শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

লকডাউন

২০২০ সালের আলোচিত ও বর্ষসেরা শব্দ

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:১০ এএম

লকডাউন। ২০২০ সালে বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত নতুন শব্দ। শুধু তাই নয়, করোনাভাইরাসের বিস্তারের সময় নাটকীয়ভাবে শব্দটির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ইংরেজি ভাষার অভিধান কলিনসের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হয় ‘লকডাউন’। যার আভিধানিক অর্থ হলো, ভ্রমণ, সামাজিক সম্পৃক্ততা এবং জনসমাগমস্থলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ। বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে মাদারীপুরে। জেলার শিবচর উপজেলায় ১৯জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়, যাদের বেশিরভাগই বিদেশফেরত। এমতবস্থায় বিদায়ী বছরের ১৯ মার্চ শিবচর উপজেলা সর্বপ্রথম ‘লকডাউন’ করা হয়। ঢাকায় প্রথম ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয় মিরপুরের টোলারবাগকে। দুদিনের ব্যবধানে দুজন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর পর স্থানীয় বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে টোলারবাগ এলাকা ‘লকডাউন’ ঘোষণা করে। পরে প্রশাসনের সহযোগীতায় সেখানে টানা ২১ দিন লকডাউন চলে। লকডাউনে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক বিরুপ প্রভাব পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় গণপরিবহন। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক দৈন্যতায় বহু কষ্টে জীবনধারণ করে নিম্নবিত্তের মানুষজন।

করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে বিদায়ী বছরে বিশ্বজুড়েই বদলে গেছে মানুষের জীবনযাপন। এই জীবনযাপন যেমন বদলে গেছে, তেমনি যোগাযোগের ক্ষেত্রে বদলে গেছে নিত্য ব্যবহৃত শব্দ। কলিনস ডিকশনারি কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে আনার জন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার প্রতিশব্দে পরিণত হয়েছে লকডাউন। যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, মূলত বিভিন্ন ওয়েবসাইট, বই, সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন ও কথপোকথনে ব্যবহৃত শব্দ থেকে একটি হিসাব দাঁড় করিয়েছে কলিনস ডিকশনারি। এই হিসাব অনুসারে, গত বছরের তুলনায় ‘লকডাউনের’ ব্যবহার ৬ হাজার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির আরেক গণমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এর বিপরীতে বিদায়ী বছরে (নভেম্বর পর্যন্ত) ‘লকডাউন’ শব্দটি আড়াই লাখবার ব্যবহারের রেকর্ড পাওয়া গেছে। কলিনস ডিকশনারির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হারপার কলিনস জানায়, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে শত কোটি মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তারই একটি সামগ্রিক প্রতিফলন হলো এটি।

শুধু লকডাউন শব্দটি বিদায়ী বছরে বেশি ব্যবহার করা হয়, এমনটা নয়। ব্যবহারের শীর্ষে থাকা ১০টি শব্দের মধ্যে ৬টি শব্দ এই মহামারিসংক্রান্ত। লকডাউন ছাড়া বাকি পাঁচটি হলো ‘করোনাভাইরাস’, ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’ (সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা), ‘সেলফ আইসোলেশন’ (নিজ উদ্যোগে সঙ্গনিরোধ), ‘ফোরল’ (ছুটিতে থাকার অনুমতি), ‘কি ওয়ার্কার’ (মহামারির সময় কর্মরত গুরুত্বপূর্ণ খাতে কর্মীরা)। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ শব্দগুলোর ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়। বেশিরভাগ মানুষের কাছে এ শব্দগুলো ছিল একেবারে নতুন।

করোনাভাইরাসের রোগী পাওয়ার পর রাজধানী ঢাকার ৫২টি এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৯ এপ্রিল ১০টি এলাকা লকডাউন করা হয়। মিরপুরের টোলারবাগে রোগী পাওয়ার পর ওই এলাকা আগেই লকডাউন করা হয়। এরপর একে একে পুরান ঢাকায় খাজে দেওয়ান লেনের ২০০ ভবন, মোহাম্মদপুর এবং আদাবরের ৬টি এলাকা, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সামনে, তাজমহল রোড মিনার মসজিদ এলাকা, রাজিয়া সুলতানা রোড, বাবর রোডের একাংশ, বছিলা ও আদাবর এলাকার কয়েকটি বাড়ি ও রাস্তা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এক নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সেখানকার একটি রাস্তা লকডাউন করা হয়।

এছাড়া ওই সময় যেসব এলাকা লকডাউন করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মহাখালীর আরজত পাড়ার একটি ভবন, বসুন্ধরা এলাকার অ্যাপোলো হাসপাতালসংলগ্ন এলাকা, বসুন্ধরা ডি বøকের রোড-৫, বুয়েট এলাকার একাংশ, ইস্কাটনের দিলু রোডের একাংশ, মিরপুরের টোলারবাগ, উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের একটি সড়ক এলাকা, কাজীপাড়ার একটি অংশ, সেন্ট্রাল রোডের কিছু অংশ, সোয়ারীঘাটের কিছু অংশ, মিরপুর-১০-এর ৭ নম্বর রোড, পল্টনের কিছু অংশ, আশকোনার কিছু অংশ, নয়াটোলার একাংশ, সেনপাড়ার একটি অংশ, মীর হাজিরবাগের একাংশ, নন্দীপাড়ার ব্রিজের পাশের এলাকা, মিরপুর সেকশন ১১-এর একটি সড়ক, লালবাগের খাজে দেওয়ান রোডের একটি, ধানমন্ডি-৬-এর একটি অংশ, উত্তর টোলারবাগ, মিরপুর-১৩ ডেসকো কোয়ার্টার, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী, পশ্চিম মানিকনগর, নারিন্দার কিছু এলাকা, গ্রিন লাইফ হাসপাতাল এলাকা, ইসলামপুরের একাংশ। এসব এলাকা পুলিশি পাহারায় রাখা হয়। দিনরাতে কাউকে চলাচল করতে দেয়া হয়নি। এলাকায় সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ ছিল।

করোনাভাইরাস আতঙ্কে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। বাস, ট্রেন, নৌযান ও ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল। যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন