শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

রাজধানীবাসীর অবস্থা নাজুক

করোনা ডেঙ্গু বায়ু দূষণ বাড়ছে

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাস, ধুলাদূষণ ও ডেঙ্গু সংক্রমণে রাজধানী ঢাকাবাসীর নাজুক অবস্থা। করোনাভাইরাস সংক্রমণের পাশাপাশি এবার বাড়ছে ডেঙ্গু সংক্রমণ। সেই সাথে বায়ু দূষণের ফলে ঢাকার বাতাস এখন খুবই অস্বাস্থ্যকর। বায়ু দূষণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বায়ুমান সংস্থা একিউআই এয়ারের তথ্যমতে গতকালও রাজধানী ঢাকার বায়ু দূষণের মাত্রা ছিল ২৮৪ পিএম। যা বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর শীর্ষে। বায়ুমান ২৬৪ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারতের দিল্লি, আর ২৪৩ নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে করাচি। অন্যদিকে রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ৬৬ জনই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে। করোনা সংক্রমণও গত কয়েকদিন যাবত বাড়ছে। প্রতিদিনই ৩০ জনের বেশি করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।

বেড়েই চলছে করোনা সংক্রমণ
প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনায় মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতিদিন সারা বিশ্বে হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছেন অচেনা এই ভাইরাসটিতে। আক্রান্তের তালিকাতেও প্রতিদিন যোগ হচ্ছে লাখো মানুষের নাম। বাংলাদেশের চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটির প্রকোপ কমছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত মৃতের তালিকায় যোগ হয়েছে ২৪ জনের নাম। তাদের নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬হাজার ৯৩০ জনে। একই সময়ে ২ হাজার ১৫৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হওয়ায় এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ১০৪ জনে। শীতে দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়বে বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই এমন সতর্কবার্তা দিচ্ছেন। অনেকে বলছেন দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। ডিসেম্বরের ১ তারিখে করোনায় মারা গেছেন ৩৫ জন। এরপর ২ তারিখ ৩১জন, ৩ তারিখ ৩৮ জন, ৪ তারিখ ৩৫ জন, ৫ তারিখ ২৪জন, ৬ তারিখ ৩৫ জন, ৭ তারিখ ৩১ জন এবং ৮ তারিখ ৩৬ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে ঢাকার রোগী শতকরা ৮০ ভাগ।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পর বাংলাদেশে ভাইরাসটি শনাক্ত হয় গত ৮ই মার্চ। ওইদিন তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। করোনায় মৃত্যুর হার শুরুতে বৃদ্ধি পাওয়ার পর জুন জুলাইয়ে অনেকটাই কমে এলেও আবারও সেই হার এখন বাড়ছে।
বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা ও চিরুনি অভিযানের পরও রাজধানীতে নতুন নতুন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৫ রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ৬৬ জন ঢাকায় ও রাজধানীর বাইরে নয়জন ভর্তি আছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে। গত ৬ ডিসেম্বরও নতুন করে ২২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ২০ জন ও ঢাকার বাইরে দু’জন রয়েছেন। দেশে চলতি বছর এখন পর্যন্ত এক হাজার ১৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। মশাবাহিত এ রোগের প্রকোপ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস শেষে কমতে শুরু করলেও চলতি বছর নভেম্বর মাসে হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে দেশে ১৬৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। তবে নভেম্বরে মাসে মোট ৫৪৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। যা আগের মাসের তুলনায় ৩ দশমিক ৩৫ গুণ বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে যদি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে তবে তা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে কর্মসূচি ও জনগণের মাঝে সচেতনতা খুবই জরুরি।

বায়ু দূষণের শীর্ষে ঢাকা
ঢাকায় বায়ু দূষের মাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ধূলিকণার পরিমাণ বেড়ে বায়ু দূষিত হচ্ছে। দূষণের মাত্রা বেড়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় আবারও এক নম্বরে চলে এসেছে ঢাকা। বায়ুমান সূচকে ঢাকার বাতাস প্রায়ই ২৫০ পিএম থেকে ৩০০ পিএম-এ পৌঁছে যাচ্ছে। যা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। আর বায়ুদূষণের প্রধান কারণ হচ্ছে ধুলা। অপরিকল্পিতভাবে শহরের যেখানে-সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়ন কাজের জন্য রাজধানীর বাতাসে ছড়াচ্ছে ধুলা। আর তাতে বিষাক্ত হচ্ছে রাজধানীর বাতাস। এই ধুলাদূষিত বিষাক্ত বাতাস থেকে নগরবাসী সর্দি-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরাই এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পেলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধিরও আশঙ্কা রয়েছে। ধুলায় অন্ধকার রাজধানীর রাজপথ। ধুলা আর ধোঁয়ায় বায়ুদূষণে বিপজ্জনক সীমা ছুঁয়ে ফেলেছে। দিল্লিকেও ছাড়িয়ে ঢাকা এখন বিশ্বের দূষিত শহরের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। ঢাকায় বাতাসের মান অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। বলা যায় রাজধানী ঢাকা এখন বসবাসের অযোগ্য এক নগরীতে পরিণত হয়েছে।

গ্রীষ্ম, বর্ষা কিংবা শীত। সব ঋতুতেই চলে রাজধানীর সড়কগুলোতে খোঁড়াখুড়ির অত্যাচার। কখনও ওয়াসা, কখনও ডেসকো কিংবা কখনও সিটি করপোরেশন। উন্নয়নকাজে বছরব্যাপী চলা এ খোঁড়াখুড়িতে একদিকে যেমন সড়কের ত্রাহি অবস্থা। অন্যদিকে সৃষ্টি হচ্ছে ধুলার রাজত্ব। রাজধানীয় ঢাকার সব জায়গাতে ধুলায় ধূসর প্রান্তর। ঠিক যেন বায়ুদূষণের আনুষ্ঠানিক আয়োজন! শহরের এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে উন্নয়ন বা সংস্কার কাজ চলছে না। কোথাও সবে সড়ক খুঁড়েছে। কিন্তু খোঁড়া মাটি পড়ে আছে রাস্তার ধারে। এতে যানবাহন চলাচল কিংবা পথচারীর হাঁটাহাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে মাটি। শুষ্কতায় সেসব মাটি বাতাসে মিশে ধুলা সৃষ্টি হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। আবার কোথাও খোঁড়াখুঁড়ি সেরেছে। কিন্তু রাস্তায় দেওয়া হয়নি কার্পেটের (পিচ) ঢালায়। এতেও সৃষ্টি হচ্ছে ধ‚লার রাজত্ব। ফলে ঘটছে বায়‚দ‚ষণের মাধ্যমে পরিবেশ ও মানবজীবনের চরম বিপর্যয়।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সঠিক নজরদারি আর ঠিকাদারদের হেয়ালিপনা-ই শহরে বায়ু দ‚ষণের জন্য দায়ী। যার ফল ভোগ করছে নগরবাসী। সরকারের কঠোর নজরদারি ছাড়া এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তারা। তাই নগরবাসীর সুস্থাাস্থোর জন্য হলেও এ বিষয়ে সরকারকে নজর দেওয়ার আহ্বান তাদের।
বিশিষ্ট নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকাকে অনেকে বসবাসের অযোগ্য, পরিত্যক্ত নগরী হচ্ছে এমনটা বলছেন। তবে আমি তা মনে করি না। ঢাকাবাসী হাজারও অনিয়ম ও সমস্যায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এসব অনিয়ম কঠোর অনুশাসন ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। আমরা সবাই যদি সচেতন হই তাহলে এই শহরকে অবশ্যই বাসযোগ্য করতে পারি। যেমন নগরীর খাল, খেলার মাঠ, উন্মুক্তস্থান এগুলো উদ্ধার এবং যথাযথভাবে রক্ষা করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। নগরীকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয়। নাগরিক হিসাবে আমাদেরও এই নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তাই আমি বলবো সরকার আন্তরিক হলে এবং সবাই সচেতন হলেই আমাদের রাজধানীকে বাসযোগ্য ও সুন্দর করে গড়তে পারি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন