ভারতের আসাম রাজ্যের সকল মাদরাসা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার আসামের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঘোষণা দিয়ে বলেন, রাজ্য সরকার আসামের সমস্ত সরকারি মাদরাসা বন্ধ করে দেবে কারণ, জনসাধারণের অর্থ দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়ার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি জানান, আগামী মাসে এই সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
মাদরাসা বন্ধ করা হলেও সরকারি ‘টোল’গুলো (হিন্দু ধর্ম শিক্ষা দেয়ার প্রতিষ্ঠান) বন্ধ করার বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। গত ফেব্রæয়ারিতে শর্মা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, সরকার কেবলমাত্র সরকার পরিচালিত মাদরাসাগুলি নয়, সরকারি ‘টোল’ বন্ধ করার পরিকল্পনাও করেছে। তারপরে তিনি এই সিদ্ধান্তকে ন্যায্য দাবি করে বলেন, ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে সরকারি তহবিল দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া যায় না। তবে বৃহস্পতিবার শর্মা বলেন, ‘কোনও তাৎপর্যপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারি অর্থায়নে কাজ করতে দেয়া হবে না। আমরা এই বিষয়ে নভেম্বর মাসে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করব। তবে বেসরকারিভাবে চালিত মাদরাসাগুলি সম্পর্কে আমাদের কিছু বলার নেই।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি টোলের বিষয়টি আলাদা। টোলগুলোর বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে এগুলি স্বচ্ছ নয়। আমরা এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি।’
এই বক্তব্যের পরপরই, এআইইউডিএফ সুপ্রিমো এবং লোকসভার সাংসদ বদরুদ্দীন আজমল বলেন, ‘বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার যদি সরকার পরিচালিত মাদরাসাগুলি বন্ধ করে দেয় তবে তার দল আগামী বছরের শুরুর দিকে বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পরে সেগুলো আবার খুলে দেবে।’ তিনি বলেন, ‘আপনি মাদরাসা বন্ধ করতে পারবেন না। বর্তমান সরকার যদি এগুলি জোর করে বন্ধ করে দেয় তবে আমরা ক্ষমতায় আসার পরে, ৫০-৬০ বছরের পুরানো এই মাদরাসাগুলো পুনরায় চালু করার বিষয়ে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেব।’
প্রসঙ্গত, আসামে ৬১৪ টি সরকারি ও প্রায় ৯০০ টি বেসরকারি মাদরাসা রয়েছে। যার প্রায় সবই জমিয়ত উলামা দ্বারা পরিচালিত হয়, অথচ প্রায় ১০০ টি সরকারি সংস্কৃত টোল এবং ৫০০ এর বেশি বেসরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। রাজ্য মাদরাসাগুলিতে সরকার বার্ষিক প্রায় তিন কোটি থেকে চার কোটি রুপি এবং সংস্কৃত টোলগুলিতে বছরে প্রায় এক কোটি রুপি ব্যয় করে। দু’বছর আগে, রাজ্য সরকার দুটি নিয়ন্ত্রণকারী বোর্ড - রাজ্য মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এবং আসাম সংস্কৃত বোর্ডকে বাতিল করে দেয়। এরপরে, মাদরাসাগুলোকে আসামের মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড (শেবা) এবং সংস্কৃত টোলগুলোকে কুমার ভাস্কর ভার্মা সংস্কৃত ও প্রাচীন বিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের পেছনে সরকারের যুক্তি ছিল, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করে মূল স্রোতে ফিরে আসতে পারবে। সূত্র : টিওআই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন