সিলেটে থামছে না ধর্ষণ। এক ঘটনা রেশ না কাটতেই প্রকাশ পাচ্ছে আরেক ধর্ষণের খবর। চারিদিকে যেন ধর্ষণের চাঞ্চল্য। যদিও সামাজিক ও আইনী বহুবিধ জটিলায় ধর্ষণের নির্মমতা গোপন রাখছেন অনেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ধর্ষণের সাথে জড়িতরা বেশিরভাই রাজনীতিক ও সামাজিক পরিচয়ে বেপরোয়া।
জানা গেছে, এমসি কলেজে গৃহবধূ গণধর্ষণের পর পৃথক পৃথক ঘটনায় গত ২ দিনের ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলায় সিলেট মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছে পুলিশ। অপরদিকে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত এক জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আদালতে। এছাড়া ঘরে ঢুকে ৫ সন্তানের এক জননীকে ধর্ষণের দায়ের গ্রেফতারকৃতরা করা হয়েছে ২ জনকে। অপরদিকে, ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের বিশ^নাথে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক কিশোরী।
স্থানীয়রা জানান, সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রবাসে ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে গৃহবধূ গণধর্ষণ ঘটনার পরও নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক কিশোরীকে (১৬) ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন রাকিব হোসেন রিজু (২০) নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী। ধর্ষণের পর প্রথমে বিষয়টি আপোষে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। আপোষ না হওয়ায় শুক্রবার রাতে কিশোরীরা মা বাদী হয়ে নগরীর কোতোয়ালি থানায় দায়ের করেন মামলা। ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় র্যাবের হাতে আটক হয় রিজু। ধর্ষণকারী রিজু দাড়িয়াপাড়ায় এলাকার আব্দুল কাইয়ুমের পূত্র। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার জাউয়া বাজারে। অপরদিকে ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে রোববার ভোরে সিলেট শহরতলির কালাপাহাড় এলাকা থেকে একজনকে এবং সুনামগঞ্জের আক্তাপাড়া এলাকা থেকে অপরজনকে গ্রেফতার করে এসএমপির জালালাবাদ থানা পুলিশ। জালালাবাদ থানা এলাকার রায়েরগাঁওয়ের নাসির উদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন (২২) ও একই এলাকার তজম্মুল আলীর ছেলে মো. এখলাছ মিয়া (২০)।
এদিকে, এমসি কলেজে ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ ঘটনার ২ দিন পূর্বে ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর শিবগঞ্জ লামাপাড়ার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তৃতীয় তলার পরিত্যক্ত কক্ষে ১৬ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে স্থানীয় যুবক মোহাম্মদ আলী (১৮)। এ ঘটনায় শনিবার মেয়েটির মা বাদী হয়ে মামলা করেন এসএমপির শাহপরাণ (রহ.) থানায়। পরে একই দিন লামাপাড়া থেকে পুলিশ মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতার করে। আলী লামাপাড়ার সাকু মিয়ার কলোনির বাসিন্দা সোহেল মিয়ার ছেলে। তাকে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে সে ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
এছাড়া, ৫ সন্তানের এক জননীকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করা হয় নগরীর শামীমাবাদ এলাকায়। এলাকার ৪ নম্বর রোডের এক বাসায় হয়েছে এ ধর্ষণ ঘটনা। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত দিলওয়ার ও তার সহযোগী হারুন মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপরদিকে, ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নে মাওলানা রুহুল আমিন শাহার (৩৫) নামে এক ইমামের বিরুদ্ধে কিশোরীকে (১৬) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পরে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইমামের সহকর্মী মুয়াজ্জিনসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ধর্ষণের এ ভয়াবহতা প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক ( সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্থানীয় দায়িত্বশীল পুলিশ বাহিনীর প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে নির্যাতিতরা থানায় গিয়ে এসব ঘটনায় অভিযোগ দিতে বাধাগ্রস্থ হয়। এছাড়া মেয়ে বা নারীদের জন্য নারী বান্ধব পুলিশ নেই। তিনি বলেন, ধর্ষণের এ ব্যাপকতার জন্য দায়ী নৈতিক অবক্ষয়, দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির অভাব। শাস্তির ঘটনা দ্রুত ও প্রকাশ্যে ঘটলে এহেন নির্মমতা কমে যেত বলে মনে করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন