মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হযরত বড় পীর আবদুল কাদের জীলানী (রহ.)

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

বড় পীর আবদুল কাদের জীলানী (রহ.)-এর পূর্ণ নাম মুহিউদ্দিন আবু মোহাম্মদ ইবনে আবু সালেহ মুছা জঙ্গী (রহ.)। তিনি একজন কামেল সুফী ধর্মপ্রচারক ছিলেন। তার নামে কাদেরিয়া তরীকার নামকরণ করা হয়েছে। ৪৭০ হিজরীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং ৫৬১ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। পিতৃকুলে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হাসান (রা.)-এর সরাসরি বংশধর ছিলেন। তার জননী ছিলেন আবদুল্লাহ আস মাউমেয়ী (রহ.)-এর কন্যা ফাতিমা (রহ.)। তারা উভয়েই সে যুগের শ্রেষ্ঠ দরবেশ ছিলেন। তিনি যে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, তার নাম নীক বা নায়ক। উহা কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণে গীলান বা জীলান জিলায় অবস্থিত।

আঠারো বছর বয়সে তিনি পড়াশুনার জন্য বাগদাদে প্রেরীত হন। তিনি আল্লামা তিবরিযা (রহ.) এর নিকটে ভাষাতত্ত¡ এবং কয়েকজন শায়খ বা উস্তাদের নিকট হাম্বালী মতান্তরে শাফেয়ী ফিকাহ অধ্যায়ন করেন। তার ৪৮৮ হতে ৫২১ হি. পর্যন্ত জীবনকাল সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, তা হলো এ সময়ে তিনি হজ্জ ও বিবাহ করেন। কারণ তার পুত্র-কন্যার মধ্যে একজনের জন্ম হিজরী ৫০৮ সালে। কোনো কোনো গ্রন্থাকারের মতে, তৎকালে তিনি ইমামে আযম ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মাযারের খাদিমও ছিলেন। তিনি আবু খায়ের মোহাম্মাদ ইবনে মুসলিম (রহ.)-এর নিকট সুফীবাদ শিক্ষা করেন। এক সাক্ষাতকারে তিনি স্থির দৃষ্টিতে তাকাতেই আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) সুফী মতে দীক্ষিত হয়ে পড়েন। উস্তাদ আবুল খায়ের (রহ.)-এর নিকট শিক্ষা গ্রহণ করতে তাকে যথেষ্ট শ্রম স্বীকার করতে হয়।

আবুল খায়েরের (রহ.) খানকাহ্্র মধ্যে একজন আইনজ্ঞ ব্যক্তির অনুপ্রবেশ অন্যান্য শিক্ষারত সাধকদের ক্ষোভ প্রকাশের কারণ হয়েছিল বলে জানা যায়। কিছুকাল পরে আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) সুফী পরিচ্ছদ লাভের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হন। বাগদাদে হাম্বলী ফিকহের একটি মাদরাসা ছিল। সেই মাদরাসার প্রিন্সিপাল কাযী আবু সাঈদ মাখযুমী (রহ.) তাকে শিক্ষা দান করেন। ৫২১ হি. সালে সুফী ইউসুফ আল হামযানী (রহ.)-এর পরামর্শে তিনি প্রকাশ্যে প্রচার কার্য আরম্ভ করেন।

প্রথমে তার শ্রোতার সংখ্যা ছিল অল্প। ক্রমশঃ তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি বাগদাদের হালবা দ্বারের বিখ্যাত কক্ষে আসন গ্রহণ করেন। কিন্তু শ্রোতার সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলায় তাকে দরজার বাইরে যেতে হয়। যেখানে তার জন্য একটি বিরাত বা খানকাহ নির্মিত হয়। ৫২৮ হিজরী সনে জনসাধারণের চাঁদায় পার্শ্ববর্তী অট্টালিকাগুলো মুবারাকুল মাখযুমীর মাদরাসার অন্তর্ভুক্ত করে আবদুল কাদির জিলানী (রহ.)-কে তার প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করা হয়। তার কার্যপ্রণালীর প্রকৃতি ছিল সম্ভবতঃ জামালুদ্দিন আয-জাওযীর অনুরূপ। শুক্রবার প্রাতে ও সোমবার সন্ধ্যায় তিনি তার মাদরাসায় ওয়াজ করতেন। রোববার প্রাতে করতেন খানকায়। তার অসংখ্য ছাত্রের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীকালে দরবেশ বলে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তার ধর্মোপদেশ শ্রবণে অনেক ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল বলে জানা যায়। এতে অনেক মুসলমান ও উচ্চতর জীবন লাভে ধন্য হয়। বহুস্থানে তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার ফলে বহুস্থান হতে তার নিকট নযর-নিয়াজ আসত। এর দ্বারা তিনি প্রার্থীদের চাহিদা পূরণ করতেন এবং সর্বদাই গৃহদ্বার খোলা রাখতেন। দেশের সকল অংশ হতে তার নিকট ইসলামী আইন সংক্রান্ত প্রশ্ন প্রেরিত হতো। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই এগুলোর উত্তর দিতেন। এতে অনুমতি হয় যে, তৎকালীন খলীফাগণ তার অনুরক্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেন। তন্মধ্যে বিখ্যাত (১) আল গুনিয়াতুত তালেবীন (২) আল ফাতহুর রাব্বানী, (৩) ফতুহুল গায়ব, (৪) সিররুল আসরার প্রভৃতি। আল্লাহ পাক তাকে কুরব ও মানজেলাতের আ’লা হতে আলা দারাজাত দান করুন। আমীন।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (14)
Majedur Rahman ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ২:০০ এএম says : 0
আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) হলেন ইসলাম ধর্মে অন্যতম প্রধান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ত্ব। তিনি ইসলামের অন্যতম প্রচারক হিসাবে সুবিদিত। সূফীরা তাকে 'বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) ' নামে ব্যক্ত করেন। আধ্যাত্মিকতায় উচ্চমার্গের জন্য বড়পীর, ইরাকের অন্তর্গত 'জিলান' নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করায় জিলানী
Total Reply(0)
Bojlur Rahaman ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ২:১২ এএম says : 3
হজরত গাউসুল আজম বড় পীর আবদুল কাদের জীলানী (রহ.) ছিলেন বহুমুখী কারামত বা অলৌকিক ঘটনাবলীর অধিকারী মহান আধ্যাত্মিক সাধক।
Total Reply(0)
Md Anwar Ahmed ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ২:১৫ এএম says : 2
অলিকুল শিরোমণি হযরত আবদুল ক্বাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর জীবন ছিল কর্মবহুল ও গৌরবগাঁথায় ভরপুর। অবসর মোটেই ছিল না, সময়ের অপচয় না করে প্রতিটি মুহূর্তকে তিনি কাজে লাগাতেন। হযরত বপড়ীর রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর আদর্শ, ত্যাগ-তিতিক্ষা, নিরলস সাধনার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল না বরং তিনি স্বীয় প্রতিজ্ঞা ও আদর্শের বিকাশ সাধনে এমন কোন দিক নেই যেদিকে তিনি অবগাহন করেননি। তাঁর জীবনযাত্রার ধারা ছিল অত্যন্ত পবিত্র ও পুণ্যময় অধ্যায় স্বরূপ।
Total Reply(0)
Nahid Hossain ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ২:১৭ এএম says : 1
পৃথিবীর প্রতি আসক্তি, লোভ-লালসা, আগ্রহ তাঁর মনে ধারণ করতে পারেনি। আল্লাহর প্রতি একান্ত নির্ভরশীলতা তার হৃদয়ে সদা জাগ্রত থাকতো। তিনি ছিলেন দয়ালু, উদার এবং অসাধারণ গুণের অধিকারী অত্যন্ত বিনয়ী। কোমল ও কঠোর এ দু’য়ের সমন্বয় ঘটেছিল তাঁর জীবনে।
Total Reply(0)
Labeba Chowdhury Rumi ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ২:১৮ এএম says : 2
সাদাসিধে জীবন যাপনে তিনি অভ্যস্ত ছিলেন। ধৈর্য, সংযম, øেহমমতা ও গাম্ভীর্যের মূর্ত প্রতীক ছিলেন তিনি। তাঁর চারিত্রিক মাধুর্যের অন্যতম দিক ছিল ভদ্রতা ও সদাচার। গরীব দুঃখী, অসহায়দের তিনি সদা সাহায্য করতেন। তাঁর জীবনযাত্রার ধারা ছিল অত্যন্ত পবিত্র ও পুণ্যময়।
Total Reply(0)
Tahamina Khanum ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ২:১৯ এএম says : 3
অলিকুল শিরোমণি হযরত আবদুল ক্বাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সারা জীবন অনন্য সাধনা ও অপূর্ব কেরামতে ভরপুর। তাঁর জীবনের প্রারম্ভ থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত অনেক কারামত সংঘটিত হয়েছে। অলিশ্রেষ্ঠ হিসেবে তাঁর মতো আর কোন অলির জীবনে এত অধিক কারামত প্রকাশ হয়নি। তাঁর জীবনে অগাধ সমুদ্ররাজির মতো কারামত সংঘটিত হয়েছে।
Total Reply(0)
তৌহিদুল ইসলাম মজুমদার ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ১১:৪০ পিএম says : 0
এত বড় অলীর জীবনী এত ছোট করে কেন প্রকাশ করা হলো প্রশ্ন রহিলো।
Total Reply(0)
এইচ এম মোঃ আবুল হোসেন (মনি) ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:০০ এএম says : 0
দুনিয়ার প্রতি আসক্তি, লোভ-লালসা, আগ্রহ তাঁর মনে ধারণ করতে পারেনি। আল্লাহর প্রতি একান্ত আনুল্যতা, নির্ভরশীলতা তার হৃদয়ে সদা জাগ্রত থাকতো। তিনি ছিলেন দয়ালু, উদার এবং অসাধারণ গুণের অধিকারী, অত্যন্ত বিনয়ী। কোমল ও কঠোর এ দু’য়ের সমন্বয় ঘটেছিল বলেই তিনি অলীকূল শিরোমনি।
Total Reply(0)
Md.kabir Hossain ১০ মার্চ, ২০২১, ২:০২ পিএম says : 0
দুনিয়ার প্রতি আসক্তি, লোভ-লালসা, আগ্রহ তাঁর মনে ধারণ করতে পারেনি। আল্লাহর প্রতি একান্ত আনুল্যতা, নির্ভরশীলতা তার হৃদয়ে সদা জাগ্রত থাকতো। তিনি ছিলেন দয়ালু, উদার এবং অসাধারণ গুণের অধিকারী, অত্যন্ত বিনয়ী। কোমল ও কঠোর এ দু’য়ের সমন্বয় ঘটেছিল বলেই তিনি অলীকূল শিরোমনি।
Total Reply(0)
MD. AL AMIN ৩ মে, ২০২১, ১:৫৯ পিএম says : 0
হযরত পীরানে পীর সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানী (রাঃ)... এর জীবনী ও কারামত বিস্তারিত প্রকাশ করা হোক।
Total Reply(0)
MD. Oliul Islam Personal Officer ১৬ মে, ২০২১, ২:৩০ পিএম says : 0
একজন বড় কামেল পীরের আত্মজীবনী এত ছোট আকারে করার দরকার ছিল না। উনার ব্যাপারে আরও বেশী করে জানানো হউক।
Total Reply(0)
Zahangir Khan ৯ জুন, ২০২১, ৩:০২ পিএম says : 0
Abdul Quader Jilani (Rah.) Is one of the leading spiritual figures in Islam. He is well known as one of the preachers of Islam. The Sufis call him 'Barapir Hazrat Abdul Quader Jilani (Rah.)'. Jilani was born in Barapir, Iraq, to ​​a place of spirituality.
Total Reply(0)
mohibur ২ আগস্ট, ২০২১, ৩:২৬ পিএম says : 0
এত বড় অলীর জীবনী এত ছোট করে কেন প্রকাশ করা হলো প্রশ্ন রহিলো। দুনিয়ার প্রতি আসক্তি, লোভ-লালসা, আগ্রহ তাঁর মনে ধারণ করতে পারেনি। আল্লাহর প্রতি একান্ত আনুল্যতা, নির্ভরশীলতা তার হৃদয়ে সদা জাগ্রত থাকতো। তিনি ছিলেন দয়ালু, উদার এবং অসাধারণ গুণের অধিকারী, অত্যন্ত বিনয়ী। কোমল ও কঠোর এ দু’য়ের সমন্বয় ঘটেছিল বলেই তিনি অলীকূল শিরোমনি। অলিকুল শিরোমণি হযরত আবদুল ক্বাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সারা জীবন অনন্য সাধনা ও অপূর্ব কেরামতে ভরপুর। তাঁর জীবনের প্রারম্ভ থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত অনেক কারামত সংঘটিত হয়েছে। অলিশ্রেষ্ঠ হিসেবে তাঁর মতো আর কোন অলির জীবনে এত অধিক কারামত প্রকাশ হয়নি। তাঁর জীবনে অগাধ সমুদ্ররাজির মতো কারামত সংঘটিত হয়েছে
Total Reply(0)
Monjur Rashed ১৭ নভেম্বর, ২০২১, ৫:১০ পিএম says : 0
Tribute to this great spiritual personality.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন