মো. এনামুল হক খান
আধুনিক যুগে নগরীতে উন্নত ডাম্পিং স্টেশন অপরিহার্য। পরিবেশ ও আবহাওয়া বিশুদ্ধ রাখতে এর প্রয়োজনীয়তা অনেক। এর অভাবে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে। ডাম্পিং স্টেশনে দূষিত বর্জ্য নিঃশেষ কাজে বিশেষজ্ঞ কেমিস্টের তদারকিসহ থাকবে কর্মী বাহিনী। যা বর্জ্য ডেস্ট্রয় প্রকল্প নামে অভিহিত হবে। বর্জ্য ডেস্ট্রয় কাজে অবহেলা বা পিছিয়ে থাকায় সুযোগ নেই। উন্নত নগরী গড়তে হলে ডাম্পিং স্টেশন উন্নত হওয়া চাই। ময়লা পরিবহন কাজে থাকবে নির্ধারিত যানবাহন। তাতে থাকবে সুরক্ষিত ব্যবস্থা। যাতে ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় পড়ে না থাকে সে ব্যবস্থা। বর্জ্য সংগ্রহকারীরা দ্রুততার সঙ্গে ডাম্পিং স্টেশনে বর্জ্য ফেলবে এটা প্রথম কাজ। তারপর ডাম্পিং স্টেশনে বর্জ্য ধ্বংস কাজে নিয়োজিত কর্মীরা তাদের নির্ধারিত কাজ শুরু করবে। এ কাজ চলবে অব্যাহত ভাবে। এভাবেই নগরী পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্য সম্মত রাখতে হবে। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা প্রতি রাতে নগর থেকে যে পরিমাণ বর্জ্য সংগ্রহ করবে তা যত্রতত্র ফেলা সমীচীন নয়। নগর থেকে কিছুটা দূরে পূর্ব-উত্তর অথবা পশ্চিম-উত্তর অংশে যাতায়াতের সুবিধাজনক স্থানে উন্নত ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ যুক্তিযুক্ত। এ ডাম্পিং স্টেশনে ময়লা-আবর্জনা বা বর্জ্য ফেলা হবে অন্যতম প্রধান কাজ। যদি এ বর্জ্য নগরে স্তূপিকৃত পড়ে থাকে তা পচে দুর্গন্ধ ছড়াবে, রোগজীবাণুর বিস্তার ঘটবে, শিশু ও পথচারিরা আক্রান্ত হবে, স্বাস্থ্য হানিকর পরিবেশ সৃষ্টি হবে। আমরা প্রায় সময় ভবনের ছাদে মরা মুরগী, ইঁদুর পড়ে থাকতে দেখি। এগুলো ডাস্টবিন থেকে নেয়া কাক, চিলের-কাজ। তাই বর্জ্য ডাস্টবিন থেকে যত দ্রুত ডাম্পিং স্টেশনে নেয়া যায় ততই মঙ্গল। সেখানেই বর্জ্য পরিশোধন এবং নিঃশেষ করার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে, তা করতে হবে আধুনিক পদ্ধতিতে। শুধু আগুনে পোড়ানোর মত মান্ধাতামলের পদ্ধতিতে নয়। এতে ধোঁয়ার কারণে পরিবেশ দূষণ হয়, নিয়োজিত কর্মীদের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমরা জানি বাতাসে মিশ্রিত কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণসহ কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ায়। শ্বাস কষ্ট, হার্টের সমস্যা, সর্দি-কাশিতে মানুষ আক্রান্ত হয়। তাই ডাম্পিং স্টেশন গড়তে হবে উন্নত পদ্ধতিতে।
নগরী পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে গড়তে হবে উঁচু চিমনী দেয়া ডাম্পিং স্টেশন। আর তা থাকবে সীমানা প্রাচীর বেষ্টিত সুরক্ষিত জায়গায়। ভিতরের বর্জ্য এদিক সেদিক নেয়া, স্তূপিকৃত করার কাজ চেইন ড্রেজারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে, কোদাল-টুকরির মাধ্যমে নয়। চিমনীর অংশে সুরক্ষিত স্থানে থাকবে পোড়ানোর ব্যবস্থা, এতে ধোঁয়া অনেক উপরে চলে যাবে। তারপর দরকার ব্লিচিং পাউডার ও জীবাণু ধবংসে অন্যান্য ওষুধ মেশিনের মাধ্যমে স্প্রে-করে সতর্কতার সাথে ছিটিয়ে দেয়া। যারা এ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে তাদের স্বাস্থ্য সচেতন করতে প্রশিক্ষণ দরকার। তাদের জন্য আলাদা পোশাক, নাকে-মুখে মাস্ক ও হাত-পায়ে প্লাস্টিকের মৌজা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা চাই। ডাম্পিং স্টেশনে টোকাইদের সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। তাছাড়া গাবদীপশু-ছাগল-ভেড়ার অবাধ বিচরণ অবশই বন্ধ রাখতে হবে।
আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি নগরীর বর্জ্য দিয়ে রাস্তার পাশের ডোবা বা নীচু জায়গা ভরাট করা হয়। সেটা সঠিক সিদ্ধান্ত বা দায়িত্বশীল লোকের কাজ নয়। কারণ বর্জ্য পচনশীল জিনিস, এতে পোকামাকড় জন্মে, পরিবেশ দূষণ করে। জ্ঞাতসারে বা লোকচক্ষুর অন্তরালে গোপনে নগরীর পাশে কোন ডোবায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। এ বিষয়গুলোর প্রতি সর্তক দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। নগরীর বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত নির্ধারিত ডাস্টবিনে নির্ধারিত বর্জ্য ফেলতে জনসচেতনতা দরকার। নির্ধারিত ডাস্টবিনে ময়লা ফেলতে পত্র-পত্রিকা, প্রচার মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করতে পারি। আমরা অনেক স্থানে ডাস্টবিনের চারিদিকে ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখি। এতে পোকামাকর সৃষ্টির পাশাপাশি কুকুর-বিড়াল, কাকপক্ষির মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ ঘটে। বর্জ্যরে গুরুত্ব অনুযায়ী রং দ্বারা চিহ্নিত করা থাকবে কয়েক রং এর ডাস্টবিন। অর্থাৎ বাসাবাড়ির তরকারির খোসা, কাগজ, ছেড়া কাপড়, হাট-বাজারের আবর্জনা থাকবে এক ডাস্টবিনে। অন্য রং এর ডাস্টবিনে থাকবে প্লাস্টিকের পট, বোতল, পলিথিন জাতীয় সামগ্রী। এ জাতীয় বর্জ্য সহজে পচে না, ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে জীবাণু মুক্ত করে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রিসাইক্লিং এর আওতায় আনা যায়। অন্য রং এর ডাস্টবিনে থাকবে মেরামত কাজ থেকে প্রাপ্ত দ্রব্যাদি যেমন : অস্তর ভাঙ্গা, ইট-পাথর, গাছের ডাল, ভাঙ্গা-দরজা, জানালা, ভাঙ্গা টাইলস জাতীয় দ্রব্য। তাছাড়া আরো এক প্রকারের বিপদজনক বর্জ্য হল মেডিকেল বর্জ্য যা হাসপাতাল থেকে সরাসরি কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে ডাম্পিং স্টেশনে নিতে হবে। এগুলোতে থাকে রোগ-জীবাণু, গজ বেন্ডেজ, সিরিঞ্জ এবং ধারালো দ্রব্য। বিপদজনক বর্জ্যরে মধ্যে আরো এক ধরনের বর্জ্য হল কলকারখানার তরল বর্জ্য, কেমিক্যাল বর্জ্য যা ডাম্পিং স্টেশনে নেয়া যায় না, তা ফেলতে হবে গর্তে। স্যুয়ারেজ বর্জ্য ফেলতে হবে স্পেটিকট্যাংকে, ড্রেনের বর্জ্য পরিশোধনের জন্য লেগুনায়। এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত পরিচ্ছন্নকর্মীদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। তারা সুস্থ থাকলে নগর পরিচ্ছন্ন থাকবে। রোগ-জীবাণুুমুক্ত থাকবে। আমাদের সন্তানরা সুস্থ সবলভাবে বেড়ে উঠবে। পরিচ্ছন্নকর্মীরা নগরী ঝাড়– দেয়া, ডাস্টবিন থেকে ময়লা সংগ্রহ করার কাজ গভীর রাতে শুরু করে, তাদের প্রতি রয়েছে রাতেই শেষ করার নির্দেশ। তাদের ক্লান্তির শেষ নেই, এরাই আমদের সেপটিকট্যাংক, সোকওয়েল পরিষ্কার করে। তাদের প্রতি সকলের মমত্ববোধ থাকা দরকার। তাদের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয়ে কর্মে নিয়োজিত হয়। রাতে কাজ করার জন্য তাদের নিরাপত্তা বিষয়টির প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
উন্নত ডাম্পিং স্টেশনের ময়লা-আবর্জনা সমেত বর্জ্য দিয়ে জৈব সার উৎপাদন করা যায়। ভারী দ্রব্যাদি আলাদা করে পচনশীল দ্রব্যাদী দিয়ে তৈরি হয় জৈব সার। তাই ডাম্পিং স্টেশনকে গড়তে হবে জৈব সার উৎপাদনের অন্যতম প্রকল্প হিসাবে। এ প্রকল্প থেকে উৎপাদিত জৈব সার-সারা দেশে বিপণনের ব্যবস্থা করতে হবে। যা ফসলের জন্য খুবই উপকারী। এ প্রকল্পের মাধ্যমে অনেকে ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে, আবার অনেকের হবে চাকরির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।
লেখক : প্রকৌশলী, বিশিষ্ট সংগঠক, কলাম লেখক ও দক্ষিণ মুরাদনগর কল্যাণ সমিতি, ঢাকা এর সাধারণ সম্পাদক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন