শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গুম হওয়া মানুষদের ফিরে পাওয়ার দাবি স্বজনদের

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

২০১৩ সালের ডিসেম্বরের ৪ তারিখ সন্ধ্যা ৬টার দিকে টিউশনির কথা বলে রাজধানীর নাখালপাড়ার বাসা থেকে বের হন আয়েশা আলীর তার ছেলে আবদুল কাদের মাসুম (২৪)। তিতুমীর কলেজের ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। ওইদিন রাতে ছেলে বাড়িতে না ফিরলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন বসুন্ধরা এলাকা থেকে তার ছেলের সাথে আরও তিনজনকে র‌্যাবের পোশাক পরা কয়েকজন দুটো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গেছে। তারপর সাত বছর ধরে কারও কোনো খোঁজ মেলেনি। একমাত্র ছেলের সন্ধানে মা আয়েশা সব জায়গায় ঘুরেও ছেলের সন্ধ্যান পাননি। আয়েশার মতো গুম হওয়া মানুষদের ফিরে পাওয়ার দাবি জানান স্বজনরা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুমের শিকার মানুষদের স্মরণে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস গত রোববার পালিত হয়েছে।
বাংলাদেশে যে সকল মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের ফিরিয়ে দেয়া কিংবা খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশিয় মানবাধিকার সংগঠন। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব হিউম্যান রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ , এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন ও অধিকারসহ ১২টি আন্তর্জাতিক এবং বাং লাদেশি মানবাধিকার সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে ২০০৯ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত ৫৭২ জন বিভিন্ন পেশার মানুষ নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা গুমের শিকার হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক গুম দিবসে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গুম করা ৭ নেতাকর্মীর পরিবারের সার্বিক খোঁজ-খবর ও নগদ অর্থ সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।
আবদুল কাদের মাসুমের মা আয়েশা আলী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা র‌্যাব অফিস, ডিবি পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবখানে গিয়েছি। থানায় জিডি করেছি। এখনও খোঁজ খবর করে যাচ্ছি, কিন্তু তারা কিছুই করে না। খালি বলে- হচ্ছে, হবে। আমার ছেলে কোনো অপরাধ করে থাকলে তাকে আইনের মাধ্যমে বিচার করেন। এভাবে তাকে গুম করতে তো পারেন না।
২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে নাসরিন আকতারের ছেলে ইসরাক আহমেদ কানাডা থেকে দেশে আসেন ঈদ করতে। কিন্তু যেদিন বাংলাদেশ থেকে তার কানাডায় ফিরে যাওয়ার কথা, সেদিনই তিনি নিখোঁজ হন। মা নাসরিন জাহান বলেন, ছেলে বলল মা আজ শেষ দিন বন্ধুদের সাথে বাইরে রেস্টুরেন্টে দেখা করব। রাত আটটা নাগাদ বাসায় না ফিরলে তাকে আমি ফোন করি। তার বাবাকে দিয়েও ফোন করাই। কিন্তু তার ফোন বন্ধ পাই। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাইনি আমরা।
২০১২ সালে এপ্রিলে বিএনপির নেতা এম ইলিয়াস আলীর সঙ্গে নিখোঁজ হন তার গাড়িচালক আনসার আলীও। গাড়িটি পাওয়া যায় রাজধানীর মহাখালীতে। আট বছরে ইলিয়াস আলী ফেরেননি, আনসার আলীও নন। ইলিয়াস আলীর পরিবারে আর্থিক সংকট ততটা নেই, যতটা আনসার আলীর পরিবারে রয়েছে। তার স্ত্রী মুক্তা বেগম এখন সিলেট সিটি করপোরেশনে ছোট চাকরি করেন। ১১ বছরের মেয়ে স্কুলে পড়ে। মুক্তা সাংবাদিকদের বলেন, তাকে নমিনি হিসেবে রেখে দুই হাজার টাকা করে ব্যাংকে জমাতেন আনসার। সেই টাকা এখন আর তুলতে পারছেন না। ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াস সাংবাদিকদের বলেন, তার বাবার নামে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দ হয়ে আছে। তার মা তাহসিনা রুশদীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতেন। নিজেদের বাড়ি আছে। একটা সময় কষ্টে পড়ে গেলেও এখন অবস্থা স্থিতিশীল। তারা চান তাদের বাবার যে যে জিনিস যেভাবে আছে, সেভাবেই থাক। একদিন হয়তো তিনি ফিরে আসবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন