চট্টগ্রামে যুবলীগ এখন আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা। নানা উদ্যোগেও বাগে আনা যাচ্ছে না বেপরোয়া যুবলীগ নেতা-কর্মীদের। নানা গ্রুপে বিভক্ত মহানগর ও জেলা যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। পাড়ায় মহল্লায় দলীয় কোন্দলের জেরে সংঘাত-সহিংসতা, খুনোখুনি, টেন্ডারবাজির ঘটনায় বিব্রত সরকারি দলের মন্ত্রী, এমপি, নেতারা।
কেন্দ্রীয় যুবলীগে শুদ্ধি অভিযানের পরও চট্টগ্রামে এর কোন প্রভাব পড়েনি। যুবলীগের নামে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং তৈরি, অস্ত্রবাজিসহ নানা অপকর্ম অব্যাহত আছে। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগেও নেতাদের মধ্যে নানা মেরুকরণ রয়েছে। তবে তার তেমন প্রভাব নেই দলীয় কার্যক্রমে। দলীয় ইস্যুতে এককাতারে আসছেন নেতারা।
অথচ উল্টোচিত্র যুবলীগে। নিজেদের মধ্যে কলহ বিরোধে জড়িত দলের নেতা-কর্মীরা। নিজেদের সভা-সমাবেশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশেও লড়াইয়ে লিপ্ত হচ্ছেন যুবলীগ নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে মহানগর ও জেলা নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতারাও ত্যাক্ত-বিরক্ত, বিব্রত। সম্মেলন সামনে রেখে নেতাদের মধ্যে কলহ-বিরোধ দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও এক কাতারে হতে পারেনি আওয়ামী লীগের এ অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মহানগরীতে তিন গ্রুপে পালিত হয়েছে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি। উত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ১৪৪ ধারা জারি করতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। মীরসরাইয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে যুবলীগে ঐক্যের বদলে অনৈক্য এবং বিভেদ আরও প্রকট হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তৃণমূলেও। নগর যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের গ্রুপিং ও বিভক্তি প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডেও বিস্তৃত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকা, আবার ত্যাগী এবং যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন না করায় সংগঠনের এই বেহাল অবস্থা বলে মনে করেন মাঠ পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরা।
সর্বশেষ নগরীর আগ্রাবাদে সংর্ঘষে জড়ায় যুবলীগের দুই গ্রুপ। গত বৃহস্পতিবার রাতের ওই সংঘর্ষে গুরুতর আহত মারুফ চৌধুরী মিন্টু (৩৫) নামে একজন গত শুক্রবার রাতে মারা যান। চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগে কোন্দল দীর্ঘদিন ধরে। অভিযোগ রয়েছে এ কোন্দলে ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছেন কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা। মহানগর যুবলীগ মূলত দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। একপক্ষ চট্টলবীর মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। অন্যপক্ষ মহানগর সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
দলীয় সূত্র জানায়, মহিউদ্দিন চৌধুরীর গ্রুপে ছিলেন মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম দিদার ও মাহবুবুল হক সুমন। অপরদিকে আ জ ম নাছির গ্রুপে নগর আওয়ামী যুবলীগ সদস্য সাবেক কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, নঈম উদ্দিন খান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান ফেরদৌস, সাবেক ছাত্রনেতা দিদারুল আলম, শাখাওয়াত হোসেন সাকু, সুমন দেবনাথসহ বেশ কয়েকজন।
সম্প্রতি মহিউদ্দীন বাচ্চুর নেতৃত্বে আলাদা একটি গ্রুপ ও ৪ যুগ্ম আহ্বায়কের নেতৃত্বে আরও একটি উপ-গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় কোন্দলের জেরে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনাও ঘটে। টেন্ডারবাজি নিয়ে সিআরবির জোড়াখুনের নেপথ্যেও ছিল যুবলীগের দুই গ্রুপের কোন্দল। জানা যায়, মহানগর আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা নিজেদের দল ভারী করতে বিভিন্ন উপ-গ্রুপকে কাছে টানছেন। আধিপত্য বিস্তারে যুবলীগ নেতারাও নানা অপকর্ম করছেন।
কোন কোন নেতার বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং গড়ে তোলারও অভিযোগ রয়েছে। যুবক-কিশোরদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। যুবলীগের নামে পেশাদার অপরাধী, মাদক কারবারিরাও কোন কোন এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। মহানগরীর পাশাপাশি চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগেও কলহ-বিরোধ চরমে। মূল দল আওয়ামী লীগে বিরোধ না থাকলেও যুবলীগের বিরোধে প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু এলাকায় যুবলীগ নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। তবে আমরা সবাইকে এক কাতারে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। উত্তর চট্টগ্রামে যুবলীগে তেমন বিরোধ নেই বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন