শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

প্রণোদনার নামে মিথ্যাচার করছে সরকার: আমীর খসরু

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২০, ৬:৫৪ পিএম

করোনাকালে বিভিন্ন খাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনাকে ঋণনির্ভর আখ্যা দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এখন দায়সারা রাজনীতির দিন শেষ। কারণ নতুন প্রজন্ম প্রতারণার রাজনীতি চায় না। বর্তমান সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সেটা সম্পূর্ণ ব্যাংকের ঋণের ওপর নির্ভরশীল। আসলে সরকার প্রণোদনার নামে জনগণের চোখে ধুলা ছিটিয়ে মিথ্যাচার করছে। আজকে কৃষক আরো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের ঋণ বাড়ছে। আস্তে আস্তে তাদের পূঁজি শেষ হচ্ছে। তাদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) উদ্যোগে মহামারী করোনাভাইরাসের ভয়াবহ দুর্যোগে ‘করোনা মহামারী: বাংলাদেশে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জেডআরএফ’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষকদলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু, কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশের (এ্যাব) সাবেক মহাসচিব আনোয়ারুন্নবী মজুমদার বাবলা প্রমুখ। বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থায়ী সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন বিএনপির শিক্ষা সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল, কৃষিবিদ অধ্যাপক ড. আব্দুল করিম প্রমুখ। কৃষি, প্রাণীসম্পদ, মৎস্য সম্পদের উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ। এছাড়া দেশের তিনজন খামারীসহ বিদেশ থেকেও বিভিন্ন অতিথি তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে দেশের নতুন ও শিক্ষিত প্রজন্ম পরিবর্তন চায়। তাদের প্রত্যাশা পূরণে আমাদেরকে সে পথেই রাজনীতি করতে হবে। যারা রাজনৈতিকভাবে বেনিফিসিয়ারি তাদের কথাগুলোকে আমলে নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। আজকে রাজনীতিতে শিক্ষিত গোষ্ঠী কমছে। সেটাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। নতুন প্রজন্ম কিন্তু আপডেট। তাদের চাওয়াগুলোকেও প্রাধান্য দিতে হবে। না হলে এগোনো যাবে না। রাজনৈতিক নীতি বা উদ্দেশ্যটা তাদের কাছে পরিষ্কার করতে হবে। শুধু বড় বড় বক্তব্য দিয়ে ছন্দময় কথা বললে হবে না। এখন সবাই পরিবর্তন চায়।

তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী জীবন বদলাবে। অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি ও পেশার পরিবর্তন ঘটবে। দেশপ্রেমিকের সংজ্ঞাও বদলাবে। সুতরাং যারা করোনা পরিস্থিতিতে কাজ করবে তারাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক। ইতোমধ্যে দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন শুরু হয়েছে। বিএনপির রাজনীতিতেও পরিবর্তন শুরু হয়েছে। বিএনপির রাজনৈতিক কাঠামোতে আরো পরিবর্তন আনতে হবে। সবার সহযোগীতায় বিএনপিতে আরো বড় পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া জেডআরএফের এ ধরনের ভার্চুয়াল কর্মকা-ের মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এটাই আন্দোলন ও কর্মসূচির অংশ বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আওয়ামী লীগ কর্তৃত্ববাদী শাসনে বিশ^াসী। অন্যদিকে বিএনপি গণতন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ^াসী। দুই দলের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। শহীদ জিয়া কাদামাটির মধ্যে বসে কৃষকের সাথে কথা বলেছেন। তাদের সমস্যা শুনে তা সুরাহা করার চেষ্টা করেছেন। আজকে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতেও আমাদেরকে মাঠে ফিরে যেতে হবে। এ ছাড়া তো বাঁচার কোনো পথ নেই। কৃষির উৎপাদন ও উন্নয়নে শহীদ জিয়ার অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের এমন কোনো খাত নেই যেখানে শহীদ জিয়ার উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। কিন্তু কৃষি নিয়ে আজকে কেউ ভাবছেনা। যা ভাবার দরকার ছিল। তবুও আমাদেরকে কিছু করতে হবে। শহীদ জিয়া ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনুসরণ করে মাঠে গিয়ে ভুমিকা রাখতে হবে। যেমনটি বেগম জিয়া তার শাসনামলে কৃষিঋণ ৫ হাজার টাকা মওকুফ করে সারের দাম কমিয়েছিলেন। এখন তো রয়েছেন আমাদের নেতা তারেক রহমান।

সভার শুরুতেই জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন করোনা ভাইরাসের শুরু থেকেই সজাগ রয়েছে। ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তারেক রহমান আমাদেরকে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণের নির্দেশ দিয়েছেন। পরে আমরা লিফলেট বিতরণ সহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে ভেঙ্গে পড়েছে সেটা করোনা ভাইরাসের কারণে প্রমাণিত হলো। এখন বলা হচ্ছে বিশ^ খাদ্য সংকটে পড়বে। যেটা বিশ^ খাদ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইঙ্গিত দিয়েছে। এমতাবস্থায় কৃষির ওপর আমাদেরকে ব্যাপক গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান যেভাবে কৃষিখাতকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। বর্তমানে করোনা মহামারীর কারণে খাদ্য ও শস্যপণ্য উৎপাদন ও খাদ্যের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিষয়। এ জন্য আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার।

অধ্যাপক ড. আব্দুল করিম প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন, বাংলাদেশের কৃষিখাত সমৃদ্ধ হয়েছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। আজকে করোনা পরিস্থিতির কারণে গোটা বিশে^ স্থবিরতা বিরাজ করছে। কমবেশি সব সেক্টরই বিপর্যস্ত। এমতাবস্থায় আমাদেরকে কৃষি খাতের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। কেননা এমন মহামারীতে কৃষিই একমাত্র চালিকা শক্তি। এজন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। কৃষককে ফসল ও শস্যপণ্য উৎপাদনে বিভিন্ন প্রণোদনা দিতে হবে। কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে এবং পণ্যের বাজারজাত করতে তরুণ সমাজকে কাজে লাগাতে হবে। বিশেষ করে অনলাইন শপিংকে গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষি পণ্য বিদেশে রফতানির জন্য ‘এগ্রি ডিপ্লোম্যাসি’ বা কৃষি কূটনীতি বাড়াতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য সহ অন্যান্য দেশ থেকে আজকে আমাদের শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এজন্য সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, কৃষককে পণ্য বিক্রির জন্য যাতে চিন্তা করতে না হয় সেজন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ভিয়েতনাম বা কম্বোডিয়ার বাজার ব্যবস্থাপনা থেকে শিক্ষা নেয়া যেতে পারে। সেইসাথে ছাদবাগান ও হাইড্রোপনিক চাষাবাদের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন