দেশের দীর্ঘতম তিন সেতু পারাপারে পরিবহনের টোল পরিশোধ আর লাইনের অপেক্ষা দূর করতে ফাস্ট ট্র্যাক লেন চালু করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এ সুবিধা পেতে তিন সেতুর টোলপ্লাজায় স্থাপিত হয়েছে ফাস্ট ট্র্যাক লেন। এই লেন ব্যবহারে যেমনি বাঁচবে সময়, তেমনি পরিবহনের যাত্রী ও সংশ্লিষ্টদের ভোগান্তি কমাবে। চলতি মাসের ১৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম টোলপ্লাজায় স্থাপিত দুই ফাস্ট ট্র্যাক লেন টোল বুথ উদ্বোধন করেন সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন।
এর আগে দেশের দীর্ঘতম দুই সেতু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোল প্লাজায় যানজটসহ বিভিন্ন ভোগান্তি রোধে গত এক বছর আগে ফাস্ট ট্র্যাক লেন পদ্ধতিতে টোল আদায়ের কার্যক্রম চালু করা হলে গাড়ির মালিক ও চালকদের মাঝে এখনো সাড়া জাগাতে পারেনি। ওই ফাস্ট ট্র্যাক লেন কী এবং এর ব্যবহার কীভাবে সেটিই জানেন না সেতু দিয়ে পারাপারত অনেক চালক। বিভিন্ন যানবাহন চালকরা বলছেন, ফাস্ট ট্র্যাক লেন পদ্ধতিটির ব্যাপারে মহাসড়কের কোথাও কোন প্রচার-প্রচারণা করতে দেখেনি বা শুনেনি। তবে কয়েকজন চালক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এই পদ্ধতিটি চালু হলে মহাসড়কের সেতুর টোল প্লাজায় কোন প্রকার যানজট থাকবে না। দিন-রাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট মুক্ত নির্বিঘ্নে চলাচাল করতে পারবেন বলে তারা জানান।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার। জনগণের রাজস্ব এই ব্যয়ের প্রধান উৎস। বিশেষত মহাসড়কের মেঘনা, গোমতী ও বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে আদায়কৃত টোল রাজস্ব আয়ের একটি বড় খাত। সা¤প্রতিক সময়ে মহাসড়কের মেঘনা, গোমতী ও বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই টোল আদায় পদ্ধতিতে নিয়মিত যানজটসহ বিভিন্ন বিড়ম্বনা বেড়ে যাওয়ায় আরও সহজ ও গতিশীল টোল আদায় পদ্ধতির পরিবর্তনের সিন্ধান্ত নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ জানায়, পর্যায়ক্রমে দেশের বড় রড় সেতুগুলোসহ দেশের সব সেতুতেই ফাস্ট ট্র্যাক লেন পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হবে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। শুধু আগ্রহ ও বিনিয়োগই এ ধরনের উদ্যোগ সফল করার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে যারা টোল দেবেন তাদেরও পদ্ধতিটি সম্পর্কে সচেতন করে তোলার কথা বলা হলেও গত এক বছর আগে মেঘনা ও গোমতী সেতুতে ফাস্ট ট্র্যাক লেন পদ্ধতিতে টোল আদায়ের কার্যক্রম চালু করা হলে গাড়ির মালিক ও চালকদের মাঝে এখনো সাড়া জাগাতে পারেনি।
স্টার লাইন পরিবহনের ম্যানেজার কবির হোসেন গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মহাসড়কে যানজটসহ বিভিন্ন ভোগান্তি এড়াতে শুধু আগ্রহ ও বিনিয়োগই এ ধরনের উদ্যোগ সফল করার জন্য যথেষ্ট নয়, যারা টোল দেবেন তাদেরও এ পদ্ধতিটি সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। এই বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করতে হবে। টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে এর সুফল সম্পর্কে তুলে ধরতে হবে। চালকদের মাঝে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে এই নতুন প্রকল্পটির বিষয়ে ধারণা দিতে পারলেই এর সুফল পাওয়া যেতে পারে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাস্ট ট্র্যাক লেন চালু করার ১৫ দিন পর নূন্যতম কোন প্রকার সাড়া পড়েনি এই নতুন প্রকল্পটিতে। এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী পণ্যবাহী ট্রাকচালক কামরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ফাস্ট ট্র্যাক লেনের কাজ কী সেটি আমরা জানি না। এমনকি এটি সম্পর্কে কেউ আমাদের কিছু বলেন নি। এ কারণে অতীতের মতোই টোলপ্লাজায় লাইনে দাঁড়িয়ে নগদ ১ হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে সেতু পারাপার হয়েছি। লাইনে না দাঁড়িয়ে এবং অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়ার পদ্ধতিটি চালু হলে তাদের ভীষণ উপকার হবে বলেও জানান তিনি। বগুড়া থেকে ঢাকাগামী সবজিবাহী ট্রাকচালক আলমগীর হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, একদিন পরপর পণ্য নিয়ে তারা ঢাকায় যাতায়াত করছেন। দৈনিকের মতোই তারা হাতে নগদ টাকা দিয়ে সেতু পার হয়েছেন। ফাস্ট ট্র্যাক লেন সম্পর্কে সেতু কর্তৃপক্ষ বা মালিকরা কেউ তাদের কিছু বলেননি। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এর ব্যবহার সম্পর্কে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার প্রচারণা চালানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ সুবিধা পেতে পরিবহনগুলোর ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রকেট অ্যাকাউন্টের আরএফআইডি কোড লাগবে। গাড়ির উইন্ডশিল্ডে লাগানো ওই আরএফআইডি কোড ব্যবহারে ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরিশোধ হবে পরিবহনগুলোর সমপরিমাণ টোলের টাকা। সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, মেঘনা, গোমতী ও বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজায় স্থাপিত ফাস্ট ট্র্যাক লেনে দাঁড়িয়ে এখন আর টোল দিতে গাড়ি থামাতে হবে না। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরিশোধ হবে পরিবহনগুলোর সমপরিমাণ টোলের টাকা। তবে মেঘনা, গোমতী সেতুতে এর কার্যক্রম চালু থাকলেও বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজায় স্থাপিত বুথ এখনও সেতুতে চলাচলরত যানবাহনগুলোর ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রকেট অ্যাকাউন্টের আরএফআইডি কোডের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়নি। এ কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব ও পশ্চিমের টোলপ্লাজায় স্থাপিত দুই ফাস্ট ট্র্যাক লেনের টোল বুথগুলোর অনলাইনে টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হয়নি।
এ প্রসঙ্গে সেতু তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ফাস্ট ট্র্যাক লেন সম্পর্কে অবগতির জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া আজ সেতু ভবনে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে মিটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন