রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদের তীর দখল করে প্রায় ৩০টি ডকইয়ার্ড কারখানা গড়ে ওঠেছে। এর মধ্যে কয়েকটির অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অনুমোদন থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কোন অনুমোদন নেই বলে সংস্থাটির সূত্র জানায়। নদ দখলের পাশাপাশি দূষণেরও অভিযোগ রয়েছে বিআইডব্লিউটিএর সনদ নবায়ন ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই ব্যবসা করা এসব ডকইয়ার্ডের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি নিয়ে। পরিবেশ অধিদফতর, বিদ্যুৎ অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা আর সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই শীতলক্ষ্যা ভরাট করে এসব কারখানা গড়ে উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদের তারাবো থেকে দাউদপুর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটারে নদের সীমানা চিহ্নিত করে ২ হাজার ১২টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ১২৩ টি পিলার নদের সীমানার সঠিক স্থানে বসানো হয়নি বলে আপত্তি জানিয়েছে সংস্থাটি। এসব পিলারগুলোর বেশির ভাগ অতিক্রম করে গড়ে তোলা হয়েছে জাহাজ শিল্পের কারখানা।
জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদের দু’পাড়ে প্রায় ৩০টি জাহাজ শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে অধিকাংশেরই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। এসব কারখানার মালিকরা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মাসে কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যার পূর্বগ্রাম থেকে মুড়াপাড়া পর্যন্ত শামস ডকইয়ার্ড, তানহা ডকইয়ার্ড, আবুল কাশেম ডকইয়ার্ড, আলআমীন ডকইয়ার্ড, শাহজাহান ডকইয়ার্ড, জাকের ডকইয়ার্ড, মালেক ডকইয়ার্ড, মিজান ডকইয়ার্ড, কেএসবি ডকইয়ার্ড, রয়েল ডকইয়ার্ড, ফটিক ডকইয়ার্ড, মনির ডকইয়ার্ড ও আমির ডকইয়ার্ড গড়ে উঠেছে। এসব কারখানার কোনটিরই অনুমতি নেই।
গত কয়েক দিন ঘুরে দেখা যায়, শীতলক্ষ্যা নদের তীরে জাহাজ ও লঞ্চ তৈরির কাজ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব ডকইয়ার্ডে নতুন জাহাজ তৈরির পাশাপাশি পুরনো জাহাজ মেরামতের কাজও চলছে। জাহাজগুলো নদের মধ্যেই নোঙর করে রেখে মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। বালি ফেলে নদ ভরাটের চিত্রও দেখা যায়। জাহাজ তৈরি ও ভাঙার সময় নদেই পুরনো জাহাজের বিভিন্ন অংশ ফেলে রাখা হচ্ছে। পানিতে ভাসতে দেখা যায় ব্যবহৃত জ্বালানি তেলও। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে শিশু, নারী থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা। তাদের কারোরই সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই। গত কয়েক বছরে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
এসব ডকইয়ার্ড নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, শীতলক্ষ্যা দখল করে ডকইয়ার্ডের ব্যবসা চলছেই। ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকে ডকইয়ার্ডগুলো। শব্দদূষণে বাড়িঘরে থাকাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। অনেক ডকইয়ার্ড মালিকরা কৌশলে নদীও দখল করছে। শাহজাহান ডকইয়ার্ডের মালিক শাহজাহান বলেন, আমি নদী দখল করিনি। নদীর তীরে কারখানা তাই অনেকে মনে করে নদী দখল করেছি।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি নতুন এসেছি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবো। অনুমতি না থাকলে পদক্ষেপ নিবো। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফিফা খান বলেন, আমাদের কাছ থেকে কেউ অনুমতি নেয়নি। যারা নদী দখল করে ডকইয়ার্ড করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন