বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সংস্কারে কচ্ছপগতি

৫০% রাস্তা চলাচলের অযোগ্য : জিম্মি নগরবাসী

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

প্রশাসনের উদাসীনতা : ঠিকাদারের গাফিলতি

দশ মাস ধরে ড্রেনেজ উন্নয়নের কাজ চলছে রাজধানীর উত্তরার ৬ নং সেক্টরের ৩ ও ৮ নম্বর সড়কে। এ বছরের মার্চ মাস থেকে কাজ শুরু হবার পর পুরো দশ মাস প্রায় বন্দি অবস্থায় কাটাচ্ছেন এই দুই সড়কের বাসিন্দারা। অসুস্থ হলেও গাড়িতে যাওয়ার সুযোগ নেই, রাস্তায় হেটে যাওয়ায় মুশকিল। বন্দি দশা থেকে মুক্তি চান দুই সড়কের বাসিন্দারা।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফছার উদ্দিন খান এবং অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, এ কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে বলা হলেও কাজ শেষ করছে না ঠিকাদার। নিজের ইচ্ছামত কাজ করছে, কারো কোন কথা শুনে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ঠিকাদার পারভেজের সাথে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের সুসম্পর্ক থাকায় কোন কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর কাউকেই পাত্তা দেয় না ঠিকাদার পারভেজ।

শুধু এই রাস্তাই নয় ঢাকা শহরের যেসব সড়কে কাজ চলছে সবগুলোতেই একই অবস্থা বিরাজমান। কাজ একবার শুরু হলে তা আর শেষ হয় না। কোন কোন রাস্তার কাজ শেষ হতে ৩-৪ বছরও লেগেছে। রাজধানীর ৫০ শতাংশ রাস্তাই চলাচলের অযোগ্য। যেখানে কাজ শুরু হয় সেই এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তির কোন শেষ থাকে না। অনেক ঠিকাদার কাজের টাকা তুলে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ঠিকাদারদের কাজও খুব নিম্নমানের। অল্পদিনের মধ্যে রাস্তা ভেঙে যায়। এছাড়া রাস্তা উচু নিচু এব্রো-থেব্রো থাকে, কাজের ফিনিসিং একদমই বাজে। ঢাকার মূল সড়কের বেশিরভাগই উচু নিচু ঢেউ ঢেউ। গাড়ি চললে প্রতিনিয়ত ঝাঁকি খেতে হয়, মনে হয় ভাইব্রেশন হচ্ছে।

রাস্তার কাজ দেখভাল করার জন্য সিটি করপোরেশনের যারা দায়িত্বে আছেন তাদের উদাসীনতায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। একদিকে ভাঙাচোরা রাস্তা, আরেকদিকে উন্নয়ন কাজ মাসের পর মাস ফেলে রাখায় নগরবাসির ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না। আর ঠিকাদারদের কাজের মান দিন দিন নিচেই নামছে।

রাজধানীর দক্ষিণখানে ঢাকা ওয়াসা নতুন পানির লাইন বসাচ্ছে। ওয়াসার কাজের কারণে দক্ষিণখানের চারটি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি রাস্তার বেহাল দশা বর্তমানে। উত্তরার জমজম টাওয়ার থেকে খালপাড় রোডে ম্যানহোলের ঢাকনা সড়ক থেকে ১০ ইঞ্চি উঁচু রয়েছে। ফলে গাড়ির চালক একটু এদিক সেদিক তালেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তুরাগ থানার প্রত্যেকটি রাস্তাই খারাপ। উত্তর বাড্ডার আলীর মোড় থেকে পুর্বাঞ্চল যাওয়ার রাস্তায় প্রায় ২৫টি ম্যানহোলের ঢাকনা নেই। কোন রকমে এ রাস্তায় রিকশা চলাচল করতে পারে। তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি ও বিজি প্রেসের পেছনের কয়েকটি রাস্তা খানাখন্দে ভরা। বসুন্ধরা থেকে নতুনবাজারের রাস্তায় বিদ্যুতের আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল বসানোর পর ধীরগতিতে সংস্কার হচ্ছে। রাস্তায় প্রায় এক ফুট ইটের খোয়া থাকলেও সংস্কার কাজে ৩-৪ ইঞ্চি ইটের খোয়া দিয়ে রোলার দিয়ে সমান করা হয়েছে অনেক জায়গা। ফলে ভবিষ্যতে এই রাস্তা দ্রæত নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভবনা বেশি। মালিবাগ থেকে রামপুরা পর্যন্ত সড়কের অনেকগুলো ম্যানহোলের ঢাকনা সড়ক থেকে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি নিচু। মালিবাগ থেকে রাজারবাগ যাবার রাস্তায় (ফ্লাইওভারের নিচে) ভাঙাচোরা, হলি ফ্যামিলি থেকে মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা ভাঙা, কুড়িল ফ্লাইওভারের উপরের রাস্তা গর্তে ভরা, পাশাপাশি ফ্লাইওভারের ল্যাম্পের পোস্টের বাতি নেই, মগবাজার ফ্লাইওভারেও কোন বাতি নেই। মতিঝিল এলাকায় যতগুলো সড়কের সংস্কার কাজ করা হয়েছে সব গুলোই উচু-নিচু, এব্রো-থেব্রো।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির লালবাগের ইসলামবাগ-শহীদ নগরের রাস্তা কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। পুরান ঢাকার আলু বাজারের রাস্তা, যাত্রাবাড়ির ভাঙা প্রেস এলাকার রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। মিরপুর টু আগারগাঁও সড়কে ড্রেনেজের কাজ চলছে তাই মাত্র এক লেনে গাড়ি চলাচল করতে পারে। শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর ১০, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্কর থেকে মিরপুর ১২ নম্বর ও পল্লবী অংশের রাস্তারও বেহাল দশা। পল্লবীর বিভিন্ন সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে দীর্ঘদিন। শ্যামলী সিনেমা হল থেকে শিয়া মসজিদ পর্যন্ত এই রাস্তার দুই পাশে খানাখন্দে ভরা। সিদ্ধেশ্বরী রোড়ের খেলার মাঠের সামনে ছোট-বড় খানাখন্দ রয়েছে। বছরের পর বছর ঘুরলেও শেষ হয় না বনশ্রী এলাকার রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ। মেরাদিয়া বাজার থেকে মাদারটেক যাওয়ার প্রধান সড়কটি গত পাঁচ বছরেও ঠিক হয়নি।

ঢাকা শহর জুড়ে নানা সংস্থার অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের সমন্বয় যেন হচ্ছেই না। একেকটি সংস্থা একেক সময়ে কাজ করায় সারা বছরই শহরের রাস্তার বেহাল অবস্থা থাকে। নগর পরিকল্পনার সাথে যারা কাজ করেন তাদের অপরিপক্ক পরিকল্পনার ফলে একই কাজ বারবার করা লাগে। এরপর দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ রেখে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় বাড়তি টাকা পাওয়ার আশায় থাকে ঠিকাদাররা। সিটি করপোরেশনও সময় মতো টাকা দিতে পারে না ফলে রাস্তার কাজ ধরে তা ফেলে রাখে ঠিকাদাররা। রাস্তার খুড়ে ফেলে রাখা হচ্ছে দীর্ঘদিন। ফলে সারা বছরই ঢাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাজধানীর ড্রেনেজ বা সড়কের উন্নয়ন কাজে কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত করছে না দুই সিটি করপোরেশন। কাউন্সিলরদের কাছ থেকে কোন পরামর্শও নেয়া হয় না।
ঢাকায় বিভিন্ন সংস্থার কাজের সমন্বয় করতে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম ও সিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংস্থার সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। কিন্তু তা বাস্তবে কোন কাজে আসছে না।

আর নি¤œমানের কাজের জন্য প্রকল্প শেষ হবার কিছুদিনের মধ্যেই সেই রাস্তা আবারও বেহাল হয়ে পড়ছে। না হয় নতুন প্রকল্পের কারণে আবারও খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ নি¤œমানের কাজ করা হয় সুয়ারেজ লাইন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার। এই সমস্যার কারণে রাস্তায় গর্ত তৈরী হওয়া, ভেঙে যাওয়ায় অতিদ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঠিকাদাররা ইচ্ছাকৃতভাবেই সুয়ারেজ ও ড্রেনেজের কাজে ত্রুটি রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ডিএসসিসি মেয়র ফজলে নূর তাপস সম্প্রতি বোর্ড মিটিংয়ে বলেছেন, ঠিকাদারদের সময় মতো কাজ শেষ করতে হবে। কাজ শেষ না করার আগে টাকা দেয়া হবে না।
ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এএসএম মামুন ইনকিলাবকে বলেন, মেয়র আতিকুল ইসলাম সকল ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Manik Mohammed ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:১১ এএম says : 0
একদিকে ভাঙাচোরা রাস্তা, আরেকদিকে উন্নয়ন কাজ মাসের পর মাস ফেলে রাখায় নগরবাসির ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না।
Total Reply(0)
টুটুল ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:২৭ এএম says : 0
ঢাকা শহর জুড়ে নানা সংস্থার অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের সমন্বয় যেন হচ্ছেই না।
Total Reply(0)
নয়ন ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:২৯ এএম says : 0
সংস্কারে কচ্ছপগতি হলেই তাদের লাভ। তাতে বাজেট বাড়ে
Total Reply(0)
রায়হান ইসলাম ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৩০ এএম says : 0
এর জন্য প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত বৃহৎ উদ্যোগ
Total Reply(0)
Jabed Hossain ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৩০ এএম says : 0
thanks for this news
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন