মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর থেকে সারা বিশ্বের মানুষের দৃষ্টি ছিল গণমাধ্যমের দিকে। সবাই নির্বাচনের ফলাফল জানতে উদগ্রীব। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো নিজেদের মতো করে ভোটের ফলাফলের খবর প্রচার করছে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের মতো করেই বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি একের পর একই ফেইক বক্তব্য দিয়ে নির্বাচনী ফলাফলের খবরের মতোই ‘নিজেই খবর’ হয়েছে। যা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এ জন্য মার্কিন নির্বাচনকে আইনি অনিশ্চয়তা এবং জনগণের বিশ্বাসকে দুর্বল করার নজিরবিহীন প্রচেষ্টা কলঙ্কিত করেছে বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মিশন দ্য অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোÐঅপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)। নির্বাচনে পরাজয়ের গন্ধ পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে ফেইক বক্তব্য দেয়া শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোটের পর তার করা টুইট ও ভাষণের সত্যতা যাচাই করে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের পর বলা ট্রাম্পের অধিকাংশ কথাই ছিল ফেইক (ভুল)। এটা এক ধরনের মিথ্যাচার। আর এর ভিত্তি তিনি কয়েক মাস আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছিলেন।
নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকেই তিনি মেইল ভোটিং নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। নির্বাচনের পরও সে দাবি অব্যাহত রেখেছেন। চ‚ড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা না করা হলেও তিনি নিজেকে জয়ী ঘোষণা করেছেন। তার সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা জন বোল্টনও ট্রাম্পের এমন আচরণকে চ‚ড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে আখ্যা দিয়েছেন।
সিএনএন বলেছে, নির্বাচন শেষ হওয়ার পরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্প যে অসততা দেখালেন, সে কৌশলের ভিত্তি বছরজুড়েই স্থাপন করে রেখেছিলেন তিনি। বেশ কয়েকবার তিনি নির্বাচন ঘিরে মিথ্যা দাবি করেছেন। মাস কয়েক আগে থেকেই মেইল-ইন ব্যালটকে জালিয়াতি বলে চিত্রিত করতে শুরু করেছিলেন।
ট্রাম্প অভিযোগ তুলে বলেছেন, তাকে অপছন্দ করেন এমন ডেমোক্র্যাট গভর্নররা ভোট গণনার দায়িত্বে আছেন। তিনি মিথ্যা অভিযোগ তুলে আরো বলেছেন, নির্বাচনের পরের দিন ভোট গণনার স্বাভাবিক অনুশীলন আইনবহির্ভ‚ত ও অবৈধ। কিন্তু ট্রাম্পের এসব কথা ভিত্তিহীন। এ ধরনের আরও অনেক মিথ্যাচার তিনি করেছেন নানা সময়ে। নির্বাচনের দিন এসব মিথ্যাচারের প‚র্ণরুপে দেখিয়েছেন।
ট্রাম্প গত বুধবার সকাল থেকেই তার ফেইক পরিকল্পনা কার্যকর করতে শুরু করেন। হোয়াইট হাউসে তিনি বক্তব্য দিয়ে নিজের জয় দাবি করেন। এমনকি নির্বাচনে প্রতারণার অভিযোগও তোলেন। ব্যাটল গ্রাউন্ড কিছু রাজ্যের চ‚ড়ান্ত ফল প্রকাশ না হলেও নিজের জয়ের ঘোষণা দেন তিনি। বুধবার মধ্যরাতে হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে দেওয়া ভাষণে নিজের জয়ের ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, সত্যি বলছি, আমরা এই নির্বাচনে জিতেছি।
তবে কোনো ধরনের প্রমাণ উপস্থাপন ছাড়াই নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। এরপর তিনি টুইটারে নানা ফেইক (মিথ্যা) দাবি করেছেন। কিন্তু তিনি সারা দিন যা বলেছেন তার অধিকাংশই ভুল ছিল বলে দাবি করেছে সিএনএন। টুইটারে ট্রাম্প যেসব টুইট করেছেন, তার মধ্যে ৬টিতে সতর্কতামূলক লেবেল জুড়ে দিয়েছিল টুইটার কর্তৃপক্ষ।
ট্রাম্প একটি টুইটে বলেছিলেন, পেনসিলভানিয়া, মিশিগানসহ অন্য কয়েকটি রাজ্যে পাঁচ লাখের বেশি ভোটে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। তাকে ধরতে বিরোধীরা চেষ্টা করছে।
বাস্তবে কিন্তু তখনো অনেক কাউন্টিতে ভোট গণনা চলছিল। মেইল-ইন ভোট বেশির ভাগ ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে গেছে, যা নির্বাচনের পরদিন কিছু রাজ্যে গণনা করা হচ্ছিল। ট্রাম্প আরেক টুইটে বলেন, বিস্ময়কর ব্যালট এসে তার প্রাথমিক এগিয়ে থাকাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।
ট্রাম্পের আরেক টুইটে বলা হয়, আমরা বড় ব্যবধানে জিততে যাচ্ছি। তারা নির্বাচন চুরি করার চেষ্টা করছে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আর ভোট দেয়া যাবে না।
ট্রাম্পের এ দাবিও পুরোপুরি মিথ্যা। কেউ কিছু চুরি করার চেষ্টা করেনি। ভোট শেষ হওয়ার পর ভোট গ্রহণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বুধবার বিকেলে ট্রাম্প একটি প্রতারণামূলক টুইট করে পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনা নিজেদের বলে দাবি করেন। এ ছাড়া মিশিগানও নিজের বলে দাবি করার পাশাপাশি সেখানে গোপন ভোট জমা হওয়ার অভিযোগ তোলেন। সিএনএন ও অন্যান্য মার্কিন সংবাদমাধ্যমের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মিশিগানে জিততে চলেছেন বাইডেন। ট্রাম্পের দাবি করা অন্য রাজ্যগুলোতেও লড়াই চলছে। ট্রাম্প যে গোপনে ব্যাপক ব্যালট ফেলে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন, তা ঠিক নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন