মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শেষ হয়ে আসছে ভারতের দাদাগিরির দিন

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

ভারতের মোদি সরকার তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক ধরে রাখার ক্ষেত্রে একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা সৃষ্টি করে ফেলেছে। দেশটির সাথে প্রতিবেশী কোনো দেশেরই সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না। কোনো দেশের সাথে সরাসরি দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছে, কোনো দেশের সাথে সম্পর্কের তিক্ততা সৃষ্টি করে চলেছে। চীন ও পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধাবস্থা যেমন চলছে, তেমনি নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কার সাথে টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের অবনতি না ঘটলেও, এক ধরনের শীতল সম্পর্কের যে সৃষ্টি হয়েছে, তা সকলেই আঁচ করতে পারছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মন্ত্রী, সচিব ও রাষ্ট্রদূতরা মুখে মুখে যতই বলুন না কেন, দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের ‘গোল্ডেন এরা’ বা সোনালী যুগ চলছে, রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ-এসব কথা যে অনেকটা কথার কথায় পরিণত হয়েছে, তা বুঝতে কষ্ট হয় না। ভারতের আচরণে যে বাংলাদেশ সরকার মনে মনে ক্ষুদ্ধ, বিভিন্ন কূটনৈতিক কৌশলে তা প্রকাশিত হচ্ছে। বলা যায়, বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত সুদক্ষ কূটনৈতিক কৌশলের মধ্য দিয়ে ভারতের আচরণের প্রতি তার অসন্তোষ প্রকাশ করছে। ভারত যে তা বোঝে না, তা নয়। তবে বুঝলেও বন্ধুত্বের কথা বলা ছাড়া তার কিছু করার থাকছে না। কারণ, ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ কোনো ধরনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সুবিধা পায়নি এবং পাচ্ছেও না। বরং ভারত বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের কাছ থেকে তার সব ধরনের চাওয়া আদায় করে নিয়েছে। বিনিময়ে কিছুই দেয়নি। সর্বশেষ মোদি সরকার হুট করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশকে ভেতরে ভেতরে ক্ষুদ্ধ করে তুলেছে। পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু জানত না বলে হাস্যকর যুক্তি দেখিয়েছে। প্রতিবেশীদের সাথে মোদি সরকারের এমন এলোমেলো আচরণের কারণে দেশগুলোর ক্ষুদ্ধ হওয়া স্বাভাবিক। বলা যায়, মোদি সরকার মুসলমান ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের দমন-পীড়ন, হত্যা-নির্যাতনের মাধ্যমে উচ্ছেদ করে দেশটিকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। দেশটিকে একটি উগ্রবাদী দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করেছে। সম্প্রতি ভারতীয় আমেরিকান এবং মার্কিন নাগরিক অধিকার সংগঠন এবং কর্মীদের জোট ‘দ্য কোয়ালিশন টু স্টপ জেনোসাইড ইন ইন্ডিয়া’ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে ভারতীয় সরকারি সংস্থা এবং ধর্মীয় নিপীড়নের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদেরকে অপরাধীর তালিকাভুক্ত করতে দাবী জানানো হয়। চিঠিতে ১০ জন রিপাবলিকান এবং ৪ জন ডেমোক্রেট সিনেটর স্বাক্ষর করেন। এ থেকে বোঝা যায়, মোদি সরকার ভারতকে বিশ্বে একটি সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে পরিচিত করেছে।

দুই.
প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ভারতের আগ্রাসী ও দাদাগিরিসুলভ আচরণ নতুন কিছু নয়। কথায় কথায় সে প্রতিবেশিদের সাথে অসদাচরণ, হুমকি-ধমকি দিয়ে আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে দ্বিধা করে না। তবে চলমান পরিবর্তনশীল বিশ্ব পরিস্থিতি প্রতিবেশী দেশগুলোকে ভারতের এই আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহস যুগিয়ে চলেছে। তাদের এই রুখে দাঁড়ানোর নেপথ্য শক্তি বা ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে কাজ করেছে নতুন পরাশক্তি চীন। মূলত চীন কয়েক মাস আগে লাদাখ সীমান্তে কমব্যাট ফাইটের মাধ্যমে ভারতকে পর্যুদস্ত করে ভারতের আগ্রাসী মনোভাবে চরম আঘাত করে। ভারতের বিরুদ্ধে সামনে থেকে চীনের এ নেতৃত্ব দেয়া থেকে নেপাল, ভুটান প্রাণীত হয়ে তার দাদাগিরির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। গত জুনে নেপাল ভারতের অধিকৃত উত্তরখন্ডের লিম্পুয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখ নিজেদের ভূখন্ড দাবি করে নতুন মানচিত্র তৈরি করেছে। নেপালের সংসদের উচ্চকক্ষে এই মানচিত্র পাশও করিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি নেপাল উত্তরখন্ডের আরও দুটি অঞ্চল নৈনিতাল ও দেরাদুনকে নিজেদের ভূখন্ড বলে দাবী করেছে। এমনকি উত্তরখন্ড, হিমাচল প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও সিকিমের বড় বড় শহরও নিজেদের বলে দাবী করেছে। এ নিয়ে দেশটি ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউব চ্যানেলে ব্যাপক প্রচার শুরু করেছে। অন্যদিকে ভুটানও কয়েক মাস আগে তার অংশের নদীর পানি আটকে দেয়। এতে ভারতের বিহারের কৃষকরা বেকায়দায় পড়ে। শ্রীলঙ্কা এখন ভারতকে অনেকটাই থোড়াই কেয়ার করে চলছে। দেখা যাচ্ছে, ভারত তার প্রতিবেশী যেসব দেশের ওপর সবচেয়ে বেশি আধিপত্য বিস্তার করত, সেসব দেশই তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে পরাশক্তি চীন এবং চিরবৈরী পাকিস্তানের সাথে ভারত কোনোভাবেই পেরে উঠছে না। এটা এখন স্পষ্ট যে, প্রতিবেশীদের সাথে ভারতের আগ্রাসী আচরণে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে চীন। দেশটি অত্যন্ত সুকৌশলে পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কার পেছনের শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এই অনুপ্রেরণা চীন এমনি এমনি দিচ্ছে না। দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, তার সব দিয়ে শক্তি ও সাহস জুগিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ ভারতের মতো দাদাগিরিসুলভ আচরণের মাধ্যমে নয়, বন্ধুত্বের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে প্রকৃত বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে সাহস দিচ্ছে। ভারত সব বুঝতে পারলেও তার বলার কিছু থাকছে না। থাকবে কি করে! সে তো এতদিন দেশগুলোকে ধমক দিয়ে দাবিয়ে রাখার নীতিতে চলেছে। নিজের স্বার্থ আদায় ছাড়া কিছুই দেয়নি। ফলে তার বলার মতো কোনো ‘মুখ’ থাকার কথা নয়। কারণ, করোনার এই দুঃসময়ে প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়ানো দূরে থাক, উল্টো নিজেই বিপাকে রয়েছে। তার অর্থনীতি এখন সর্বকালের সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে। মোদি সরকার দেশটির অর্থনীতি সচল রাখতে সক্ষম হচ্ছে না। অথচ বিশ্ব রাজনীতি এমনকি আঞ্চলিক রাজনীতির ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক শক্ত ভিত্তিই হচ্ছে মূল নিয়ামক শক্তি। চীন যেভাবে তার প্রাচুর্যপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়েছে, তাতে তার পক্ষেই সম্ভব বিশ্ব ও আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা। কোনো আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে নয়, বিভিন্ন দেশে তার অর্থনৈতিক শক্তি এবং সহযোগিতা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশগুলোও পারস্পরিক স্বার্থে চীনের বাড়িয়ে দেয়া হাতে ‘হ্যান্ডশেক’ করছে। বলা বাহুল্য, ভারত পরিবর্তিত বিশ্ব ও আঞ্চলিক রাজনীতির পরিবর্তনের বিষয়টি আঁচ করতে পারেনি। সে এখন হয়েছে বুড়ো বাঘের মতো, যে কিনা কেবল গর্জনই করতে পারে, উঠে দাঁড়াতে পারে না। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোও এ সুযোগে বৃহৎ অথচ বন্ধুভাবাপন্ন দেশের সাথে হাত মিলিয়ে ভারতের অন্যায় আচরণের বিরোধিতা করছে। এক্ষেত্রে নিজেকে দায়ী করা ছাড়া ভারতের আর কিছু করার নেই। দেশটির আজকের এই পরিণতির জন্য মোদি সরকারের ভ্রান্ত নীতিই দায়ী। তার এই নীতি শান্তি সৃষ্টির পরিবর্তে অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। এমনকি নিজের ঘরেই অশান্তির বীজ বপন করে রেখেছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতি গ্রহণ এবং তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠায়, আভ্যন্তরীণভাবে সমস্যা সংকুল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল পাস করে মুসলমানদের ভারতছাড়া করার লক্ষে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে রেখেছে। এই কাজে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে ঘরে-বাইরে দুই দিকেই বেসামাল অবস্থার মধ্যে পড়েছে। এখন তার পক্ষে ঘর সামলানো যেমন কঠিন, তেমনি প্রতিবেশিদের সামলানোও দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

তিন.
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ককে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বলা হলেও উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমনটি বলা হয় না। তার অর্থ হচ্ছে, ভারত মনে করছে, প্রতিবেশিদের মধ্যে কেবল বাংলাদেশের সাথেই ভারতের সম্পর্ক ভাল থাকলে চলবে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা বিশ্লেষণের অবকাশ রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক কৌশলের বিষয়টি আমলে নেয়া জরুরি। করোনাকালে গত কয়েক মাসে চীন যেভাবে বাংলাদেশের পাশে সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে, তা আঁচ করতে পেরে ভারত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের শৈথিল্য ঠেকানোর শঙ্কা থেকে হুট করেই কোনো শিডিউল ছাড়াই দেশটির পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা ঢাকা সফরে আসেন। এই সফর এবং তার ফলাফল যে ভারতের জন্য সান্ত¦নাস্বরূপ, তা পর্যবেক্ষক মহল ভালভাবেই বুঝতে পারছেন। তারা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত দক্ষতা ও দূরদর্শীতার মাধ্যমে ভারতের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি আগের মতোই আছে বলে ভারতকে যেমন আশ্বস্থ করছে, তেমনি চীনসহ প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার নানা উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে। বিষয়টি অনেকটা সাপও মরল, লাঠিও ভাঙ্গল না, এমন নীতি অবলম্বন করে চলেছে। বিশেষ করে চীনের সহায়তায় অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা পর্যবেক্ষক মহলে অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচায়ক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, সরকার ভাল করেই বুঝতে পেরেছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীন যেভাবে এগিয়ে এসেছে, ভারতের পক্ষে তা সম্ভব নয়। ভারতের সাথে সম্পর্কটি একপাক্ষিক হয়ে গেছে। তার কাছ থেকে কিছুই পাওয়া যায়নি, আর পাওয়ার আশাও ক্ষীণ। ফলে বিশ্ব নেতৃত্ব যার হাতে থাকবে, তার সাথে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। গত সপ্তাহে বাংলাদেশের সাথে ভারত ও চীনের সম্পর্ক নিয়ে লন্ডনের বিখ্যাত পত্রিকা দ্য ইকোনোমিস্ট এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশী এক সাংবাদিকের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, ‘ভারত বিশ্বাসই করে না যে, আমরা স্বাধীন। সে সব কিছুতেই হস্তক্ষেপ করে। সে মনে করে, আমাদের আমলারা তাদের জন্য কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেছেন, ভারতের নীতিনির্ধারকগণ ও সংবাদমাধ্যম সবসময় বাংলাদেশকে মনে করিয়ে দেয়, বাংলাদেশ অনেক ছোট এবং দেশটির গুরুত্ব তত বেশি নয়।’ প্রতিবেদনে চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে বলা হয়, চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ২০১৮ সালে ভারতকে টপকে চীন হয়ে উঠে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক রাষ্ট্রীয় সফরে এসে ২৭টি অবকাঠামো প্রকল্পে দুই হাজার কোটি ডলারেরও বেশি ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দেন। করোনাকালে গত জুনে দেশটি বাংলাদেশ থেকে রফতানিযোগ্য ৯৭ শতাংশ পণ্যের শূন্য শুল্কে রফতানির সুযোগ করে দিয়েছে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে দর কষাকষিতে ত্যক্ত-বিরক্ত বাংলাদেশ এ মাসেই ঐ নদীর পানি ব্যবস্থাপনার জন্য চীনের কাছে ১০০ কোটি ডলার চেয়েছে। সাম্প্রতিককালে চীন বাংলাদেশে ৭টি মৈত্রী সেতু স্থাপন করেছে। গত কয়েক বছরে চীনে পড়াশোনা করতে যাওয়া বাংলাদেশেী শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের অনেক সাংবাদিকও ফেলোশিপ করার জন্য চীনে যাচ্ছে। মিডিয়াও চীনের পক্ষে চলে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেছেন, চীনের পকেট যে শুধু গভীর তাই নয়, বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশের তুলনায় চীনের দ্বিধাদ্ব›দ্বও কম। বাংলাদেশের প্রতি ভারত সরকারের আচরণ নিয়ে গত ২৪ আগস্ট আনন্দবাজার পত্রিকার এক নিবন্ধে শুভরঞ্জন দাশ গুপ্ত লিখেছেন, নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, অতি জটিল নাগরিকত্ব প্রশ্নের উত্তরে তাঁর সরকার এক জনকেও জোর করে বাংলাদেশে পাঠাবে না। কিন্তু তাঁরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভারতে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের ‘উইপোকা’র সঙ্গে তুলনা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নেতা দিলীপ ঘোষ সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘নাগরিকত্বের বিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। প্রয়োজনে অনুপ্রবেশকারীদের জবরদস্তি করে তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাব।’ অথচ পরাক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) অধিনস্তদের চুপ থাকতে বলছেন না। নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ইচ্ছা করলেই চীনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের পরিমাণ তারা বাড়িয়ে নিতে সক্ষম। এই ভূ-কৌশলগত সহযোগিতার দৃষ্টান্ত, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সুদীর্ঘ সুড়ঙ্গ নির্মাণে চীনের অবদান। রাশিয়ার সহযোগিতায়ও বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। অতএব, বাংলাদেশ ভারতের উপর পূর্ণ নির্ভরশীল নয়। অন্যান্য দেশের দ্বারস্থ হতেই পারে। চীন তো দরজা খুলেই রেখেছে। ভারত এই সহযোগিতার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করলে, বাংলাদেশের উত্তর হবে, আপনাদের সকলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অটুট। দেশের সার্বিক কল্যাণে পদক্ষেপ নিয়েছি। রেষারেষির অবকাশ নেই। নিবন্ধে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলা হয়, এই পরিস্থিতিতে ভারতের করণীয় কী? শেখ হাসিনা তাঁর শাসনকালের দ্বিতীয় পর্বে ভারতকে অকাতরে সাহায্য করেছেন। প্রশ্ন, ভারত কি যোগ্য প্রতিদান দিয়েছে? যদি না দিয়ে থাকে, সম্পর্কটি মূলত একতরফা হয়ে যাবে এবং ভারতের ভূ-কৌশলগত স্বার্থও বিঘ্নিত হবে। এই মুহূর্তে, অন্যান্য প্রতিবেশীর সঙ্গে আমাদের (ভারতের) সম্পর্ক উৎসাহব্যঞ্জক নয়। এই বাস্তবতাকে স্মরণে রেখেই আমাদের এগোনো প্রয়োজন। পাদটিকায় শুভরঞ্জন লিখেছেন, প্রতিবেশীকে ‘উইপোকা’ সম্বোধন ভদ্রোচিত তো নয়ই, স্বার্থবিরোধীও বটে।

চার.
প্রতিবেশিদের সাথে ভারতের এখন যে সম্পর্ক, তাতে তাকে বুঝতে হবে, আগ্রাসন নীতি বা দাদাগিরি করার দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন পারস্পরিক সমঝোতা ও মর্যাদার বিষয়টিই বড় হয়ে উঠেছে। চীন যেভাবে উপমহাদেশ ও বিশ্ব রাজনীতিতে মহাশক্তিধর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশের আস্থা অর্জন করে চলেছে, ভারত এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারেনি। উগ্র সাম্প্রদায়িক নীতি অবলম্বন ও বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেশটি তার মধ্যেই আটকে গেছে। আধুনিক বিশ্বে যে সাম্প্রদায়িকতা এবং জঙ্গীবাদের কোনো স্থান নেই, তা বোঝার ক্ষেত্রে মোদি সরকার অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। ইতোমধ্যে সে একটি দেউলিয়া দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। মোদি সরকার ভারতকে এখন সেই পথেই নিয়ে গিয়েছে। এর ফলে দেশটি একে একে তার সব প্রতিবেশীকে হারাচ্ছে। বাংলাদেশও যে তার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, এটা বুঝতে পারলেও করার কিছুই থাকছে না। শুধু নিজ স্বার্থ আদায় করলেই যে হয় না, প্রতিবেশীর স্বার্থও দেখতে হয়, ভারত তা কোনো কালেই উপলব্ধি করেনি। সে বুঝতে পারেনি, তার আগ্রাসী নীতি ও দাদাগিরিই পায়ের নিচের মাটি সরিয়ে দিয়েছে।
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (19)
M. A. Zinnah ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩৬ এএম says : 1
ঐ দাদা দাদা শুধু আমরাই বলি, বাকিরা প্যাদানী দিয়ে গুণেনা।
Total Reply(0)
Ahmed Saleh ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩৭ এএম says : 1
দাদা গিরি থাকেনা বেশী দিন হঠাৎ শেষ হয়ে যাবে আল্লাহর গজব আসবে সব পানা ফিল্লা করে আগুনে পুড়িয়ে চাই হয়ে যাবে।
Total Reply(0)
Abdul Kabir Kabir ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩৭ এএম says : 1
আলহামদুলিল্লাহ
Total Reply(0)
Nahidul Hasan Nipu ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩৮ এএম says : 0
100% Right post.Our PM also great..
Total Reply(0)
Abdul Matin ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩৯ এএম says : 1
আল্লাহ এ জালেমের ধংশ কর
Total Reply(0)
Zillur Rahaman ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪০ এএম says : 0
বিজেপির সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ভারতকে একলা চলার পথ খুলে দিচ্ছে। একে একে সব প্রতিবেশী ভারতকে গুডবাই জানাচ্ছে। স্বার্থের ব্যাপারেও ভারত নিজের ক্ষেত্রে ষোল আনা আর প্রতিবেশির ক্ষেত্রে সিকি আনা।
Total Reply(0)
Md Bipul Hossain ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪১ এএম says : 0
বাংলাদেশের 90 পারসেন্ট মানুষ ভারতবিরোধী বর্তমান সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হবে ভারত প্রতিবেশী সব দেশের সাথে দাদাগিরি দেখায় এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় ভারতে নিতে জানে দিতে জানে না ভারতের মত দেশ কখনো বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না বর্তমান সময়ে ভারতের ব্যবহার দেখলে বুঝা যায় ভারতের মুখে মধু অন্তরে বিষ
Total Reply(0)
নীলাভ্র শ্রাবণ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪২ এএম says : 0
গরুর দল দেশ চালালে প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক জোরদার হবে কীভাবে ?? আগামী নির্বাচনে ভারতের সবকটা রাজ্যতে বিজেপি ক্ষমতায় আসুক সেটাই কামনা করছি , সীমান্ত , অর্থনীতি , সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সকল ক্ষেত্রে ভারতের বারোটা বাজানোর জন্য এমন একটি দলই প্রয়োজন ছিলো ...
Total Reply(0)
Babu Khan ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪৩ এএম says : 0
আমরা বাংলাদেশিরা ভারতের উপর বিরক্ত। তাদের রাজনৈতিক দলের নেতারা যেভাবে কটাক্ষ করে পার্শ্ববর্তী দেশকে অবমূল্যায়ন করে । এগোলো নিচু মনমানসিকতা পরিচয়। তাদের বুঝা উচিৎ বর্তমান পৃথিবীতে নিজ নিজ পরিচয়ে বাচতে সাচ্ছন্দ বোধ করে। আমরাও এর বাহিরে নেই। স্বাধীনতার সহযোগিতা ছাড়া এমন কোন অবদান রেখেনি তাদের নিয়ে মাতামাতি করতে হবে।
Total Reply(1)
mannan abdul ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:৪৯ পিএম says : 0
ভাই দাদারাতো দাদাদের লাভের আসায়ই স্বাধীনতার সহযোগিতা করেছেন
Khan Sharif ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪৪ এএম says : 0
ভারতের কথা কি আর বলবো এদের বিষয়ে আমার মনে হয় লিখে শেষ করা যাবে না। এখানে কিছু অংশ উল্লেখ করা যেতে পারে যেমন বর্তমান ভারত হচ্ছে এমন একটা দেশ যে তার সকল প্রতিবেশি দেশের সাথে ঝামেলে বাধাতে পছন্দ করে বলে আমার মনে হয় ধরুন বাংলাদেশের কথাই বলা যাক তারা বাংলাদেশ থেকে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে এবং বাংলাদেশ ও তাদেরকে সাদরে সবকিছু বিলিয়ে দিচ্ছে বিনিময়ে ইন্ডিয়া বাংলাদেশকে কি দিচ্ছে? তারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের সীমান্তে সাধারণ মানুষদের কে গুলি করে মারতেছে, তারা NRC, CAB,CAA, ইত্যাদি নাটক করে আসমের বিপুল জনগোষ্ঠী কে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে চাচ্ছে, তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের রপ্তানি পর্ন্য আগাম ঘোষণা ছাড়া বন্ধ করে দেয়, তারা ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে মরুভূমি বানাতে চাই, এছাড়া তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে কখনোই বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়নি, অথচ তারা বন্ধু বন্ধু বলে মুখে ফেনা উঠিয়ে ফেলাই, যদিও বাংলাদেশের মানুষ এই বন্ধুত্বের নাটক বুঝে ফেলছে। খেয়াল করলে দেখা যায় তারা বাংলাদেশের উপর একটা দাদা গিরি দেখাতে যায়। এমন অসংখ্য কারণ আছে যার জন্য ইন্ডিয়া বাংলাদেশ থেকে তার বন্ধুত্ব হারাচ্ছে।
Total Reply(0)
Nannu chowhan ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:৫৯ এএম says : 0
The leader of the country should love there country & they should be nationalist but abiding by international law & rules under UN charter,but this Indian BJP govorment is doing every things in their own country & at the neighboring countries very much abusive unhumen & barbarians style,which has no mach with the civilized world under UN rules.
Total Reply(0)
খোকন ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩৭ পিএম says : 0
তাতে কি ভারতের রাফায়েল আছে পাঁচটা
Total Reply(0)
আবদুল কাইয়ুম শেখ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:২৯ পিএম says : 0
ভারতের কপালে দুঃখ আছে। তাকে তার কর্মের প্রতিফল ভোগ করতে হবে।
Total Reply(0)
সালাউদ্দিন গাজী ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১৮ এএম says : 0
ভারতের পুলিশ আদালত প্রশাসন সবাই খোলামেলা ভাবে মুসলমানদের হত্যার নির্দেশ দেয় । বাংলাদেশেও ইসকন হিন্দু পরিষদ RAW এর সাহায্যে ধর্মীয় উত্তেজনা শৃষ্টি করে যাচ্ছে।
Total Reply(0)
সালাউদ্দিন গাজী ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১৮ এএম says : 0
ভারতের পুলিশ আদালত প্রশাসন সবাই খোলামেলা ভাবে মুসলমানদের হত্যার নির্দেশ দেয় । বাংলাদেশেও ইসকন হিন্দু পরিষদ RAW এর সাহায্যে ধর্মীয় উত্তেজনা শৃষ্টি করে যাচ্ছে।
Total Reply(0)
A Rehman ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:৪২ পিএম says : 0
Bangladesh boycott Indian Goods. No Indian Saree, Selwar-Kamiz, Ornaments. Buy all Made in Bangladesh.
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৯ এএম says : 0
কথাটা খুবই কঠিন সত্য যে ভারতের দাদাগিরি দিন শেষ হয়ে আসছে। তবে যদি এবার কংগ্রেস ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনেকরি ভারতের দাদাগিরি আবার ফিরে আসতে পারে।
Total Reply(0)
Chamily ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:২৯ পিএম says : 0
ব্রিটিশরা পশ্চিম বঙ্গ ভুল/আতাত করে তাদের সীমানাই রেখে গেছে, নইলে পশ্চিম বঙ্গ তো আমাদের ছিল।দাদাদের বলি চালাতে না পারলে আমাদের দিয়ে দাও, তাই বলে আমাদের ছোট ভেবনা ,আমরা বাংগালিরা সব পারি।
Total Reply(0)
Nazrul Islam ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:৩৮ এএম says : 0
Good writing
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন