শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে ইসলাম সমর্থন করে না

প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম

বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ। শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। সকল ধর্মের লোকই মিলে মিশে এখানে বসবাস করে আসছে। ধর্মীয়-বিরোধ কিংবা দাঙ্গা এখানে নেই যা আমাদের প্রতিবেশী ভারতে হয়ে আসছে। ফলে এ ভূখ-ের শান্তি-স্থিতিশীলতা অনেকের জন্যই চক্ষু-শূলের কারণ হয়ে উঠেছে।
এবার আমরা এমন এক সময় ঈদ উদযাপন করেছি যখন গুলশানের ট্রাজেডিতে গোটা দেশের মানুষ স্তম্ভিত, হতবাক আর শোকাহত। শোক আর আতঙ্কের মধ্যে দিয়েই এবার সবচেয়ে বড় আনন্দ ঈদুল ফিতর পালন করেছে দেশের জনগণ। সারা বিশ্বের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশর দিকে। বিশ্ব মিডিয়ায় খবরের হেডলাইন- রক্তাক্ত শোকাহত বাংলাদেশ। শোলাকিয়ায় হামলা সেই আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে কারো মনেই এখন স্বস্তি নেই। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের এক অজানা আতঙ্ক আর শঙ্কা তাড়া করে ফিরছে। তবুও বন্ধ হচ্ছে না ব্লেম গেইমের রাজনীতি। অযাচিত শর্তের ডামাঢোলে দেখা যাচ্ছে না জাতীয় ঐক্যের কোন সম্ভাবনা।
এ দেশের অধিকাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় মনের ভাবপ্রকাশ করে। বিশ্বের মধ্যে উদীয়মান অযুত সম্ভাবনার দেশ-বাংলাদেশ। মানব সম্পদ, খনিজ সম্পদ ও ভৌগলিক দিক থেকে পরাশক্তির নজরকাড়া জায়গায় এদেশের অবস্থান। তাই আমাদের সকল অর্জন, সম্পদ আর সীমানার প্রতি অনেক দেশেরই এখন শ্যোনদৃষ্টি। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করা আমাদের মানচিত্র। আধিপত্যবাদ ও সা¤্রাজ্যবাদের নখরে রক্তাক্ত আর কালো মেঘে ঢাকা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকিতে। দেশের ১৬ কোটি মানুষই অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। আসলে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি!
আমাদের পোশাক-শিল্পে ও ক্রিকেটের ঈর্ষান্বিত অগ্রগতি অনেককে রীতিমত চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে এসে বক্তব্যের শুরুতে তার ঈর্ষার কথা বলতে ভুলেননি। মূলত গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, দমন-নিপীড়ন ও নানাবিদ রাজনৈতিক সমীকরণের যোগফল হচ্ছে আজকের গুলশান হত্যাকা-। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিই সমস্যার আসল কারণ। কিন্তু এ দেশের গণতন্ত্র হরণের জন্য ভারত কি তার দায় এড়াতে পারবে?
বিশিষ্ট এক কলামিষ্ট লিখেছেন- মুশকিল হচ্ছে দিল্লী মোটেও সমস্যার সমাধান নয়, সমস্যার কারণ। দ্বিতীয়ত সীমান্তে হত্যা, পানি না দেয়া, জবরদস্তি করিডোর আদায় করে নেয়া এবং শেখ হাসিনাকে নিঃশর্তে সমর্থন করে যাওয়া ইত্যাদি নানান কারণে বাংলাদেশে একটি প্রবল দিল্লী বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে, দিল্লীর পক্ষে যার মোকাবেলা এখন অসম্ভবই বলতে হবে। এর পাশাপাশি প্রবল হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উত্থান ও মোদীর ক্ষমতারোহণ বাংলাদেশের জনগণের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। শেখ হাসিনার দমন-পীড়ন দিয়ে জনগণের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার নিরসন এখন একদমই অসম্ভব। হলি আর্টিজানের ঘটনা বিপুল সংখ্যক তরুণকে রাজনৈতিক পথ ও পন্থায় উজ্জীবিত করবে তা মোকাবিলার ক্ষমতা ও বিচক্ষণতা দিল্লীর রয়েছে এটা বিশ্বাস করা এখন কঠিন। দিল্লীর বাংলাদেশ নীতির কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক প্রান্তে এসে ঠেকেছে। এর মূল্য দিল্লীকেই আজ হোক কি কাল হোক, দিতে হবে।’ (০৮/০৭/১৬-নয়া দিগন্ত)
(দুই)
আজকের পৃথিবীতে মনে হয় সন্ত্রাস যত না সমস্যা তার থেকে বেশি সমস্যা সন্ত্রাসের সংজ্ঞা নিয়ে।
পৃথিবীতে কমিউনিজমের ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিসমাপ্তির পর পশ্চিমা মিডিয়া, গবেষক, চিন্তাবিদ ও নীতিনির্ধারক সংস্থাগুলোর মুখে-মুখে সর্বদা একই আলোচনা এরপর পশ্চিমাদের সামনে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ হলো ইসলাম। পশ্চিমাদের বুদ্ধিগুরু হিসেবে খ্যাত স্যামুয়েল হান্টিংটনের ‘দ্য ক্লাশ অব সিভিলাইজেশনস্’ ‘সভ্যতার দ্বন্দ্ব’ তত্ত্বটি মৌলিকভাবে বার্নার্ড লুইস (Bernerd Lewis)--এর আবিষ্কার নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। বিশেষ করে আমেরিকার এগারই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর ইসলামে জিহাদের অর্থকে যুগপৎভাবে ধর্মযুদ্ধ এবং সন্ত্রাসবাদ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। কোনো কোনো মুসলমান এ ষড়যন্ত্রটি না বুঝেই তাদের ক্রীড়নক হচ্ছে। পশ্চিমারা তাদের প্রয়োজনেই বিভিন্ন অখ্যাত ব্যক্তিকে বিখ্যাত বানায় আর নিজেদের স্বার্থে তৈরি করে ইসলামের তথাকথিত বিভিন্ন সংঘঠন ও সংস্থা। সর্বত্র এক শ্রেণির ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে ভীতি ছড়ানোর কাজটি অত্যন্ত কৌশলের সাথে করে তারা। আজ কিছু নামধারী অজ্ঞ মুসলমানকে অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে তথাকথিত জিহাদী আবেগকে পুঁজি করে ইসলামের নাম ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে এটা এখন কারোই অজানা নয়। বাংলাদেশে গুলশান হামলা সেই পরিকল্পনারই অংশ।
পশ্চিমারা কেউ কেউ রাগ-ঢাক গুটিয়ে একথা বলেই ফেলেন। এই পৃথিবীর যুদ্ধ, রক্তপাত, তলোয়ারের ঝনঝনানির জন্য মুহাম্ম্দ (সা.) নিজেই দায়ী (নাউযুবিল্লাহ)। বর্তমানে আমরা এমন একটা সময় অতিক্রম করছি যে, যখন কোন ব্যক্তি একজন মুসলমান সম্পর্কে শোনে বা জানে, তার মনে একটা চিন্তা দানা বাঁধে যে, প্রকৃতপক্ষে কি একজন মুসলমান। নাকি একজন জঙ্গি, সন্ত্রাসী। সেই একই ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টির লক্ষ্যেই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারীতে এই লোমহর্ষক অমানবিক ও কাপুরুষিত হত্যাযজ্ঞ। এটি কোনভাবেই ইসলাম সমর্থন তো করেই না বরং ইসলামের বদনাম ছড়ানোর জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোন শক্তিশালী মহলের ইন্ধনেই অনুষ্ঠিত হয়েছে এতে সন্দেহ নেই। এমন হত্যাকা-ের নিন্দা জানিয়েছেন দেশের সকল রাজনৈতিক দল, ইসলামিক দল, আলেম-ওলামাসহ সকলেই। অথচ সরকার দেশের এই ক্লান্তিলগ্নেও জাতীয় ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ, বিভ্রান্তি ও বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, যা দেশের জনগণ কোনভাবেই প্রত্যাশা করে না। ইসলাম আক্ষরিক অর্থে আল্লাহর নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পণকে বুঝায়, এর অর্থ হলো শান্তি। ইসলাম আল্লাহকে ভয় করতে বলে। তাহলে কিভাবে ইসলাম একজন অপরজনকে ভয় দেখাতে বলবে? আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণকারী কখনো অন্যের নিকট কাউকে আত্মসমর্পণ করতে বলে না। ভীতি, প্রদর্শন ও প্রতারণা ইসলামী চেতনার পরিপন্থী। এটি ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই হয়।
ইসলামের অন্যতম সামাজিক মূল্যবোধ ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানো। যার অর্থ ‘আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’। ইসলাম প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ শান্তি, স্থিতি, স্নেহ-মমতা ও দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ভালোবাসা, দয়া ও মমতা বিশ্বাসীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
ইসলাম তরবারি অথবা শক্তি দিয়ে ছড়ানো হয়নি। এ ভুল ধারণাটার উত্তর বেশ ভালভাবেই দিয়েছেন বিখ্যাত ঐতিহাসিক ডিলেসি ওলেরি। তিনি তাঁর ‘ইসলাম এ্যাট দ্যা ক্রসেড’ বইতে লিখেছেন- ইতিহাসে এটা পরিষ্কার যে, মুসলমানদের তরবারি হাতে নিয়ে ইসলাম ছড়ানো আর বিভিন্ন দেশ জয় করার আজগুবি গল্পটা একটা অসাধারণ মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই না, যে মিথ্যাটা বারবার বলা হয়েছে। আর আমরা জানি যে (মুসলমানরা) আমরা যেখানে ৮০০ বছর রাজত্ব করেছি, সেখানে তরবারি দিয়ে কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করিনি। পরবর্তীতে ক্রসেডাররা এসে মুসলমানদের সরিয়ে দিলো, সে সময় একজন মুসলমানও প্রকাশ্যে আজান দিতে পারত না।
আমরা (মুসলমানরা) গত ১৪০০ বছর ধরে আরব বিশ্বে রাজত্ব করছি। কিছু সময় ব্রিটিশরা রাজত্ব করেছে। কিছু সময় ফ্রেঞ্চুরাও। এ সময়টা বাদে পুরো ১৪০০ বছর ধরে মুসলমানরা আরব বিশ্বে রাজত্ব করছে। এ আরব বিশ্বের প্রায় দেড় কোটি লোক হল কপটিক খ্রিস্টান। কপটিক খ্রিস্টান মানে যারা বংশ পরম্পরায় খ্রিস্টান। আরবের এ দেড় কোটি কপটিক খ্রিস্টান সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, ইসলাম তরবারির মুখে ছড়ায়নি। মুসলমানরা প্রায় ১০০০ বছর ধরে ভারত শাসন করেছে, যদি তারা চাইতো তাহলে প্রত্যেক ভারতীয়কে তরবারির মুখে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করতে পারত। আজকে এক হাজার বছর পরও ভারতে ৮০% লোক মুসলমান না। এ ৮০% অমুসলিম সাক্ষ্য দেবে যে, ইসলাম তরবারির মুখে প্রসার লাভ করেনি। আল্লাহ বলেন-‘হে নবী (সা.) আপনি তাদেরকে আপনার প্রভুর সাথে ডাকুন হিকমত এবং উত্তম উপদেশের মাধ্যমে।
প্লেইনট্রুথ ম্যাগাজিনের একটি পরিসংখ্যানমূলক খবর যেটা রিডার্স ডাইজেস্টের অ্যালম্যানক ইয়ারবুক ১৯৮৬-এর রিপ্রোডাকশন ছিল যেখানে বলা হয়েছে, ১৯৩৪ থেকে ৮৪ সালের মধ্যে গত পঞ্চাশ বছরে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা কত বেড়েছে? সে পরিসংখ্যানে এক নম্বরে ছিল ইসলাম। সেটা ছিল ২৩৫%। খ্রিস্টান ধর্ম মাত্র ৪৭%। আমি একটা প্রশ্ন করছি, ১৯৩৪ থেকে ’৮৪ সাল পর্যন্ত কোন যুদ্ধটা হয়েছে? যে কারণে অমুসলিমরা ইসলাম গ্রহণ করেছে। সুতরাং ইসলামের বিস্তৃতি-প্রসার ঘটেছে দাওয়াতী কাজ ও মানুষের হৃদয়কে জয় করার মাধ্যমে। শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নয়।
যারা ইসলামের নামে মানুষ হত্যা করছে তা ইসলামে কোনভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিচালিত আন্দোলন সমাজে যে শান্তি স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে তা ইতিহাসে বিরল। রাসূল (সা.)-এর সামরিক পদক্ষেপগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বদর থেকে মক্কা বিজয় পর্যন্ত (খায়বার বিজয়সহ) মোট পাঁচটি বড় আকারের যুদ্ধ হয়েছে। বাস্তবিক পক্ষে এই সব ক’টা যুদ্ধই ছিল আত্মরক্ষামূলক। তন্মধ্যে প্রথম তিনটি তো হয়েছেÑ শত্রুরা আগ্রাসন চালিয়ে মদিনার ওপর হানা দেয়ার কারণে। মদিনা থেকে সৈন্য নিয়ে গিয়ে নিজ উদ্যোগে রাসূল (সা.) বড়জোর দুটো অভিযানই চালিয়েছেন : একটা মক্কা বিজয়ের (হুনায়েনের যুদ্ধসহ) অভিযান অপরটা খায়বার বিজয়ের অভিযান। আর এই দুটো অভিযানেই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছিল সময়ের দিক দিয়ে দেখলে বদরের যুদ্ধ থেকে মক্কা বিজয় পর্যন্ত মোট ছয় বছরের ব্যবধান। রাসূল (সা.) তাঁর মহান শিক্ষামূলক, প্রচারমূলক, গঠনমূলক ও সংস্কারমূলক কাজে মোট ২৩ বছর সময় কাটিয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ছ’টা বছর ছিল এমন, যখন শিক্ষামূলক কাজের পাশাপাশি বিরোধীদের যুদ্ধংদেহি মনোভাব ও আচরণের মোকাবেলাও করতে হয়েছে। মনে হয়, সব ক’টা যুদ্ধে উভয় পক্ষ মিলিয়ে হাজার খানেক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা পাওয়া যাবে। যার মাধ্যমে আরবের বুকে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত পথ সুগম হয়। দশ বছর ইতিহাসে অত্যন্ত ক্ষুদ্র সময়। এত অল্প সময়ে আরবের ন্যায় মরুভূমিকে মানুষের জীবনের সঠিক কল্যাণের লক্ষ্যে একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাসকারী, চরম উচ্ছৃঙ্খল, হিংস্র ও দাঙ্গাবাজ গোত্র ও ব্যক্তিবর্গকে এর আওতাভুক্ত করা, তারপর তাদের সুমহান নৈতিক শিক্ষা দানে সাফল্য অর্জন করা এবং শুধু শিক্ষা দেয়া নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য তাদেরকে শিক্ষক ও উস্তাদে পরিণত করা সম্ভবত রাসূল (সা.)-এর নবুওয়তের সবচেয়ে বড় বাস্তব ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অলৌকিক প্রমাণ।
সুতরাং এ বিষয়টি সকল সন্দেহ ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে যে, ইসলামের বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে জাহেলিয়াতের দ্বন্দ্ব সংঘাতের নিষ্পত্তিতে যুদ্ধ বিগ্রহের যতটুকু অবদানই থাকুক না কেন, জনমতের অবদানই ছিল সর্বাধিক এবং জনমতের অঙ্গনই ছিল নিষ্পত্তির অসল অঙ্গন। মানুষের হৃদয় জয় করাই ছিল রাসূল (সা.)-এর আসল বিজয় ও আসল সাফল্য। আরবের লক্ষ লক্ষ নর-নারীকে তিনি যদি জয় করে থাকেন, তবে তাদের হৃদয়ই জয় করেছেন এবং তা করেছেন যুক্তি ও চরিত্রের অস্ত্র দিয়ে। এ বিষয়টা যে, সর্বাধিক থেকে নিত্যনতুন প্রতিবন্ধকতার মুখেও অল্প দিনের মধ্যে দশ বারো লক্ষ বর্গমাইল এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিপুলসংখ্যক আদম সন্তানকে ইসলামের অনুসারী বানানো কিভাবে সম্ভব হলো? আসল ব্যাপার হলো, দাওয়াত যদি সত্য ও সঠিক হয়, আন্দোলন যদি মানবকল্যাণের লক্ষ্যে পরিচালিত হয় এবং এর পতাকাবাহীরা যদি ত্যাগী ও নিষ্ঠাবান হন, তবে বিরোধিতা ও প্রতিরোধ বিপ্লবী কাফেলার জন্য অধিকতর সহায়ক হয়ে থাকে। প্রত্যেক বাধা এক একটা পথপ্রদর্শক হয়ে আসে।
অথচ যারা আজ শান্তির কথা বলে যুদ্ধ করছে তারা কি গোটা পৃথিবীর কোন ভূখ-ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে? প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে কমপক্ষে দেড় কোটি লোক নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯০ লাখ ছিল সামরিক এবং ৭০ লাখ বেসামরিক। ত্রিপক্ষীয় আঁতাত হারায় ৫০ লাখের বেশি সৈন্য এবং সেন্ট্রাল পাওয়ার্স ৪০ লাখের বেশি। সামরিক মৃত্যু ৮৯,৫১,৩৪৬ বেসামরিক ৬৬,৪৪,৭৩৩ মোট ১,৫৫,৯৬,০৭৯ আহত ২,২৩,৭৯,০৫৩। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে সূচনা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বলি হয় অগণিত মানুষ, তা জনগণের জন্য নিয়ে আসে অকথ্য দুঃখ-দুর্দশা আর লাঞ্ছনা। এ যুদ্ধে নিহত হয় ৫ কোটিরও বেশি মানুষ। বৈষয়িক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দাঁড়ায় প্রায় ৪ লক্ষ কোটি ডলার। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় অসংখ্য শহর আর গ্রাম, বিলুপ্ত হয়ে যায় মানবপ্রতিভার বহু মহান সৃষ্টি। ক্ষত রোগ আর অনাহারের দরুন বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে কোটি-কোটি মানুষ। তাহলে এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় কারা রক্ত পিপাসু আর কারা রক্তের মর্যাদা রক্ষা করতে চেয়েছে বর্তমান সভ্যতাকে অঙ্গুলি দিয়ে সে হিসাব কষে দিয়েছে।
আল্লাহ বলেন-‘আর হে নবী (সা.) আপনি বলুন, সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসারিত। মিথ্যার ধ্বংস অনিবার্য। ড. জোসেফ অ্যাডাম পিয়ারসন বলেছেন, ‘লোকেরা দুশ্চিন্তা করে যে, কোন একদিন পারমাণবিক বোমা আরবদের কাছে চলে যাবে। তারা বুঝতে পারে না যে, যেদিন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন, সেদিনই ইসলামের বোমা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।’
(তিন)
যুগে-যুগে ইসলাম বিরোধী শক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপবাদ, রটনার কূটকৌশলের নীতি অবলম্বন করেছিল। কালের পরিবর্তনে সা¤্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তি তাদের ধরন পাল্টিয়ে বিভিন্ন কায়দা-কানুনের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু তাদের উভয়ের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। তারা কখনও মানবিক, কখনও বুদ্ধিবৃত্তিক আবার কখনও মানবাধিকারের ধুয়া তুলে ইসলামের ওপর এই হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতেই সত্যপন্থীদের সাথে এই যুদ্ধ বা ‘নয়া ক্রুসেড’ তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই জন্য আজকে পশ্চিমাদের প্রধান টার্গেট ইসলাম ও মুসলমান। আধিপত্যবাদী শক্তি কোন দেশে প্রবেশের জন্য এমন কৌশল নিয়ে থাকে। ইসলামের প্রচার-প্রসার ও জনগণের ঐক্যেই কেবল এ ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে পারে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন