শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

মোবাইলে উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নামে প্রতারণা

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০২০, ৯:৩৭ এএম

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট উপকূল কলেজের স্নাতক (পাস) অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মোবাইলে উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিনব ফাঁদ পেতেছে একটি চক্র। এই চক্রের মূল টার্গেট শিক্ষার্থীদের বিকাশ অ্যাকাউন্টের টাকা হাতিয়ে নেওয়া।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চক্রের সদস্যরা প্রথমে শিক্ষার্থীদের মোবাইলে কল দিয়ে নাম-পরিচয় নিশ্চিত হয়। এরপর তাদের একটি বিকাশ নম্বর এবং পিন নম্বর দিতে বলে। যে শিক্ষার্থীরা সরল বিশ্বাসে পিন নম্বর বলে দেয়, তাদের বিকাশে থাকা টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। এর মধ্যে এক শিক্ষার্থী পাঁচ হাজার খুইয়েছেন। তবে কেউ কেউ লজ্জায় টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করছেন না।


কীভাবে এই চক্র প্রতারণা করছে, সে বিষয়ে এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল সোমবার সমকালকে বলেন, মোবাইলে অজানা নম্বর থেকে ফোন করে দ্বিগুণ পরিমাণ উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার বিষয়ে কথা বলে তারা। তার সঙ্গে কথা শুরু হয়েছিল এভাবে- 'হ্যালো, আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বলছি। তুমি কি হাজিরহাট উপকূল কলেজের ডিগ্রির শিক্ষার্থী? তোমার নাম কী? বাবার নাম?' পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর অধ্যাপক আসাদুজ্জামান পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি বলেন, 'তুমি তো উপবৃত্তির তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থী। চার হাজার ৯০০ টাকা করে দুবার উপবৃত্তি পেয়েছ। করোনাভাইরাসের কারণে সরকার এবার তোমাকে দ্বিগুণ টাকা দেবে। এই টাকা এখন আমার কাছে রয়েছে। তোমার নম্বরে একটি এসএমএস পাঠিয়েছি। এসএমএসে পাঠানো সংখ্যার সঙ্গে তোমার বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর যোগ করে আমাকে বলো, আমি তোমার নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি।' হাজিরহাট উপকূল কলেজের আরও কয়েক শিক্ষার্থী প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

এমন আরেকজন জানান, শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তার কাছে বিকাশের পিন নম্বর চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। প্রতারক চক্র কীভাবে শিক্ষার্থীদের নাম-পরিচয় ও ফোন নম্বর পেয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের বক্তব্য, উপবৃত্তির টাকা বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অ্যাকাউন্টে পেয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীদের তথ্য কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং উপবৃত্তির সঙ্গে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়া কারও জানার কথা নয়। তাহলে প্রতারক
চক্র শিক্ষার্থীদের পরিচয় ও ফোন নম্বর পাচ্ছে কী করে?

হাজিরহাট উপকূল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, স্নাতক (পাস) প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী প্রত্যেকে বছরে চার হাজার ৯০০ টাকা করে উপবৃত্তি বিকাশের মাধ্যমে নিজেদের মোবাইলে পেয়ে আসছেন। এ ক্ষেত্রে তাদের আগে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে নাম-পরিচয় ও ফোন নম্বর জমা দিতে হয়। সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানে এসব তথ্য চলে যায়।

হাজিরহাট উপকূল কলেজের অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামানও এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম সমকালকে বলেন, সরকারের পক্ষে বিকাশ শুধু শিক্ষার্থীর অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে দেয়। যেসব অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হয়, তা সরাসরি বিকাশ প্রতিনিধিরা খুলে দেন। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় কীভাবে টাকা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর পরও কেউ ফোন দিয়ে ভিন্ন কিছু বললে সেটা বুঝতে হবে প্রতারণা। সব পর্যায়ে সচেতনতার মাধ্যমে এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন