ঢাকায় বায়ু দূষণ আবার বাড়ছে। গতকাল এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকার বায়ুমান ১৪০পিএম। যার অর্থ হলো অস্বাস্থ্যকর। চলতি বছরের শুরু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে ঢাকা প্রায়ই বিশ্বের মধ্যে ১ নম্বর স্থান দখল করতো। বায়ু দূষণের মাত্রা ৩০০ পিএম এর ঘরে পৌঁছে গিয়ে ছিল। তখন ঢাকা বসবাসের অযোগ্য শহর হয়ে উঠেছিল।
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ থেকে ঢাকার বায়ু দূষণ কমতে শুরু করেছিল। কল-কারখানা, অফিস-আদালত, গাড়ি চলাচল সব বন্ধ থাকায় বায়ু দূষণ কমতে শুরু করে। গত জুন-জুলাইয়ে এ শহরের বায়ুমান ছিল ১০০ এর নিচে। যা ছিল স্বাস্থ্যকর। আগস্ট থেকে অফিস-আদালত, কল-কারখানা, গাড়ি চলাচল শুরু করার পর বায়ু দূষণ আবার বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টি শেষ হলে ধুলায় ছেয়ে যাবে ঢাকার আকাশ। তখন ধুলি দূষণে ঢাকার বাতাস বিষবাষ্পে পরিণত হবে। বায়ু দূষণ বাড়লে রাজধানীতে বাড়বে সর্দি-কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ। আর এতে করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণও আরও বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল ইনকিলাবকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ঢাকার বায়ু দূষণ কমেছিল। প্রকৃতি সজীবতা ফিরে পেয়েছিল। অনেকটা দূষণমুক্ত বায়ুতে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম। কিন্তু কল-কারখানা, গাড়ি এসব খুলে দেয়ায় এবং উন্নয়ন খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হওয়ায় ঢাকার বাতাস আবার বিষাক্ত হতে শুরু করেছে। কিছুদিনের মধ্যে রাজধানীর চারপাশের ইটভাটাগুলো চালু হবে। তখন ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় রাজধানীর বাতাস আরও দূষিত হবে। পরিবেশ অধিদফতর এসব নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। রাজধানীর বায়ু দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও পরিবেশ অধিদফতর তা বাস্তবায়নে যথার্থ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে অঘোষিত লকডাউনের পর আবার কাজ কর্ম স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সরকারের চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড আবারও শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল ও এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলছে। এর ফলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশনের খোঁড়াখুঁড়িতো আছেই। অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরের শুরুর দিকে ঢাকার আশপাশের ইটভাটাগুলো চালু হবে। তখন এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়া এবং রাজধানীতে চলাচল করা মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ির কালো ধোঁয়া এবং কল কারখানার ধোঁয়া মিলে রাজধানী আবার বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হবে।
ঢাকা বাঁচাও আন্দোলনের অন্যতম নেতা পরিবেশবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব ইনকিলাবকে বলেন, বাতাসকে দূষণমুক্ত রেখে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য জরুরি নির্মাণাধীন নতুন ভবন ও রাস্তাঘাট থেকে উৎপন্ন ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণ করা। শিল্প কারখানাকে শহর থেকে দূরে স্থাপন, কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণসহ শিল্প বর্জ্যের নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। ত্রæটিপূর্ণ যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাসহ সিসামুক্ত জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। ইটভাটা স্থাপন ও ভাটায় চিমনি ব্যবহারের মাধ্যমে কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নিয়ম মেনে চলার নিশ্চয়তা বিধান অত্যাবশ্যক। জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তার পাশে উন্মুক্ত ডাস্টবিন স্থাপন বন্ধ করতে হবে। এসব করার জন্য পরিবেশ অধিদফতর, সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিতভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন