউদ্দিন খান ১১ জুলাই, ২০২০, ৭:১৩ পিএম says : 1
আলহামদুলিল্লাহ চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। হে আল্লাহ,আয়া সোফিয়ার ন্যায় পৃথিবীর সকল মসজিদ গুলো তোমার ইবাদতে্র জন্য খোলে দাও। নিঃসন্দেহে এটা ইসলামের সুস্পষ্ট বিজয়। " সত্য সমাগত মিথ্যা বিতাড়িত" হে আসমান জমিনের মালিক! পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এরদোয়ানের মত মর্দে মুমিন তৈরি করে দাও। তার হায়াত, হিম্মত বাড়িয়ে দাও।
Total Reply(0)
আ,ফ,ম, মহিউদ্দিন খান ১১ জুলাই, ২০২০, ৭:১৩ পিএম says : 1
আলহামদুলিল্লাহ চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। হে আল্লাহ,আয়া সোফিয়ার ন্যায় পৃথিবীর সকল মসজিদ গুলো তোমার ইবাদতে্র জন্য খোলে দাও। নিঃসন্দেহে এটা ইসলামের সুস্পষ্ট বিজয়। " সত্য সমাগত মিথ্যা বিতাড়িত" হে আসমান জমিনের মালিক! পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এরদোয়ানের মত মর্দে মুমিন তৈরি করে দাও। তার হায়াত, হিম্মত বাড়িয়ে দাও।
Total Reply(0)
Nisarul Islam ১৩ জুলাই, ২০২০, ১১:৫২ এএম says : 0
010 একটি বিষয় কেউই উল্লেখ করছেননা, সুলতান মেহমেত তৎকালীন কনস্টান্টিনোপল দখল করার পর এই গীর্জাটি ব্যক্তিগতভাবে কিনে নেন এবং এই কেনা-বেচার দলিল আজও তুর্কীতে সংরক্ষিত আছে । পরবর্তীতে সুলতান মেহমেত এটি মসজিদে রুপান্তরিত করে ওয়াকফ করে দেন । এটি আগে আমার জানা ছিলোনা বিধায় আমিও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছি । যেহেতু আমরা মশজিদ বিক্রি করিনা, তাই আমরা অধিকাংশই জানিনা যে, গীর্জা মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে এবং এর কেনাবেচাও চলে । ইনকিলাবের কাছে অনুরোধ এই বিষয়গুলো তুলে ধরুন, বহু মানুষ আছে যারা আমার মতো অজ্ঞানতাবশত: এর বিরোধিতা করছে । আর বিধর্মী ও তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্কদেরতো ইসলামের নাম শুনলেই এলার্জি দেখা দেয় ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন