শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সাড়ে সাত হাজার টাকায় কেনা মেরামতে খরচ ৪ লক্ষাধিক

দুর্নীতির মামলা থেকে অব্যাহতির পাঁয়তারা

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

একটি কার্ডিয়াক মনিটরের ক্রয়মূল্য ছিল ৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। যার মেরামত মূল্য দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৫৮ লাখ ৫০০ টাকা। ফটোকপি মেশিনের ক্রয় মূল্য ৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকা আর মেরামত মূল্য ৬ লাখ ৪০০ টাকা। একটি বেবি স্কেলার কেনা হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ টাকায় কিন্তু সেটি মেরামত করা হয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯০০ টাকায়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি মেরামত সংক্রান্ত বিধি-বিধানের পত্রের নিয়মানুযায়ী প্রতি বছরে কোন মেশিনের ক্রয়মূল্যের ৭ শতাংশ’র মধ্যে মেরামত করতে হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে অমান্য করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি মেরামতের নামে হরিলুট করেছে। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একদল অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজোশে মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সূত্র মতে, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যন্ত্রপাতি মেরামতের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কাজ না করে ৭৪ লাখ ৯৮ লাখ ৫০ টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রতীয়মান হয়েছে। অনুসন্ধানকালে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্বাস্থ্য খাতের বিতর্কিত ঠিকাদার মিঠুর ভাই বেøয়ার এভিয়েশনের প্রোপাইটার মো. মোকছেদুল ইসলামসহ ৬ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়। তবে পরবর্তীতে অভিযুক্তদের সঙ্গে দুদকের একদল অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজোশে মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলামের দাখিলকৃত এজাহারে এবং দুদকের উপ-পরিচালক মো. বেনজীর আহমেদ’র দাখিলকৃত চার্জশিটে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি মেরামতের হরিলুটের চিত্র উঠে আসে।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যন্ত্রপাতি মেরামত সংক্রান্ত বিধি-বিধানের পত্র প্রদান করা হয়। নিয়মানুযায়ী প্রতি বছরে কোন মেশিনের ক্রয়মূল্যের ৭ শতাংশ’র মধ্যে মেরামত করতে হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে অমান্য করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি মেরামতের নামে হরিলুট করে এই চক্র।

মেশিনের ক্রয় মূল্য এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, কার্ডিয়াক মনিটরের ক্রয়মূল্য ছিল ৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। যার মেরামত মূল্য দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৫৮ লাখ ৫০০ টাকা। ফটোকপি মেশিনের ক্রয় মূল্য ৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকা আর মেরামত মূল্য ৬ লাখ ৪০০ টাকা। একটি বেবি স্কেলার কেনা হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ টাকায় কিন্তু সেটি মেরামত করা হয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯০০ টাকায়।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, মামলাটি দিনাজপুর কোর্টে চলাকালিন অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদার মিঠু ও তার ভাই মো. মোকছেদুল ইসলাম বেকায়দায় পড়লে কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। এক পর্যায়ে দুদক ওই অসাধু কর্মকর্তা মামলার চ‚ড়ান্ত রিপোর্ট দিতে তৎপর হয়ে ওঠেন। এমনকি আদালতের উপর চাপ সৃষ্টি করে মামলাটি চ‚ড়ান্ত রিপোর্ট দিতে অধিকতর তদন্তের আদেশ নেন।

অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩-১৭ ক্রমিকে বর্ণিত মেশিনগুলো জব্দকৃত রেকর্ডপত্রদৃষ্টে মেরামত করা হয়েছে। বর্ণিত মেশিনগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট টেকনিশিয়ান, মেডকেল টেকনোলজিস্ট, ডাক্তার ও নার্সরা জানান, তারা মেশিনগুলো মেরামত করার জন্য চাহিদাপত্র দিয়েছিলেন এবং মেরামত পরবর্তী মেশিগুলো সচল রয়েছে মর্মে প্রত্যয়ন দিয়েছিলেন। অর্থাৎ ১৩-১৭ ক্রমিকে বর্ণিত মেশিনগুলোর মেরামত কাজ হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।

কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী মেরামতের কমপক্ষে এক সপ্তাহ পরে সঠিকভাবে মেরামতকৃত যন্ত্রসমূহ কাজ করছে মর্মে নিমিউ প্রকৌশলীর প্রত্যয়ন নেয়ার কথা। কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী ব্যবহারকারীদের প্রত্যয়ন নেয়া এবং হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য সাক্ষীরা মেশিনগুলো মেরামত করা হয়েছে, বর্তমানে সচল আছে মর্মে বক্তব্য প্রদান করা হয়। কিন্তু পুনঃতদন্তকালে নিরপেক্ষ প্রকৌশলী দ্বারা ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সরেজমিন যাচাই করে দেখা গেছে, হাসপাতালে বিদ্যমান ১৮টি আইটেমের ২২টি মেশিনের মেরামত কাজ করার পর মেশিনগুলোর পুরাতন ও অকেজো যন্ত্রাংশ হাসপাতালের স্টোরে রক্ষিত আছে। অনুরুপ যন্ত্রাংশ মেশিনে সংযোজিত আছে মর্মে প্রতিবেদন দেয়ায় এক্ষেত্রে কাজ না করে ৭৪ লাখ ৯৮ লাখ ৫০ টাকা আত্মসাতের ঘটনা পরিলক্ষিত হয় না মর্মে প্রতীয়মান হয়। এখানে অনিয়ম পরিলক্ষিত হলেও আত্মসাতের অসৎ উদ্দেশ্য নয়।

অতঃপর আদালত থেকে অধিকতর তদন্তের নামে দুদকের উপ পরিচালক মো. বেনজীর আহমেদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দুদকের উচ্চ পর্যায় থেকে মো. বেনজীর আহমেদকে দায়েরকৃত মামলা থেকে আসামিদেরকে দায় মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু বেনজীর আহমেদ মামলা থেকে আসামিদের দায়মুক্তি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এরপর দুদকের পদস্থ এক কর্মকর্তার নির্দেশে মামলার ফাইল প্রধান কার্যালয়ে আনা হয় এবং উপ-পরিচালক মো. মোশারফ হোসেন মৃধাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।

২০১৫ সালের দায়েরকৃত মামলায় ২০২০ সালে মো. মোশারফ হোসেন মৃধা তদন্ত রিপোর্টে কোন দুর্নীতি অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়নি উল্লেখ করে মামলার আসামিদের দায়মুক্তি দেয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। যা বর্তমানে কমিশনে সুপারিশট প্রক্রিয়াধীন আছে। মামলা বিচারাধীন থাকায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
নুরজাহান ২৬ নভেম্বর, ২০২০, ২:২৫ এএম says : 0
খাও , দেশটা লুটে পুটে খাও
Total Reply(0)
মারিয়া ২৬ নভেম্বর, ২০২০, ২:২৬ এএম says : 0
কিছু বলার নেই
Total Reply(0)
তানিয়া ২৬ নভেম্বর, ২০২০, ২:২৭ এএম says : 0
সরকারের এগুলো দেখার সময় নেই, তার শুধু বিএনপি জামায়াত নিয়ে পরে আছে
Total Reply(0)
Jack Ali ২৬ নভেম্বর, ২০২০, ১২:২৬ পিএম says : 0
Not a single government ruled by the Law of Allah as such all the government are committing crime. We liberated our Beloved Country from Barbarian Pakistan to live in peace, security, without any crime, wealth will be distributed equally all the people in Bangladesh. But nothing happened, they have looted our money, they are killing us, raping us, people disappear never come back, through torture they killed us, sold our country to India. Our life become hell.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন