শুভ নববর্ষ। স্বাগত ২০২১ সাল। করোনা মহামারির মধ্যেও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে আয়োজনের কমতি ছিল না। রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে রঙ বেরঙের ফানুস উড়িয়ে, আলোকসজ্জা ও আতশবাজির মধ্য দিয়ে ইংরেজি নববর্ষ ২০২১ বরণ করেছে রাজধানীবাসী। যদিও পটকাবাজি, আতশবাজি, ভবনের ছাদে উৎসব আয়োজনে নিষেধাজ্ঞাসহ থার্টি ফার্স্টে উদ্যাপনের ক্ষেত্রে ১৩ দফা নির্দেশনা জারি করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ। তারপরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বাসার ছাদে অবস্থান করে নতুন বছরকে বরণ করেছে। শুধু তাই নয়, পৃথক স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের সময় অতিরিক্ত মদপানে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া মদপানে বাধা দেয়ায় একজন কাউন্সিলর অফিসে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। তবে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, খ্রিস্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে জনসমাবেশ বা একসাথে সমবেত হয়ে কোথাও কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। পুরো শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিল বলে জানান তিনি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে গুলশান-২ গোলচত্বরে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আমরা জীবনের সবচেয়ে দুরূহ সময় পার করছি। এটা একসময় থাকবে না। করোনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকাতে নববর্ষ উদযাপনে যুবকদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। হোটেলগুলোতে ছোটখাটো অনুষ্ঠান হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পুরো শহরব্যাপী ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনো সংশয় নেই, কোনো হুমকিও নেই।
তিনি প্রত্যাশা করে বলেন, আমরা যে মহামারির ভেতর দিয়ে সময় পার করছি, নতুন এ বছরে এটা থেকে আমরা নিষ্কৃতি পাব। আমরা যেন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারি এবং দেশের উন্নয়নে সবাই মিলে কাজ করতে পারি। তবে ডিএমপি কমিশনারের এমন বক্তব্যের পরও রাত ১২টা এক মিনিটে আতশবাজি ও ফানুসে আলোকিত হয়ে ওঠে রাজধানীর আকাশ। করোনাকালে খোলা যায়গায় বর্ষবরণের আয়োজন না করতে পুলিশের নির্দেশনা ছিল। সে মোতাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি, হাতিরঝিলসহ নানা এলাকায় সীমিত আকারে হয়েছে বর্ষবরণের আয়োজন। তবে বর্ষবরণ উপলক্ষে নানা আয়োজনে মুখরিত ছিল রাজধানী পাঁচ তারকা হোটেলগুলো। অন্যদিনের তুলনায় শীতের তীব্রতাও ছিল কম। পুরাতন বছরকে বিদায় জানাতে শীত কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি এদিন। অনেক বাড়ির ছাদে ছাদে ফানুস, আতশবাজির পাশাপাশি চলে বারবি কিউ পার্টি। রাজধানীর ছাদগুলোতে গান বাজিয়ে আনন্দ করে নানা বয়সী মানুষ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন বছরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে অনেকের পোস্ট, ম্যাসেজ চোখে পড়ার মতো। অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার করেছেন ছাদে কিংবা বাইরে বর্ষবরণের ছবি। এছাড়া নতুন বছরকে আপন করে নিতে কক্সবাজার, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ছিল মানুষের ভিড়।
এদিকে, রাজধানীর পৃথক দুটি স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের সময় অতিরিক্ত মদপানে মো. সোহাগ (২৪) ও অনন্ত চন্দ্র দাস (৪০) নামের দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুই জনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. বাচ্চু মিয়া জানান, থার্টি ফার্স্ট নাইটে অতিরিক্ত মদ পান করেন তারা। এতে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। পুলিশ জানায়, সোহাগসহ কয়েকজন আশকোনা এলাকায় থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে মদ পান করেন। সোহাগ অসুস্থ হয়ে পড়লে গতকাল ভোর পৌনে ৪টার দিকে তাকে হাসপাতালে নেন তার বাবা ফরিদ মিয়া। এ সময় চিকিৎসক সোহাগকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া একই রাতে হাজারীবাগের গণকটুলি সুইপার কলোনিতে অনন্তসহ আরও কয়েকজন মদ পান করেন। অনন্ত অচেতন হয়ে পড়লে তার ভাই শিবা দাস তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেন। এ সময় চিকিৎসক অনন্তকেও মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লাশ দুটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে থাকলেও অজ্ঞাত কারণে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দুটি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, মৃত দুজনের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না করায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে, থার্টি ফার্স্ট নাইটে মদপানে বাধা দেয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. রুহুল আমিনের অফিসে হামলা চালিয়েছে সস্ত্রাসীরা। তিনি জানান, বিষয়টি পুলিশকে অবগত করা হয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসীদের দুটি মোটরসাইকেলে জব্দ করে থানা পুলিশের কাছে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
গতকাল রাজধানীর জুরাইনের মুরাদপুরে কাউন্সিলরের নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত দুইটার সময় একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক ১২-১৪টি মোটরসাইকেল নিয়ে কার্যালয়ের সামনে এসে থামে। এখানে এসেই তারা নিজেরা নিজেরা দুটি গ্রæপ হয়ে মারামারি শুরু করে। খবর পেয়ে আমি এসে তাদের মারামারি থামাতে এবং চলে যেতে অনুরোধ করলে তারা উল্টো আমার ওপর চড়াও হয়। এসময় আমি তাদেরকে ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশে বাসা থেকে একটি বেত এনে তাদের বলি, ‘তোরা যদি এখান থেকে না যাস তাইলে তোদেরকে বেত দিয়ে মারমু।’ এরপর তারা সবাই চলে যায়।
কাউন্সিলর রহুল আমিন আরও বলেন, এরপর আমিও বাসায় ফিরে আসি। কিন্তু এর ঘন্টাখানেক পর অর্থাৎ রাত তিনটার দিকে হঠাৎ আমার টিনশেড বাসার ওপর বৃষ্টির মত ইটপাটকেল পড়তে থাকে। সেই সঙ্গে আমার গেট, বাসার দেয়াল ও সাঁটার কোপানো হয়। পরে আমি থানা এবং আমার আরও ভাই-ব্রাদারকে খবর দিলে সবাই ছুটে আসে। পরে আমরা পাঁচ-ছয়জন একসঙ্গে ওদেরকে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। এ সময় তারা দুটা হোন্ডা রেখে যায়। পরে পুলিশ এলে তাদেরকে ঘটনার বিস্তারিত জানায়। পুলিশ ওই হোন্ডা দু’টি থানায় নিয়ে যায়। হামলায় ঘটনায় আমি ও আমার পরিবার শঙ্কিত। এটি পরিকল্পিত বলেও মনে করছেন এই কাউন্সিলর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন