কথা দিয়ে কথা না রাখা ভারতের উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্রাচারে পরিণত হয়েছে। এবারের পেঁয়াজকান্ড নিয়েই এ আলোচনা শুরু করা যাক। ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করে। ভিন্নার্থে বাংলাদেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে। উভয়ের প্রয়োজন ও স্বার্থেই এই পেঁয়াজবাণিজ্য। স্বাভাবিকভাবেই চলছিল এ বাণিজ্য। হঠাৎ করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সঙ্গে সঙ্গে রফতানির যাবতীয় প্রক্রিয়া থেমে যায়। এমন কি পথে থাকা পেঁয়াজের শত শত ট্রাক স্থলবন্দরগুলোতে আটকে যায়। আভাস-ইঙ্গিতেও আগে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ার কথা বাংলাদেশকে বলেনি। বাংলাদেশও অনুমান করতে পারেনি, এভাবে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে যাবে।
এটা ছিল বাংলাদেশের জন্য চপেটাঘাত তুল্য। এর অনিবার্য বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হতে হয়েছে তাকে। রাতারাতি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। পরবর্তী কয়েকদিন ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বেড়েছে। মানুষ উদ্বিগ্ন ও বিচলিত হয়ে পেনিক বায়িং করতে বাধ্য হয়েছে। পেঁয়াজের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ পেঁয়াজ আড়াল করে এবং ইচ্ছে মতো দাম বাড়িয়ে অন্যায় মুনাফা লুটে নিয়েছে। গত ১১/১২ দিনে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। তবে তা কেজিপ্রতি কয়েক টাকার মধ্যেই সীমিত হয়ে আছে। খবরের কাগজের ভাষায়, উচ্চদামে স্থিতিশীল পেঁয়াজের বাজার।
গত বছর এই সেপ্টেম্বর মাসেই ভারত পেঁয়াজ নিয়ে একই কান্ড করেছিল। আকস্মিকভাবে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করেছিল। এই ঘোষণায় বাংলাদেশে পেঁয়াজের জন্য হাহাকার পড়ে গিয়েছিল। ৩০ টাকার প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৩০০ টাকায় উঠে গিয়েছিল। তখনো বিষয়টি বাংলাদেশকে আগে ভাগে জানানো হয়নি। আগে জানানো হলে অন্যান্য দেশ থেকে জরুরি ভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা করা যেতো। দাম ওইভাবে আকাশে চড়তে পারতো না। এবারও আগে জানালে পরিস্থিতি ভিন্ন রকম হতে পারতো। আগে জানালে ভারতের কোনো ক্ষতি হতো না। বাংলাদেশের লাভ হতো। বাংলাদেশের লাভ যাতে না হয়, সে জন্যই কি ভারত রফতানি নিষিদ্ধের কথা আগে জানায়নি?
অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, গত বছর অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যান। সেখানে একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে পেঁয়াজের কথাটিও তিনি উল্লেখ করেন। রফতানি নিষিদ্ধের কথা আগে জানানোর তাকিদ দিয়ে বলেন, ‘আমি ভারতকে অনুরোধ করবো, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মেহেরবানী করে আমাদেরকে আগে ভাগে জানাবেন। হাজার হলেও আমরা তো প্রতিবেশী।’ এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলা যায় না, অন্তত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে থেকে। সঙ্গত কারণেই আশা করা গিয়েছিল, ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভারত বাংলাদেশকে আগেই জানাবে। কিন্তু দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রীর সেই বক্তব্য ভারতকে কোনো আছর করেনি। এই টুকু সৌজন্য দেখানো, এইটুকু ‘মেহেরবানী’ করা কি ভারতের জন্য কঠিন ছিল?
জানা যায়, গত বছরের পেঁয়াজকান্ডের পর দু’দেশের মধ্যে এরূপ সমঝোতা হয় যে, নিত্যপণ্যের আমদানি রফতানির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে না। তবে বিশেষ কোনো কারণে কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে এরূপ নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রয়োজন দেখা দিবেন সংশ্লিষ্ট দেশকে আগেই জানানো হবে। এছাড়া গত ১৫/১৬ জানুয়ারি দু’দেশের বাণিজ্য সচিবদের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য রফতানি বন্ধ না করার জন্য ভারতকে অনুরোধ জানায়। এবার পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তরফে ভারতকে চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠিতে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় পূর্বের সমঝোতা ও ঘোষণার কথা। বলা হয় : দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে গত ২০১৯ এবং ২০২০ সালে যে কথা ও সমঝোতা হয়েছিল, ভারত সরকারের ১৪ সেপ্টেম্বরের ঘোষণা সেই কথা ও সমঝোতার প্রতি সম্মান দেখাতে পারেনি। দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে যে সোনালী অধ্যায় বিরাজ করছে, বাংলাদেশ সেই সম্পর্কের খাতিরে হাইকমিশনের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশে আবার পেঁয়াজ রফতানি চালুর অনুরোধ জানাচ্ছে।’
আগের কথা, সমঝোতা ও সর্বশেষ পেঁয়াজ রফতানি চালু করার অনুরোধ কোনোই কাজে আসেনি। ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি ভারত দিয়েছে বলে শোনা গেলেও বাস্তবে তার কোনো লক্ষণ দৃশ্যগ্রাহ্য হয়ে ওঠেনি। মাঝখানে স্থলবন্দরগুলোতে আটকে থাকা পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশের যে ছাড়পত্র দেয়া হয়, তাও পরে রহিত করা হয়। আগে খোলা এলসির বরাতে পেঁয়াজ যা ঢুকেছে তা পচা এবং এ জন্য আমদানিকারকদের কয়েক কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত বহু বিষয়ে কথা দিয়েছে, সমঝোতা করেছে, এমন কি চুক্তি করেছে। এসবের কতটা সে রক্ষা করেছে, সেটা মোটাদাগে হলেও আলোচনার দাবি রাখে। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, ভারত তিন মাসের কথা বলে পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালু করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই তিন মাস পর বাঁধ বন্ধ হওয়ার কথা। পরবর্তীতে আলোচনা-সমঝোতার ভিত্তিতে আবার তা চালু হতে পারতো। কিন্তু তা আর হয়নি। সেই পরীক্ষামূলক চালু এখনো বহাল আছে। ১৯৭৪ সালে দু’দেশের মধ্যে সীমানা সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছিল। ওই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ভূমি ছাড় দিলেও বাংলাদেশের প্রাপ্য বাংলাদেশ বহুদিন পায়নি। ক’ বছর আগে ছিটমহল বিনিময় হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। বাংলাদেশ তৎক্ষণাৎ চুক্তি বাস্তবায়ন করলেও ভারত সেটা বছরের বছর ঝুলিয়ে রাখে।
অভিন্ন নদীর পানি বন্টন সমস্যার কোনো সমাধান আজ অবধি হয়নি। অভিন্ন নদীর উজানের দেশ ভাটির দেশের ক্ষতি হয় বা হতে পারে, এমন কিছু করার অধিকার রাখে না। এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনের এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। অথচ ভারত তার এই নিকটতম প্রতিবেশীর স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করেই অভিন্ন বিভিন্ন নদীতে বাঁধ, গ্রোয়েন ও স্পার নির্মণ এবং নির্বিচারে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এতে শুকনো মওসুমে বাংলাদেশ মারাত্মক পানিশূণ্যতার শিকার হচ্ছে। এর কৃষি, শিল্প, ভূমি, প্রকৃতি ও পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। নদীতে পানি না থাকায় নদী শুধু মরে যাচ্ছে না, এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে একদিকে মরু, অন্যদিকে লবণাক্ততার বিস্তার ঘটছে। আবার বর্ষায় বন্যা ও নদীভাঙনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশ। এবারের কথাই ধরা যাক। এবার দীর্ঘ বন্যার মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। এখন পঞ্চম দফা বন্যা চলছে। ইতোমধ্যে বন্যায় ফসলহানি হয়েছে, বাড়িঘর ভেঙেছে, নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে আরো বাড়ি ঘর, ধর্মীয় স্থাপনা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। এমনিতেই এবার বৃষ্টিপাত একটু বেশি। কিন্তু সেটা বন্যার প্রধান কারণ নয়। প্রধান কারণ হলো ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢল। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, ভারত অভিন্ন নদীতে দেয়া বিভিন্ন বাঁধের গেট একযোগে খুলে দিয়ে পানি বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। অথচ অতীতের মতো এবারও বাঁধ খুলে দেয়ার আগাম তথ্য বাংলাদেশকে দেয়নি। এ ব্যাপারে আগেই তথ্য দেয়ার সমঝোতা আছে দু’ দেশের মধ্যে, ভারত যার বিন্দুমাত্র মূল্য দেয় না। অন্যদিকে এ পর্যন্ত কেবলমাত্র গঙ্গার পানিবণ্টন সম্পর্কিত একটি চুক্তি আছে। এটাই তো স্বাভাবিক, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ তার পানির হিস্যা পাবে এবং তা দিতে ভারত ন্যায়ত বাধ্য থাকবে। অথচ এই চুক্তি মোতাবেক পানি বাংলাদেশ কখনোই পায় না। যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক পর্যন্ত বছরের পর বছর হয় না ভারতের অনীহার কারণে। কথা না রাখার আর একটি নজির তিস্তার পানি চুক্তি না হওয়া। সেই কংগ্রেস সরকার থেকে এই মোদি সরকার পর্যন্ত বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তিস্তার পানি চুক্তি হবে। কিন্তু আজো হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের অমতের অজুহাতে তিস্তা চুক্তি ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। চুক্তি হবে, এটা আর এখন এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে না।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রাণঘাতী সীমান্ত বলে অভিহিত করা হয়। এই সীমান্তে প্রায় এমন কোনো দিন নেই, যেদিন ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশীদের হত্যা ও অপহরণ তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন, অবৈধ অনুপ্রবেশ, গুলিবর্ষণ, অরাজগতা ও লুটপাট না করে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে চলতি বছরের আট মাসে বিএসএফ’র হাতে ৩৯ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাবে, গত ১৪ বছরে সীমান্তে বাংলাদেশী নিহত হয়েছে অন্তত এক হাজার। সীমান্তের বাস্তবতা ও তথ্যাদি থেকে একথাই বলতে হয়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে বাংলাদেশী হত্যার মৃগয়া ক্ষেত্রে পরিণত করেছে বিএসএফ। এখানেও ভারত কথা দিয়ে কথা রাখেনি। বিজিবি-বিএসএফ পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে সীমান্তহত্যা নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। প্রতিটি কথাবার্তাতেই ভারতের তরফ থেকে সীমান্তহত্যা শূণ্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কখনোই দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলনে পুরানো আশ্বাসই পুর্নব্যক্ত করেছে ভারতীয় পক্ষ। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার, ভারতের সঙ্গে আরো কয়েকটি দেশের সীমান্ত রয়েছে। ওইসব সীমান্তে কিন্তু বিএসএফ এরূপ বাড়াবাড়ি করে না। চীন-পাকিস্তান সীমান্তে তো বটেই, এমনকি নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, সীমান্তেও আনফেয়ার কিছু করার সাহস দেখায় না বিএসএফ। বিশ্লেষকদের অনেকে বলে থাকেন, বাংলাদেশের ভারতনীতিই বিএসএফকে এতটা বেপরোয়া করে তুলেছে। ভারতকে দিয়েছে বাংলাদেশকে উপেক্ষা-অবহেলা করার সাহস।
বাংলাদেশ ও ভারত সরকার প্রায় একই ভাষায়, একই সুরে বলে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। দু’দেশ এখন সোনালী সম্পর্ক উপভোগ করছে। আদৌ কি তাই? ভারত এটা বলতে পারে। কারণ, সে এ পর্যন্ত যা কিছু চেয়েছে, বাংলাদেশ তাই-ই স্বত:স্ফূর্তভাবে তাকে দিয়েছে। বিনিময়ে কিছুই পায়নি কথা ও প্রতিশ্রুতি ছাড়া। বাংলাদেশ ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চায় পরিণত হয়েছে, যে দুধ না পেয়েও নাচে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দেয়া ও নেয়ার ওপর নির্ভরশীল। একদেশ দেবে, অন্যদেশ শুধুই নেবে, বিনিময়ে কিছু দেবে না, তা হতে পারে না। একতরফা সম্পর্ক কোনোদিনই টেকসই হয় না।
ভারত এমন এক অহংকারী ও আত্মকেন্দ্রিক প্রতিবেশী, যার সঙ্গে তার প্রতিবেশীদের সহৃদয় ও আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠা অসম্ভব। এর প্রমাণ এই যে, বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গেই তার সম্পর্ক ভালো নেই। চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে তার বৈরি সম্পর্ক মাঝে-মধ্যেই সংঘাতমূলক হয়ে ওঠে। একদা শ্রীলংকার সঙ্গে গভীর সখ্য ... থাকলেও এখন আর তেমনটি নেই। নেপাল ভুটানের অবস্থা এমন ছিল যে, ভারত ছাড়া তারা কিছুই বুঝতো না। এখন আর সেদিন নেই। নেপাল তো ইদানিং ভারতকে তোয়াক্কাই করছে না। বাংলাদেশের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্কের কারণ স্বয়ং বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সম্পর্ক রক্ষা করে চলছে। রক্ষা করতে না চাইলে অনেক আগেই তা ভেঙ্গে যেত। প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের এই নাজুক সম্পর্ক কেন সৃষ্টি হলো, তার উত্তর ভারতের প্রতিবেশীনীতির মধ্যেই আছে।
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে এক ধরনের টানাপোড়ন শুরু হয়েছে যা পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। এজন্য বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের কথা দিয়ে কথা না রাখা যেমন দায়ী তেমনি মোদি সরকারের কিছু পদক্ষেপ এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসাবে যথোচিত সম্মান ও গুরুত্ব না দেয়ার প্রবণতাও কম দায়ী নয়। মোদি সরকার ভারতীয় মুসলমানদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ববিরোধী এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা মুসলমান প্রধান দেশ বাংলাদেশের পক্ষে মেনে নেয়া বা সমর্থন করা সম্ভব নয়। সবচেয়ে বড়কথা, তার কোনো কোনো পদক্ষেপে সরাসরি বাংলাদেশবিরোধী। ‘আসামে যাদের নাগরিকত্ব থাকবে না, তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হবে। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থের হুমকি, তাদের বাংলাদেশেই পাঠিয়ে দেয়া হবে, বিজেপি নেতাদের এ ধরনের কথাবার্তা বাংলাদেশের পক্ষে বরদাশত করা কঠিন। সব মিলে বলা যায়, ভারতের আচরণে বাংলাদেশ বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে স্পষ্টই বলা হয়েছে, ভারতের আচরণের কারণেই দু’ দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। ওই বৈঠকে পেঁয়াজকান্ড ও সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করা হয়। ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক মহলও মনে করে, মোদি সরকারের ভুল নীতি ও পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। একই কারণে অন্য প্রতিবেশীরাও দূরে সরে গেছে। এভাবে প্রতিবেশী বন্ধু হারানো ভারতের জন্য ভয়ংকর।
বিষয়টি ভারতের রাজনীতিক ও নীতিনির্ধারক মহলকে গুরুত্বসহকারে আমলে নিতে হবে। দীর্ঘদিনের লাগাতার প্রচেষ্টায় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে বলে এর সুরক্ষায় সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হয়। সম্পর্ক গড়া কঠিন; ভাঙা সহজ। একবার ভেঙ্গে গেলে জোড়ালাগা হয়ে পড়ে দুঃসাধ্য। সার্বভৌম সমতাভিত্তিক নীতি ও সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণই দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ ও টেকসই সম্পর্কের ভিত্তি। ভারতকে তার ছোট-বড় সকল প্রতিবেশীকে যথাযোগ্য মর্যাদা ও সম্মান দিতে হবে। নিজের স্বার্থের পাশাপাশি তাদের স্বার্থও দেখাতে হবে। কথা দিলে সে কথা রাখতে হবে। তাদের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলেই বন্ধু হারানোর ভয় ও আশংকা থাকবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন