মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মুক্তিযুদ্ধ না করেও ভাতা নিতেন সুলতান দুয়ারী

সনদ জালিয়াতি ধরা পড়ায় গেজেট বাতিল

মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, ঝালকাঠি থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

 ঝালকাঠি সদর উপজেলার নেহালপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ আলী দুয়ারীর ছেলে মো. সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ যাবতীয় রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। পার্শ্ববর্তী পিপলিতা গ্রামের মৃত. সৈয়জদ্দিনের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সুলতান হোসেন মাঝির সঙ্গে নাম মিল থাকায় জালিয়াতি করে সনদ নেন সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী।
অভিযোগ রয়েছে, সুলতান হোসেন মাঝির কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে ভাতা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে সুলতান আহমেদ দুয়ারী নিজের নামে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা করিয়ে নেন।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন তিনি। সন্তানদের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় দিয়েছেন চাকরিও। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তার গেজেট ও সনদ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সুলতান হোসেন মাঝি ২০১৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার স্ত্রী ফরিদা বেগম, ছেলে মিজানুর রহমান, মিরাজ মাঝি, নুবীন মাঝি ও মেয়ে নুপুর বেগম। জীবিত অবস্থায় প্রতারক সুলতান আহম্মেদ দুয়ারীর সঙ্গে শক্তি ও বুদ্ধিতে পারেননি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। নিজের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেখে যেতে পারেননি তিনি। পরিবারের দাবি, তার নামে গেজেট করে স্ত্রীর নামে ভাতার ব্যবস্থা করা হোক।
জানা যায়, সুলতান হোসেন দুয়ারীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিল বাতিল হওয়ায় আর্থিকসহ সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নোটিশ দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট অধিশাখার উপসচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৪৮তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সৈয়দ আলী দুয়ারীর ছেলে সুলতান হোসেন দুয়ারীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিল করা হয়। উপসচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত গত ২২ নভেম্বরে স্বাক্ষরিত চিঠিটি ১ ডিসেম্বর ঝালকাঠিতে পৌঁছলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেকুন নাহার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালী জাতিকে মুক্ত করতে স্বাধিকার আন্দোলনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন সুলতান হোসেন। কখনো রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাবেন সে আশায় বা লোভে নয়, তখন শুধুমাত্র ঝাপিয়ে পড়েন দেশ মাতৃকার টানে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর স্বাধীনতা অর্জিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় কর্ণেল এমএজি ওসমানী স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধার সনদ প্রদান করা হয় সুলতান হোসেনকে। পার্শ্ববর্তী নেহালপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ আলী দুয়ারীর ছেলে মো. সুলতান আহাম্মেদ দুয়ারী তার কাছে মুক্তিযোদ্ধার সনদ কেমন তা দেখতে আসেন।
এ সময় তিনি বলেন, তোমার-তো লোকজন নেই, আমার মন্ত্রণালয়ে নিজস্ব লোক আছে। আমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তোমার সনদের ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেব। এ আশ্বাসে প্রতিবেশী হিসেবে সনদটি দেখে তিনি নিয়ে যান। সেই অনুযায়ী সনদপত্রে প্রতারণা করে নাম ও পিতার নাম জালিয়াতির মাধ্যমে কৌশলে পরিবর্তন করে নিজেকে গেজেটভুক্ত করেন।
যার মুক্তিবার্তা নং-০৬০২০১০৬২৮। বিষয়টি জানতে পেরে সুলতান দুয়ারীর কাছে গেলে, তিনি সুলতান হোসেনকে হত্যাসহ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
সুলতান আহম্মেদ দুয়ারীর আপন চাচা বয়জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি আকরাম আলী দুয়ারী (৯১) বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা বাড়িতেই ছিলাম। সুলতান আহম্মেদ আমার বড় ভাইয়ের ছেলে। তখন ওর বয়স ১৭-১৮ হবে। সে কখনো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। পিপলিতার সুলতান হোসেন মাঝির সার্টিফিকেট নিয়ে কেমন কেমন করে যেন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে। সুলতান মাঝী অশিক্ষিত হওয়ায় সুলতান আহম্মেদ দুয়ারীর সাথে আর পারেনি।
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সুলতান হোসেন মাঝির স্ত্রী ফরিদা বেগম বলেন, আমার স্বামীর নাম জালিয়াতি করে যে ব্যক্তি এতোদিন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা নিয়েছে, তাকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। আমার স্বামীর নাম অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করার অনুরোধ করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন