দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছরেও শেষ হয়নি কুড়িগ্রাম যাত্রাপুর সড়কে শুলকুর বাজার এলাকায় নির্মাণাধীন সেতু। আসন্ন বন্যায় চলাচলের বিকল্প পাশের রাস্তাটি তলিয়ে যাবে। বৃষ্টি পানিতেই রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ সম্পন্ন না করেই প্রায় ২ কোটি টাকা বিল হাতিয়ে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ একাধিকবার এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীকে কাজটি সমাপ্তির জন্য তাগাদা দেন। এরপরও মুখ থুবড়ে পরে আছে সেতুর নির্মাণ কাজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নতুন সেতু নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে কুড়িগ্রাম এলজিইডি টেন্ডার আহবান করে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্মাণ কাজটি পান কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা এন্ড আবু বকর জেবি। ৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৫ কোটি ৫২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। কাজটি শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর। যা সমাপ্তির নির্ধারিত মেয়াদ ছিল ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সাল পর্যন্ত। নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও গত দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সেতুর নির্মাণ কাজ। শুরু থেকে দেড় বছরে সেতুর ১টি মাত্র স্প্যান নির্মাণ করা হয়েছে। এরপর থেকে সেতুর বেশিরভাগ কাজ রয়েছে অসম্পন্ন।
সূত্র আরো জানায়, কাজটি বসুন্ধরা এন্ড আবু বকর জেবি’র মালিক আলতাফ হোসেনের নামে হলেও বাস্তবে ঠিকাদার হিসাবে অসম্পন্ন কাজটি করেন শহরের নিম বাগান এলাকার ঠিকাদার গোলাম রব্বানী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলজিইডি’র একজন কর্মকর্তা জানান, এই কাজের ঠিকাদার মূলত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা এন্ড আবু বকর জেবির নামে। কিন্তু গোলাম রব্বানী সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজটি করছেন। এর দায়ভার বর্তায় মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উপর।
অপরদিকে কাজ না করে কিভাবে বিল উত্তোলন করলো ওই ঠিকাদার এ প্রশ্ন এখন সর্বমহলের। তাছাড়া পণ্য পরিবহন ও মানুষের যাতায়াতের জন্য সেতুর বিকল্প পাশের রাস্তাটি থেকে প্রায় ৫ হাজার ইট তুলে নিয়ে গেছেন। ফলে গত বন্যায় রাস্তাটি ভেঙে গেলে প্রতিদিন হাজারো মানুষের চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। সেই সাথে সেতুটি না থাকায় উত্তরবঙ্গের বৃহৎ যাত্রাপুর গরুর হাট, সদর উপজেলার পাঁচগাছী, যাত্রাপুর, ঘোগাদহ, উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নসহ সীমান্তবর্তী অসংখ্য হাট-বাজারে পরিবহন যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
শুলকুর বাজারের ব্যবসায়ী মজিদুল ইসলাম বলেন, সকল ব্যবসায়ীকে পণ্য আনা নেওয়ার কাজে দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে এবং বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। কয়েক বছর পার হয়ে গেলেও সেতটিু এভাবেই পরে আছে। যেন দেখার কেউ নেই। বিকল্প রাস্তাটি খানাখন্দরে ভরে থাকার ফলে অনেক সময় যানবাহন উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অনেকেই। এ ব্যাপারে সাব-ঠিকাদার গোলাম রব্বানী বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিল না দেয়ায় কাজটি যথাসময়ে শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না।
কুড়িগ্রাম এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে সেতুর কাজ শেষ করতে পারেনি। ইতোমধ্যে প্রথমবার কাজ সমাপ্তির সময় শেষ হলেও আবারও সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিল প্রদান সম্পর্কে তিনি বলেন কাজের অগ্রগতি অনুযায়ী বিল প্রদান করা হয়। কুড়িগ্রাম-২ আসনের এমপি পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এলজিইডি’র প্রকৌশলীকে সেতুর নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন