বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

ঈদুল আযহার রাতে ও দিনে আমাদের করণীয়

মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

দুনিয়াতে প্রতিটি ধর্মে আনন্দ উদযাপনের জন্য কয়েকটি দিন থাকে, রাসূল সা. এর যুগে মদিনাবাসীও বছরে দুটি নির্দিষ্ট দিনে আমোদ প্রমোদে মেতে ওঠতো, তারা বসন্ত ও হেমন্তের প্রথম রজনীতে নওরোজ এবং মিহরিজান নামে দুটি উৎসব পালন করতো। এই দুইটি উৎসবে যেই আচার অনুষ্ঠান হতো তা অনৈসলামিক। মদিনায় আসার পর হুজুর সা. যখন এটা দেখলেন, তখন তাদেরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই নির্দিষ্ট দিনে তোমাদের আনন্দ উৎসবের কারণ কি? মদিনার নবমুসলিম সাহাবাগণ বললেন, আমরা জাহেলি যুগে এই দিন দু’টিতে এভাবে আনন্দ উৎসব করতাম। যা আজ পর্যন্ত আমাদের মধ্যে প্রচলিত। তখন হুজুর সা. ইরশাদ করলেন, আল্লাহ পাক মুসলমানদের জন্য এই দুটি দিনে আনন্দ উৎসবের পরিবর্তে আরও উত্তম দুটি দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। একটি হল ঈদুল ফিতর অন্যটি ঈদুল আযহা। মুসলমান জাতির ঈদ ও উৎসব হবে ইবাদত-বন্দেগীর উৎসব, ঈমানী ও রুহানী উৎসব। অন্য জাতির সংস্কৃতি, নাচ-গান, বাদ্য-বাজনা, আনন্দ, উৎসবের মত হতে পারে না। কেননা এগুলি নফসানি ও শয়তানি উৎসব যা কোন অবস্থাতে ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে না। দ্বিতীয় হিজরিতে হুজুর সা. প্রথম ঈদের নামাজ আদায় করেন। একই হিজরিতে ঈদুল আযহা ও কুরবানি ওয়াজিব হয়। (হুজ্জাতুল্লাাহিল বালেগা)

তাবরানি শরিফে আছে, যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত্রে ইবাদতের মাধ্যমে জাগ্রত থাকবে, তার দিল ঐ দিন মৃত হবে না, যে দিন (কিয়ামতের দিন) ইসরাফিল আ. প্রথমবার শিংগায় ফুঁক দিবেন। সে সময় তার দিল আল্লাহর স্মরণে জীবিত থাকবে। তাই উভয় ঈদের রাতে ইবাদতের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া ঈমানি দায়িত্ব। তাছাড়া ঈদের দিনেও মুসলমানের কিছু করনীয় রয়েছে, প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠা। মিসওয়াক করা । গোসল করা। পবিত্র ও উত্তম কাপড় পরিধান করা। সুগন্ধি ব্যবহার করা। শরিয়ত মত সু-সজ্জিত হওয়া। ঈদগাহে এক পথ দিয়ে যাওয়া ও অন্য পথ দিয়ে আসা। ঈদগাহে তাড়াতাড়ি যাওয়া। কোন ওজর না থাকলে ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়া। ঈদগাহে যাওয়ার পথে তাকবির পড়া, ঈদুল ফিতরে নিম্মস্বরে ও ঈদুল আযহায় উচ্চস্বরে পড়া। ঈদুল ফিতরে যাওয়ার সময় বেজোড় সংখ্যক খেজুর বা মিষ্টান্ন দ্রব্য খাওয়া এবং ঈদুল আযহার পূর্বে কিছু না খেয়ে নামাজের পর কুরবানির গোস্ত দিয়ে প্রথমে আহার করা।

ঈদের নামাজে মৌখিক নিয়ত ওয়াজিব নয়। কিন্তু অন্তরে নিয়ত করা ফরয। যদি বাংলায় নিয়ত করে, তাহলে এভাবে বলতে হবে যে, আমি একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য ঈদুল ফিতরের বা ঈদুল আযহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ ছয় তাকবিরের সাথে এই ইমামের পিছনে আদায় করছি। অতঃপর আল্লাহু আকবর বলে নামাজ শুরু করবে।

ঈদের নামাজ অন্য নামাজের ন্যায় পড়তে হবে, কেবল প্রথম রাকাতে সানা পড়ার পরে তিনবার আল্লাহু আকবর বলবে এবং প্রত্যেক তাকবিরের সময় কান পর্যন্ত হাত ওঠিয়ে প্রথম দুটিতে হাত ছেড়ে দিবে এবং তৃতীয়টিতে হাত বেঁধে নিবে, অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় প্রথম রাকাত শেষ করবে। দ্বিতীয় রাকাতে কিরাত শেষে রুকুর পূর্বে তিনটি অতিরিক্ত তাকবির বলবে এবং কান পর্যন্ত হাত ওঠিয়ে ছেড়ে দিবে, অতপর চতুর্থ তাকবির বলে রুকুতে চলে যাবে এবং অন্যান্য নামাজের ন্যায় নামাজ শেষ করতে হবে। ঈদের নামাজের প্রথম রাকাতে সূরায়ে আলা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরাতুল গাশিয়াহ পড়া মুস্তাহাব।

ঈদের নামাজ শেষে ইমাম সাহেব মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে যাবেন। ঈদুল ফিতরের খুৎবায় সদকায়ে ফিতরের আহকাম সম্পর্কে বয়ান করা এবং ঈদুল আযহার খুৎবায় তাকবিরে তাশরিক ও কোরবানির আলোচনা করা মুস্তাহাব। খুৎবা পাঠ করা সুন্নত, তবে শ্রবণ করা ওয়াজিব। পারলে প্রথম খুৎবায় নয় বার ও দ্বিতীয় খুৎবার শুরুতে সাত বার তাকবির বলা মুস্তাহাব, এমনিভাবে দ্বিতীয় খুৎবা শেষে মিম্বার থেকে নামার পূর্বে চৌদ্দ বার তাকবির বলা মুস্তাহাব। ঈদের নামাজের পূর্বে ঘরে, মসজিদে বা ঈদগাহে এবং ঈদের নামাজের পর ইদগাহে ঐ দিন কোনো নফল নামাজ পড়া মাকরূহ। মহিলাগণ ও যাদের উপর ঈদের নামাজ ওয়াজিব নয়, তাদের জন্যেও ঈদের নামাজের পূর্বে নফল নামায পড়া মাকরূহ। কোন ব্যক্তির ঈদের নামাজ ছুটে গেলে তার জন্য একাকি নামায পড়া বৈধ হবে না, কেননা, ঈদের নামাজের জন্য জামাত শর্ত। কোন ওজরের কারণে ১লা শাওয়াল দ্বি প্রহরের পূর্ব পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে না পারলে দ্বিতীয় তারিখেও পড়তে পারবে, তারপর আর পড়া যাবে না। এরূপ ঈদুল আযহার নামাজও ওজরের কারণে ১০ই জিলহজ্ব পড়তে না পারলে ১১, ১২ ই জিলহজ্ব পর্যন্ত পড়তে পারবে। যদি ঈদের নামাজ বড় জামাতে হয়, তখন সেজদায়ে সাহুর কারণ পাওয়া গেলেও সেজদায়ে সাহু দেওয়া ওয়াজিব নয়। (ফতোয়ায়ে শামী) ঈদের নামাজের পর মুছাফাহা, মুয়ানাকা করা এবং এগুলোকে আবশ্যক জরুরী মনে করা বিদআত। (মেরকাত)

আল্লাহ তায়ালা সকলকে কুরান হাদিসের আলোকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন
লেখক সিনিয়র শিক্ষক- জামিয়া ইসলামিয়া বায়তুল করিম, চট্টগ্রাম

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন