শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হলেই সম্পর্ক গভীর হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

মিয়ানমারে গত ৮ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেনাশাসনোত্তর এটা দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচন। প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালে। তাতে অং সান সুচির দল-এনএলডি জয় অর্জন করে। এবারও তাই-ই হয়েছে প্রত্যাশা অনুযায়ী। এবার কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট ও রাজ্যসভার নির্বাচন হয়েছে একই সাথে। এ নির্বাচন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য হচ্ছে: কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের আসন সংখ্যা-৬৪২টি। নিবন্ধিত ভোটার ৩.৭০ কোটির বেশি। ৯১টি জাতীয় ও আঞ্চলিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ‘রাজধানী নেপিদোসহ সাতটি রাজ্য ও সাতটি অঞ্চলের একযোগে ভোট হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর এলাকা এ নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়েছে, যার মোট ভোটারের সংখ্যা ২৬ লাখ। এ নির্বাচনে ১,১১৭টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে ২৬০ স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ প্রায় ৫,৬৩৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে ১,৫৬৫ জন নিম্ন কক্ষের, ৭৭৯ জন উচ্চ কক্ষের। রাজ্য সংসদগুলোর জন্য ৩,১১২ ও জাতিগত সংখ্যালঘু আসনের জন্য ১৮৩ জন। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এনএলডির প্রার্থী ১,১০৬ জন ও প্রধান বিরোধী দল ইউএসডিপির প্রার্থী ১০৮৯ জন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে নিম্ন কক্ষে ২২১টি ও উচ্চ কক্ষে ১১৩টি আসন প্রয়োজন। বিজয়ী সংসদ সদস্যরা দেশটির প্রেসিডেন্ট ও দুজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন।’ মিয়ানমারের বৃহত্তম নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা- পিপলস অ্যালায়েন্স ফর ক্রেডিবল ইলেকশন জানিয়েছে, ‘কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ছিল।’ অবশ্য, নির্বাচনের আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলে, ‘সেনাবাহিনীর জন্য আসন সংরক্ষিত রেখে, গণমাধ্যমের অবাধ চলাচলের সুযোগ না দিয়ে ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে যে নির্বাচন করা হচ্ছে, তা অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না।’

যা’হোক, গত ১৩ নভেম্বর ঘোষিত ফল মতে, ‘৪৩৪টি আসনের মধ্যে সরকারি দল- এনএলডি ৩৬৮টি ও প্রধান বিরোধীদল-ইউএসডিপি ২৪টি আসনে জয়ী হয়েছে। ৪২টি আসনের ফল ঘোষণা হয়নি। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৩২২টি আসন।’ অনুমেয় যে, এনএলডি ২০১৫ সালের চেয়েও এবার বেশি আসন পাবে। তখন পেয়েছিল ২৯০টি আসন। এবার নির্বাচনে এনএলডির আরো বড় জয় হয়েছে। তবুও দলটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করার অঙ্গীকার করেছে। সে মর্মে দলটি ৩৯টি জাতিগত সংখ্যালঘু দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে বলেছেন এনএলডির মুখপাত্র মনিওয়া অং শিন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ অনেক দেশ এই নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে। বিজয়োত্তর এনএলডির নেতা-কর্মীরা আনন্দ-উল্লাসে মত্ত হয়েছে। অন্যদিকে, নির্বাচনের ৭ দিন পরও পূর্ণাঙ্গ ফল ঘোষিত না হওয়ায় প্রতীয়মান হয়, দেশটির নির্বাচন ব্যবস্থা আধুনিক নয়! যা’হোক, ইউএসডিপি গত ১১ নভেম্বর এ নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি করেছে। এ জন্য তারা দেশটির সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেশটির রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ প্রভাব আবার তৈরি হয় কি না, এমন জল্পনা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ২০০৯ সালে নির্বাচন হওয়ার পরও তা বাতিল করেছিল সেনাবাহিনী। বর্তমানেও যদি তা হয়, তাহলে গণতন্ত্র হত্যার দায় আর্মি ও ইউএসডিপির উপর বর্তাবে।

নির্বাচনের ফল মতে, রাখাইন রাজ্যে জয়ী হয়েছে সংখ্যালঘু রাখাইনদের নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল- এএনপি। রাখাইনে অর্ধেকের বেশি আসন ভোটের বাইরে থাকায় ২৮টি আসনে ভোট হয়। তাতে এএনপি জয়ী হয়েছে কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের ৮টি আর রাজ্য পার্লামেন্টের ৬টি আসনে। ফলে দলটি দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম দলে পরিণত হয়েছে। এএনপির জয়ীদের মধ্যে দুজন মুসলিম রয়েছেন। তারা হলেন: সেতু মায়াং ও ডো উয়িন মায়া। ২০১৫ সালের নির্বাচনে কোনো মুসলিম প্রার্থী জয়ী হননি। মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার ৫% মুসলমান। তাদের বেশিরভাগই বাস করেন রাখাইনে। সেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। তারা রোহিঙ্গা বলে খ্যাত। তারা চরম অবহেলিত, নিষ্পেষিত ও নির্যাতিত দীর্ঘদিন যাবত। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। আর এবার নির্বাচনে তাদের ভোটদান থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বতিা করতে দেয়া হয়নি। অথচ তাদের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক রাজনীতিক রয়েছেন। তাই জাতিসংঘের মহাসচিব এ নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলে মন্তব্য করেছেন। মানবাধিকার সংস্থা বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকে এ নির্বাচনকে ‘বর্ণবাদী নির্বাচন’ বলে অভিহিত করেছে। উপরন্তু সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, সুচির সরকার নির্বাচনের প্রাক্কালে ২২৯ জন রাজনীতিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। এছাড়া, ৫৮৪ জন রাজবন্দি হিসেবে কারাগারে বিচারের অপেক্ষায় আছেন। এই অবস্থায় মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা জরুরি বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন দফতরের এশিয়া বিষয়ক মন্ত্রী নাইজেল অ্যাডামস। তিনি আরও বলেন, ‘যাতে প্রত্যেকে মিয়ানমারের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতে সম্পূর্ণরূপে অংশ নিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে।’ মিয়ানমারে মুসলমানের ন্যায় অন্য সংখ্যালঘুরাও চরম নিষ্পেষণ ও নির্যাতনের শিকার বহুদিন যাবত। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা সশস্ত্র আন্দোলন করছে। দেশটিতে উগ্র বৌদ্ধদের উত্থান ঘটেছে।

উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে রাখাইনে পুনরায় রোহিঙ্গা নিধন শুরু হয়। তাদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে ধ্বংস করা হয়। অনেক নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা ও বহু নারীকে ধর্ষণ করা হয়। তাই প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ৭ লাখ (গত ৮০ দশক থেকে আছে আরও ৪ লাখ)। তারা বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিকত্ব ও পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান এবং পুনর্বাসন করার জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় বিশ্ব সম্প্রদায় চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তিও হয়েছে চীনের মধ্যস্থতায়। কিন্তু এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও দেশে ফেরত যায়নি নিরাপত্তার অভাবে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন এখনো চলছে। অনেকে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পালিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রে ও জঙ্গলে আটকা পড়ে অনেকেই মারা গেছে! তবুও তাদের দেশত্যাগ বন্ধ হয়নি। স¤প্রতিও বাংলাদেশে এসেছে অনেক রোহিঙ্গা। অথচ আগের প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য এ দেশের আর্থিক, পরিবেশ ও আইন শৃঙ্খলার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। উপরন্তু ১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করার জন্য দু’ হাজার কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে যেতে রোহিঙ্গাদের অনীহা ও জাতিসংঘের আপত্তির কারণে সরকার সেটা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। অপরদিকে, গণহত্যার জন্য আইসিজেতে মামলা হয়েছে। সর্বোপরি জাতিসংঘের তদন্তে বেশ কয়েকজন সেনার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। জাতিসংঘ একে ‘হলমার্কস অব জেনোসাইড’ বলে অভিহিত করেছে। অনেক দেশ অভিযুক্ত সেনাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আইসিজেতে সুচি মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সেনাদের পক্ষে কথা বলায় তার ভাবর্যাদা আরো ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ইতোমধ্যে তার বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার বাতিল করা হয়েছে। নোবেলও বাতিল করার জন্য প্রবল দাবী উঠেছিল। কিন্তু তার নিয়ম না থাকায় সেটা বহাল আছে।

মিয়ানমার ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন জেনারেল অং সান (সুচির বাবা)। তাই তিনি স্বাধীনতাত্তোর সামরিক সরকারের প্রেসিডেন্ট হন। তিনি বাম ঘেঁষা ও জাতীয়তাবাদী ছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে গুপ্তহত্যার শিকার হন আর সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। তাদের তত্ত্বাবধানে ১৯৯০ সালের ২৭ মে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে সুচির দল জয়ী হয়। কিন্তু সামরিক সরকার সে ফল অস্বীকার করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ‘স্টেট পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’ গঠন করেন এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করে। এই দীর্ঘ সময়ে দেশটি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। এর উন্নতির চরম ক্ষতি হয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন হয়।তাতে নেতৃত্ব দেন সুচি। এ অবস্থায় ২০১০ সালের শেষের দিকে দেশটি গণতন্ত্রের দিকে পা বাড়ায় এবং দীর্ঘ বন্দিত্ব থেকে সু চিকে মুক্তি দেওয়া হয়। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ইউএসডিপি জয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়। অবশ্য এনএলডি এ নির্বাচন বর্জন করে। ফলে নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ইত্যবসরে সুচি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেন এবং দেশটির শীর্ষ নেতায় পরিণত হন। তাই সেনা সমর্থিত সরকার ২০১১ সালের ৩০ মার্চ সংবিধান সংশোধন করে ‘সেনাবাহিনীর জন্য পার্লামেন্টের ২৫% আসন ও ৩টি মন্ত্রণালয় তথা প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র্র ও সীমান্ত রিজার্ভ এবং বিদেশি কোনো নাগরিক দেশটির প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না’ অন্তর্ভুক্ত করেন। ফলে সুচির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়। কারণ, তিনি দ্বৈত নাগরিক। এক বৃটিশের সঙ্গে বিবাহ হওয়ায় তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তার দুই ছেলেও ব্রিটিশ নাগরিক এবং সেখানেই থাকেন তারা। তাই সুচির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ বন্ধ এবং রাজনীতিতে আর্মির কর্তৃত্ব বহাল রাখার জন্যই সংবিধানে এই সংশোধনী আনা হয় বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

২০১৫ সালের ২ অক্টোবর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে এনএলডি নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করে। কিন্তু সংবিধান মতে সুচি প্রেসিডেন্ট হতে না পারায় তার জন্য ‘স্টেট কাউন্সিলর’ পদ সৃষ্টি এবং সে পদে সুচিকে নিযুক্ত করা হয়। ফলে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে মেকি গণতন্ত্র চালু রয়েছে মিয়ানমারে। দেশটির প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রধান বাধা সংবিধানের অগণতান্ত্রিক বিধান, যা বাতিল না করা পর্যন্ত দেশটিতে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না। কিন্তু এই বিধি বাতিল করতে পার্লামেন্টে ৭৫% আসন দরকার। কিন্তু ২৫% আসন সেনাদের জন্য রিজার্ভ আছে। উপরন্তু সেনা সমর্থিত ইউএসডিপিরও আসন রয়েছে। তাই সুচির সরকার সংবিধান সংশোধন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেও ব্যর্থ হয়েছে কিছুদিন আগে। স্বাভাবিক ব্যবস্থায় উক্ত বিধি বাতিল করা সম্ভব নয়। এটা বাতিল করার জন্য গণবিপ্লব দরকার। নতুবা প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না কখনোই। উপরন্তু দেশটির সার্বিক উন্নতিও হবে না। কারণ, সম্পদের বেশিরভাগের মালিক বর্তমান ও সাবেক সেনারা। তবুও বর্তমানে দেশটি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। ২০১৫ সালে বিশ্ব ব্যাংকের এই স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশের সাথে।

যা’হোক গত ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সচির দল বিজয়ী হওয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিনন্দন জানিয়ে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এর আগে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভারতকে সম্পৃক্ত করার কথা বলেছে। তাতে চীনের কোনো আপত্তি নেই বলে দেশটি জানিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারের সাথে চীন ও ভারতের মধুর সম্পর্ক বিরাজ করছে বহুদিন থেকেই। দু’টি দেশেরই স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বেশি। তবুও রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের জন্য দেশ দু’টিকে এক সাথে নিয়ে চেষ্টা করা প্রয়োজন। কারণ, দু’টি দেশই মিয়ানমারের পার্শ্ববর্তী দেশ এবং সম্পর্ক ভালো। তাই দেশ দু’টির প্রভাব রয়েছে মিয়ানমারের উপর। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের জন্য বিশ্ব স¤প্রদায়ের প্রতিও বেশ গুরুত্ব দিতে হবে আমাদের। পূর্ণ নাগরিকত্ব ও পূর্ণ নিরাপত্তাসহ রোহিঙ্গাদের ফেরত নিলে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। এ সম্পর্ক আরো নতুন মাত্রা পেতে পারে যখন দেশ দু’টি ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে ও এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবে। বাংলাদেশ এই দুই ক্ষেত্রে যুক্ত হওয়ার কাজ করছে। মিয়ানমার এ কাজটি করলেই দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা অতি সহজতর ও স্বল্পব্যয়ী হবে। তাই ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে ও এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য দু’দেশেরই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া দরকার। দু’দেশের সম্পর্কোন্নয়নে আর একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে, মিয়ানমারের মাদকে বাংলাদেশ সয়লাব হয়ে মানুষের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলাও খারাপ হচ্ছে। এই মাদকের আন্যতম হচ্ছে ইয়াবা। মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় এর বহু কারখানা আছে এবং এটা পাচারে দেশটির সীমান্তরক্ষীরা সহায়তা করে বলে খবরে প্রকাশ। তাই মিয়ানমারের উচিৎ সীমান্ত এলাকার সব মাদক কারখানা নির্মূল এবং এর পাচার বন্ধ করার কঠোর ব্যবস্থা করা। এছাড়া, সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষও বন্ধ করা দরকার। মিয়ানমারের নতুন সরকার বর্ণিত এ বিষয়গুলোর দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে এটাই এ দেশের মানুষের প্রত্যাশা।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন