শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উত্তরাঞ্চলে শীতের আমেজ

শাকসবজির জমিতে ব্যস্ত কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঋতুর হিসাবে দেশে শীতকাল আসতে এখনো অনেক দিন বাকি। কিন্তু কার্তিকের শেষ দিকে দেশের উত্তরাঞ্চলে শুরু হয়ে গেছে শীতের আমেজ। শীতল হাওয়ার উৎস হিমালয় পর্বত। সেখানে হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করেছে। শীতের বাতাস হিমালয়ের কোল ঘেঁষে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে একই কার্তিকেই। মৌসুমী বায়ু দেরিতে বিদায় নিলেও সারাদেশে শীত আসি আসি করছে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বিকেলেই শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতের কাপড় পড়ে মানুষ বিকেলে হাটবাজারে যাচ্ছেন। রাতে মানুষকে কাঁথা-কম্বল গায়ে দিয়েই ঘুমাতে হচ্ছে। সকালে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু দৃশ্যমান হচ্ছে। এমনকি সকালে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক-মহাসড়কে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করার দৃশ্যও চোখে পড়ছে।

প্রতি ভোরে বইছে হালকা কুয়াশার সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস। বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় রাত গভীর হলে শীতের অনুভূতি কয়েকদিন দিন ধরেই। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, রংপুর কুড়িগ্রামের কিছু এলাকায় রীতিমতো হাড়কাঁপানো শীত নেমে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত ডিসেম্বরের আগে এমন তীব্র শীতের অনুভূতি হয় না। এবার তা নভেম্বরের শুরুতেই হাজির। উত্তরাঞ্চল থেকে রাজধানী সবখানে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে নদীর আশপাশের এলাকায় বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, নভেম্বরের মাঝামাঝি দেশে পুরোপুরি শীত নামবে। শীতের আমেজে উত্তরাঞ্চলের কৃষাণ-কিষাণিরা শাকসবজি ফলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। হেমন্তের মৃদু হাওয়ায় শিম, লাউ, বেগুন ক্ষেতে দুলছে থোকা থোকা ফুল। যার মাঝে উঁকি দিচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। নানা দুর্যোগ পেরিয়ে বাম্পার ফলনের প্রত্যাশায় কৃষাণ-কিষাণিরা স্বপ্ন বুনছেন।

লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধার স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, মানুষ ইতোমধ্যেই শীতের কাপড় বের করেছে। রাতে কুয়াশা পড়ছে। গ্রামের হাটবাজারে শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। শীতের শবজি চাষে কৃষাণ-কিষাণি ব্যস্ত সময় পার করছেন। সরেজমিনে গাইবান্ধার ধাপেরহাট ইউনিয়নের বোয়ালীদহ গ্রামে দেখা গেছে শিমফুলের স্বর্গরাজ্য। ধাপেরহাট ইউনিয়নের বোয়ালীদহ গ্রামের মো. মতলুব চাষ করেছেন চ্যাপ্টা জাতের শিম। গত আগস্ট মাসে ৬০ শতক জমিতে শিম বীজ বপন করায় এখন এসব বীজ ফুটিয়ে গাছগুলো উঠেছে মাচায়। এ গাছের লতা-পাতায় ভরে গেছে পুরো ক্ষেত। রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের উলিপুর, রাজারহাট, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, বগুড়ার শিবগঞ্জের বিপুল পরিমাণ জমিতে সবজি চোখে পড়ে। কৃষকরা জানান, আগাম শীত পড়ায় তারা এবার সবজির বেশি দাম পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।

মো. মতলুবের মতো শত শত কৃষক নানান জাতের সবজির চাষ করছেন। আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগাম আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন অসংখ্য কৃষক। কৃষকরা জানান, শীতের সবজি হিসেবে বাজারে শিমের চাহিদা প্রচুর। সেই সঙ্গে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে শিমের দামও ভালো। বিশেষ করে গাইবান্ধা, বগুড়া, রংপুরের সবজি ঢাকা শহরে চড়া দামে বিক্রি হয়ে থাকে। গ্রামের হাট-বাজারে প্রতি কেজি শিম ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, সাধারণত অক্টোবরের মাঝামাঝিতে মৌসুমী বায়ু বিদায় নেয়। এবার কিছুটা দেরিতে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে মৌসুমী বায়ু বিদায় নিয়েছে। সাধারণত দক্ষিণমুখী বাতাস উত্তরে ঘুরে গেলে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীত অনুভ‚ত হয়। পরে ধীরে ধীরে সারা দেশে শীতের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। এবার আকাশে প্রচুর মেঘ ছিল। অনেক বৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় মনে হচ্ছিল শীত এসে গেছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, দেশের বেশিরভাগ এলাকার তাপমাত্রা এক সপ্তাহের ব্যবধানে এলাকাভেদে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমেছে। উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকায় সন্ধ্যার পর ঠান্ডা থেকে বাঁচতে গায়ে শীতের কাপড় পরতে হচ্ছে। সড়ক ও নৌপথে কুয়াশা চলার পথে বাঁধা দেয়া শুরু করেছে। শহরে কুয়াশার সঙ্গে ধুলা যোগ হয়ে দৃষ্টিসীমা ঝাপসা করে দিচ্ছে।

ইনকিলাবের জেলা-উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা নভেম্বরের শুরুতেই শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে চলে গেছে। কোথাও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেখানে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। গত শনিবার তেঁতুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েকদিনে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বেশির ভাগ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেক ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, এ বছর দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিক, রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কম এবং অন্যান্য বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ১ অক্টোবর ও ৯ অক্টোবর দুটি বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। ওই লঘুচাপই শীতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তবে আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান জানান, ডিসেম্বর থেকে দেশে শীত শুরু হয়। এবার মৌসুমি বায়ু বিদায় নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত একটু আগেভাগে হাজির হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। তারপর আবারও কমতে শুরু করবে। তখন পুরো শীত চলে আসবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন