শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আশা-নিরাশায় খামারিরা

উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের কোরবানির হাট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

ঈদুল আজহা দোরগোড়ায় কড়া নাড়লেও উত্তরাঞ্চলের হাটগুলোতে কোরবানি পশু কেনাবেচা এখনো জমে ওঠেনি। করোনা, বন্যা আর বানের পানিতে ভাসিয়ে আনা ভারতীয় গরুতেই স্বপ্ন ভাঙছে খামারিদের। ব্যক্তি বিনিয়োগ আর এনজিওর লোনের টাকায় প্রস্তত করা কোরবানি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় খামারিরা। কিছু কিছু জায়গায় হাটে কেনাবেচা শুরু হলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। অনলাইনে পশু কেনাবেচা খানিকটা বাড়লেও তবে তা পরিস্থিতির চাইতে অপ্রতুল। বগুড়া থেকে মহসিন রাজু, খুলনা থেকে আবু হেনা মুক্তি, লালপুর (নাটোর) থেকে মো. আশিকুর রহমান টুটুল ও সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে নজির হোসেন নজু জানিয়েছেন কোরবানি পশু হাটের কেনাবেচা ও খামাারিদের পরিস্থিতি।

রাজশাহী, রংপুর বিভাগীয় এবং বগুড়া জেলা পশু সম্পদ অধিদফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উত্তরের ১৬ জেলায় ১৬ লাখ গরু এবং মহিষ, ভেড়া, ছাগল মিলিয়ে ৫০ লাখেরও বেশি কোরবানি পশু প্রস্তত আছে। খামারি, হাট ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্তপথে চোরাই গরুর আসা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসায় শাপেবর হয়ে উঠেছিল উত্তরাঞ্চলের পশু খামারিদের জন্য। ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংস্থার প্রজেক্ট পর্যায়ে গড়ে উঠেছে ডেইরী ফার্ম ও পশু খামার। ব্যাংক, এনজিও ও সমিতিগুলোর হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এই খাতে। পদ্মা, যমুনা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদ ও নদীর চরাঞ্চলে শত শত বাথানের হাজার হাজার গরু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে খামার ও বাথান মালিকরা। শেষ পর্যন্ত কী হবে এই আশঙ্কাতেই দিন কাটছে তাদের।

খামারি সামসুল আবেদীন সবুর জানিয়েছেন, করোনা ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে দুর্গম এলাকার খামারিরা কম দামে গরু ছাগল বিক্রি করতে চাইলেও পারছে না। এবার হাটের সংখ্যাও কম। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভরা নদীতে ভাসিয়ে ভারতীয় গরু আনছে চোরাকারবারিরা। যা দেশীয় গরু বেচা-বিক্রিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে ।

রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত বেশ কয়েকজন হাট ইজারাদার জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকা, সিলেট, খুলনা ও চট্টগ্রামের ব্যাপারীরা উত্তরাঞ্চলের হাটগুলো থেকেই বিপুল সংখ্যক গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল সংগ্রহ করে থাকেন। তবে এবার ওই অঞ্চলের মহাজনদের তেমন আগ্রহ বা সাড়া পাচ্ছে না স্থানীয় পাইকাররা। তবে ব্যবসায়ী ও খামারিদের সুবিধার্থে রেল মন্ত্রণালয় এবার ট্রেনে গরু বহনের জন্য ক্যাটেল সার্ভিস চালু করেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রচারণা কম থাকায় তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অনলাইনে গরু ও অন্যান্য কোরবানীর পশু কেনাবেচা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।

খুলনায় এখনো জমে ওঠেনি অস্থায়ী পশুর হাট। পর্যাপ্ত কোরবানির পশু থাকলেও হাটে এখনও ক্রেতা কম। গতকাল খুলনায় ঐতিহ্যবাহী জোড়াগেট পশুর হাট উদ্বোধন করা হলেও বাজারে তেমন কোন গরু নেই। এছাড়া খুলনার ডুমুরিয়া, খর্নিয়া, আঠারমাইল এলাকায় গরুর বাজার জমেনি। সরেজমিনে খর্নিয়া হাটে দেখা যায়, হাটের দিন লোকজন গরু বাঁধার খুঁটি বসাচ্ছেন। হাটে অনেক গরু এসেছে কিন্তু সেই অনুযায়ী বিক্রি নেই।

অন্যদিকে, লালপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, লালপুর উপজেলার মোট ৭৭৬টি খামারে ১৫ হাজার ৫৮৩টি গরু ও ২৫ হাজার ৪১০টি ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে। গরু ব্যবসায়ীরা বলেন, গত বছর যে গরু বিক্রি হয়েছে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় এ বছর একই সাইজের গরু বিক্রয় হচ্ছে ৭৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা।
বিভিন্ন পশু হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট সাইজের একটি দেশীয় গরু ৪০-৫০ হাজার টাকা, মধ্যম সাইজের একটি গরু ৫৫-৬৫ হাজার টাকা এবং বড় সাইজের একটি গরু এক লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছাগল ছোট সাইজের ৫-৬ হাজার টাকা, মধ্যম ৭-১২ হাজার টাকা এবং বড় সাইজের ছাগল বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ হাজার টাকায়।

লালপুর উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম ক্রেতা না থাকা ও দাম কমের কথা স্বীকার করে বলেন, করোনা ও অতিবৃষ্টির কারণে ক্রেতা কম। এছাড়া বাজারেও এবার গরুর দাম কম থাকায় খামারিদের লোকসান হচ্ছে।

তবে কিছুটা ভিন্ন চিত্র সৈয়দপুরসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার কোরবানি পশুর হাটগুলোতে। ইতোমধ্যেই ক্রেতা, বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। সেই সাথে ঈদের বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে। অচিরেই কোরবানির পশুর হাটগুলো কেনাবেচায় মুখরিত হয়ে ওঠবে বলে আশা করা যাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত হাট বসলেও মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব ও ক্রেতা বিক্রেতাদের মুখে নেই মাস্ক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন