পীরজাদা মাওলানা মীর মো: হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা: যে শাশ্বত জীবনবিধান নিয়ে এসেছেন তাই ইসলাম। ইসলামের আগমন হয়েছে মানব কল্যাণ ও মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে। ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বাণী অনুযায়ী ‘আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবনব্যবস্থা ইসলাম’। ইসলামে মরামারি, খুন-খারাবি, রক্তপাত নিষেধ। আইয়ামে জাহিলিয়া যুগে মানুষ খুন-খারাবিকে বংশ মর্যাদা মনে করত। ভাই ভাইকে, পিতা পুত্রকে, স্বামী স্ত্রীকে বিনা দ্বিধায় খুন করত, এমনকি মেয়ে সন্তান জন্ম নিলে পিতা তাৎক্ষণিক জ্যান্ত কবর দিত। মহানবী সা: যখন পৃথিবীর বুকে আগমন করেন তখন সাধারণ মানুষ ছিল নির্যাতিত, নিষ্পেষিত ও অধিকারহারা। এমন এক সঙ্কটময় মুহূর্তে মহানবী সা: মানুষের মাঝে নিয়ে এলেন সাম্যের বাণী এবং বঞ্চিতের অধিকার সংরক্ষণে তিনি উপস্থাপন করলেন এক ন্যায়নীতির আদর্শ ইসলাম।
মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জীব। তারা অন্যায়-অবিচার, জুলুম- অত্যাচার এবং খুন-খারাবি করতে পারে না। তাই এগুলো ত্যাগ করতে হবে। মনে রাখবে, রক্তপাত, খুন-খারাবি আল্লাহর মোটেই পছন্দ নয়। রাসূলে পাক সা:-এর এই আহ্বানে মানুষ এসব ঘৃণ্য কাজ ত্যাগ করে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে লাগল। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমাদের সমাজে ইসলামের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে মানুষ খুন করা পুণ্যের কাজ। তা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করলে শহীদ হবে এবং চিরশান্তিতে জান্নাতে বসবাস করবে। এ ধরনের মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে একশ্রেণীর যুবককে বিনষ্ট করা হচ্ছে। শহীদ হওয়া বা শহীদদের শ্রেণীভুক্ত হওয়া এত সহজ নয়।
বাংলাদেশ মুসলমানদের দেশ। শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমান। বাকি যারা আছে তারা আমাদের সাথে মিলেমিশে আছে। আর বিদেশী যারা তাদের দ্বারা আমাদের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধিত হয় না। সুতরাং তাদেরকেও খুন করা ইসলামের কোনো বিধানে নেই।
খুন করার প্রচলন শুরু হয় সর্বপ্রথম আদম (আ:)-এর দুই সন্তান হাবিল ও কাবিল থেকে। কাবিল হাবিলকে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন করে এবং মাটি খুঁড়ে কবরস্থ করে। সে জন্য যেহেতু তার দ্বারা খুন করার প্রচলন শুরু হয়, তাই কেয়ামত পর্যন্ত যত খুন হবে তার গুনাহর একটি অংশ কাবিলের আমলনামায় জমা করা হবে এবং কেয়ামত পর্যন্ত মাটি তাকে গ্রাস করতে থাকবে।
হাদিস শরিফে এসেছে, যাকে খুন করা হলো সেই ব্যক্তি তার খুনিকে ঘাড় ধরে হাসরের মাঠে আল্লাহর পবিত্র দরবারে উপস্থিত করবে। উল্লেখ্য যে, তখনও যাকে খুন করা হয়েছে তার দেহ হতে তাজা রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। এই দৃশ্য দেখে আল্লাহ ক্রোধান্বিত হয়ে নির্দেশ দেবেন, তাকে ছেড়ে দাও। আমার সকল প্রকার সাহায্য থেকে তাকে বঞ্চিত করা হলো। আর যাকে খুন করা হয়েছে তাকে শাহাদতের মর্যাদা দান করা হলো।
ইদানীং অর্থের বিনিময়ে মানুষ মানুষকে খুন করে। এ ধরনের খুনের প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। আর এ দায়িত্ব সরকারের এবং সাথে সাথে জনগণকেও নিতে হবে। জন্মভূমিকে ভালোবাসা ঈমানের অংশ। তাই এ ঈমানি দায়িত্ব আমাদের সবাইকে বহন করতে হবে।
আলেম-ওলামা এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা এ ধরনের ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হতে পারে না, স্বল্প পরিমাণে যা পাওয়া যাচ্ছে তাদের ফিরে আসতে হবে এবং দেশকে অন্তর দিয় ভালোবাসতে হবে।
রাসূল সা: হিজরতের রাতে বারবার ফিরে ফিরে জন্মভূমি মক্কা নগরের দিকে তাকান। তখন তাঁর অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকে। কে বা কারা দেশ পরিচালনা করছে সেটা কোনো বিষয় নয়। কারণ ক্ষমতার মূল মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনি যাকে খুশি ক্ষমতা দান করেন এবং তাৎক্ষণিক ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু এদেশ আমাদের, দেশকে ভালোবাসা এবং একে রক্ষা করা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন