মহামারীর কারনে দুই বৈশাখ পেরিয়ে এবার চেনা আয়োজনে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ইউনেস্কো স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মঙ্গল শোভাযাত্রার পীঠস্থান যশোর। তাই শেষ মূহুর্তের ব্যস্ততায় সময় পার করছেন এ জেলার সাংস্কৃতিক কর্মীরা। আর এ উৎসবকে বর্ণিল করতে জেলার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তৈরি করেছে ভিন্ন আঙ্গিকের দাওয়াতপত্রও।
বাংলা বর্ষবরণে যশোরের ঐতিহ্য চার দশকের বেশি সময়ের। এটি সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের সম্মিলিত উৎসব। করোনায় গত দুই বছর নববর্ষের উৎসব ছিল গৃহবন্দী। তাই এবার যেন প্রাণের ছোঁয়া লেগেছে সংস্কৃতি অঙ্গণে। আর এ উৎসব বর্ণিল করতে সেইসাথে পহেলা বৈশাখে বর্ণিল সাজে ঢাক-ঢোলের বাদ্যে উৎসবে মাততে প্রস্তুত হচ্ছে যশোরবাসী; প্রস্তুত হচ্ছে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দান থেকে সকাল ৯টায় যশোরের ঐতিহ্য বজায় রেখে বরাবরের মত বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। দুপুরের মধ্যেই সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। এবছর রমজান মাস উপলক্ষে বিকেলে হচ্ছে না কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যশোরে এবার প্রায় ২৫টি’র বেশি সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের প্রায় ৫শ’ সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে বর্ষবরণকে উৎসবে পরিণত করতে সমতালে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উৎসবের প্রস্তুতিতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে চলছে গান, নাচ, নাটক ও গীতিনাট্যের মহড়া। পাশাপাশি সাজসাজ রবে উৎসবমুখর কর্মব্যস্ততার মঙ্গল শোভাযাত্রার শোভাবর্ধনে।
নৌকা, দোয়েল, কচ্ছপ, বড় আকৃতির সাপ, কুমির, বাঘ, পুতুলসহ নানা রঙের মুখোশে সজ্জিত হয়ে বের হবে এবারের যশোরের মঙ্গল শোভাযাত্রা। তাই প্রস্তুতির শেষ মুহুর্তে চারুপীঠ আট রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও চারুতীর্থের শিল্পীদের তুলির রঙিন আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠছে মঙ্গল শোভাযাত্রার অনুসঙ্গ। অনেকে মিলে বাঁশের চটা দিয়ে তৈরি করছেন বিশাল আকৃতির পুতুল। কাগজ কেটে ফুল, প্যাঁচা, পাখপাখালি গড়ছেন। কেউ বা শোভাযাত্রার বিভিন্ন মুখোঁস রঙ দিয়ে শোভাবর্ধন করছে। গভীর মনযোগে তুলির রঙিন আঁচড়ে শোভাযাত্রার শোভাবর্ধনে ব্যস্ত থাকা চারুপীঠ আট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সদস্য ওবায়েত ইসলাম রাসু জানান, খুব ব্যস্ত। গত ৭দিন ধরে শোভাযাত্রার নানান অনুসঙ্গ তৈরি করছি। যশোর চারুপীঠের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ বলেন, দেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার সূচনা হয় ১৯৮৫ সালে যশোরে। সেই সময়ে ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাহবুব জামাল শামীম দুই সহপাঠীকে নিয়ে যশোরে প্রতিষ্ঠা করেন চারুপীঠ। এই প্রতিষ্ঠানই মঙ্গল শোভাযাত্রার সূতিকাগার। ফলে বাংলা বর্ষবরণে সংগঠনটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে কার্যালয়ে চলছে ব্যাপক তোড়জোড়। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে যতটুকু বর্ণিল করা সম্ভব ততটুকুই করা হবে। যশোরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর বাঙালীর সার্বজনিন উৎসব বাংলা নববর্ষের কোন আয়োজন ছিলো না সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে। এবার বর্ষবরণে সেই প্রতিবন্ধকতা নেই। তাই ঐতিহ্যকে মননে রেখে বর্ষবরণের প্রস্তুতি চলছে যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। এছাড়া যেহেতু বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা সূচনা যশোর থেকে, সেহেতু আমরা বর্ণাঢ্যভাবে মঙ্গলশোভাযাত্রার আয়োজন করতে চাই। সেই হিসাবে ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দান থেকে সকাল ৯টায় যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো একসাথে মিলিত হয়ে শোভাযাত্রা বের করবে। এ বছর উৎসবের মধ্য দিয়ে নববর্ষের বর্ণিল যে আয়োজন তা সফলতা পাবে। বরাবরের মত পৌর উদ্যানে সকাল ৭টায় উদীচী যশোরের আয়োজনে হবে প্রায় আড়াই ঘণ্টার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখ বা বাঙালি সংস্কৃতি পারে আমাদেরকে একত্রিত করতে এবং সকল সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প দূর করতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন