শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

উত্তরাঞ্চলে ফের বন্যা

বিপদসীমার ওপরে ধরলা, বাড়ছে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি তলিয়ে গেছে শত শত একর রোপা আমন সারডোব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০ মিটার ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ভারত গজলডোবা ও ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ায় আবারও উত্তরাঞ্চলের ধরলা, তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে। ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটের নদ-নদীর নিম্নাঞ্চল ফের প্লাবিত হচ্ছে। ভারতের ঢল আর গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিক গতিতে বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। শত শত একর আমন ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩০ হাজার মানুষ। ধরলার তীব্র স্রোতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০ মিটার অংশ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে ওই এলাকা তৃতীয় দফা বন্যা প্লাবিত হলো। এছাড়া তীব্র ভাঙনে ঝুঁকিতে পড়েছে মোঘলবাসা এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি। আগামী ৪৮ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। পদ্মার পানি স্থিতিশীল রয়েছে। উত্তরপূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা ব্যতীত আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি পাতের ফলে সে দেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় গজলডোবা ও ফারাক্কা বাঁধ খুলে দিয়েছে। এর ফলে ভারত থেকে আসা পানির ঢলে বাড়ছে নদনদীর পানি এবং প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। গত জুন মাসের ২৪ তারিখ থেকে বাংলাদেশে বন্যা শুরু হয়। দেশের ৩৩ জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়। ২৫ থেকে ২৬ দিন পর নদনদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ভারত ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়। দ্বিতীয় দফায় নদনদীর পানি বাড়তে থাকে এবং অনেক নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। এ বন্যা দীর্ঘ ২ মাস স্থায়ী হয়।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, ভারতের ঢল আর গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিক গতিতে বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি বাড়ার কারণে কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ী ও উলিপুর উপজেলার প্রায় অর্ধশত চর প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার শত শত একর আমন ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩০ হাজার মানুষ। ধরলার তীব্র স্রোতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০ মিটার অংশ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া তীব্র ভাঙনে ঝুঁকিতে পড়েছে মোঘলবাসা এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। তিস্তার ভাঙন চলছে বজরা, থেতরাইসহ কয়েকটি এলাকায়। এসব এলাকায় গত দু’দিনে শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আগামী ২-৩ দিন পানি আরো বাড়তে পারে। এরপর পানি কমবে। এছাড়া নদী ভাঙন প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় জরুরিভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পাশাপাশি তিস্তার পানি বাড়ছে। এতে তিস্তা অববাহিকায় নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। তিস্তার ভাঙনে রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুহারা জীবনযাপন করছেন।

মো: আইয়ুব আলী বসুনীয়া লালমনিরহাট থেকে জানান, ভারত থেকে আসা ঢল ও ভারী বর্ষণে ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল বিকেলে জেলার কুলাঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানিও বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। তিস্তা ও ধরলার পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের নদী অববাহিকার নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নদী অববাহিকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। তিস্তায় দেখা দিয়েছে তীব্রভাঙন। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার আদিতমারী, হাতিবান্ধা ও সদরের ৮টি ইউনিয়নের ২৯টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে জেলার বেশ কয়েকটি স্থাপনা। পানি বাড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তিস্তা ধরলা নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা ৬৩ চরের মানুষ। বন্যার পানিতে তৃতীয়বারের মতো তলিয়ে গেছে রোপণ করা আমনের ক্ষেত। ডুবে গেছে, শীতকালীন আগাম শাকসবজির ক্ষেতও। লালমনিরহাট কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনের ভারীবর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরের প্রায় ৭শ’ একর জমির রোপা আমন ক্ষেত ও আড়াই একর জমির বিভিন্ন সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

সদরের কুলাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী জানান, ধরলার পানি ব্যাপকহারে বাড়তে শুরু করেছে। বুধবার বিকেলে পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে তীব্রভাঙন। গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলার ভাঙনে ১৭টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন তীব্র আকার ধারন করায় নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, ভারীবর্ষণ ও ভারত থেকে আসা ঢলে ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা এখন বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি আরো বাড়তে পারে আশঙ্কায় তিস্তা ধরলা অববাহিকা এলাকার সবাইকে সতর্ক রাখা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন পাউবোর এ কর্মকর্তা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কর্মকর্তা আরো জানান, সার্বিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে যে কোনো সময় তিস্তার ব্যারেজ পয়েন্টেও পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন