শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। দুর্ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত লঞ্চগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে মালিক পক্ষ দ্রুততম সময়ে লঞ্চ চালু করার দাবি জানিয়েছেন। এ ধারাবাহিকতায় নৌ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জোনের নেতারা। আগামী ৩ এপ্রিল ওই বৈঠকে লঞ্চ চলচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জোনের প্রেসিডেন্ট মো. বদিউজ্জামান বাদল।
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের লঞ্চ চলাচল এখনও বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩ এপ্রিল এ বিষয়ে নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আমাদের নিয়ে বসবেন। যাত্রীদের দুর্ভোগসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দিবেন। আশা করছি সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষে থাকবে। কারণ আমাদের কোনও দোষ নেই। আমাদের কারণে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি।’
বদিউজ্জামান বাদল আরও বলেন, লঞ্চ চালুর বিষয়ে আমরা বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছি। উনি এই চিঠিকে নৌ-মন্ত্রণালয়ে ফরোয়ার্ড করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নৌ-প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমাদের ডাকা হয়েছে। ৩ এপ্রিল আমরা নৌ-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবো এবং আমাদের সমস্যার কথা তুলে ধরবো। ওই বৈঠকে বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন।
এর আগে, ২০ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজ রূপসী-৯ এর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এম. এল আফসার উদ্দিন ডুবে ১০ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর থেকে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়াতে নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঁচটি রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। এই ঘটনার চার দিন পরে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ নৌপথে এসটি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত নামে সি-ট্রাক চালু করা হয়। এর একদিন পরে নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর নৌপথে ঢাকা থেকে আগত ‘এমভি নিউ আরিফ’ নামে দোতলা লঞ্চ চালু করা হয়। তবে নারায়ণগঞ্জের ছোট লঞ্চগুলো অনিরাপদ বলে চলাচলের অনুমতি দেয়নি বিআইডব্লিউটিএ।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও প্রায় একই কথা বলেছেন। মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) নারায়ণগঞ্জের বন্দরে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডে বিআইডব্লিউটিএ'র জন্য চারটি ‘কাটার সাকশান ড্রেজার’ এবং মোংলা বন্দরের জন্য একটি 'বয়া লেয়িং জাহাজ' নির্মাণ কাজের উদ্বোধন শেষে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রতি বছরই নৌ যান চালকদের সঙ্গে আমরা আলোচনা ও বৈঠক করি। বারবার পরামর্শ দেওয়ার পরেও আমাদের নির্দেশনা অমান্য করায় এই দুর্ঘটনা ঘটছে।
ছোট লঞ্চ বন্ধের সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সুপারিশ করেছিলাম ছোট ছোট লঞ্চগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে দেবো। কারণ এগুলো (লঞ্চ) এখন এই জায়গায় নিরাপদ নয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেটা আমরা যথাসময়ে করতে পারিনি। এর জন্য আমাদের আরেকটি খেসারত দিতে হলো। ভবিষ্যতে এই বিধিনিষেধগুলো যেন সঠিককভাবে মানা হয় সেজন্য অধিদফতরকে নির্দেশনা দিয়েছি। নৌ পথে দুর্ঘটনা হচ্ছে বা ভবিষ্যতে আরও হতে পারে। কিন্তু আমরা চাই না, অবহেলার কারণে আর কোনও প্রাণহানি হোক।
তিনি বলেন, জনগণের কথা চিন্তা করেই পদক্ষেপ নিচ্ছি। ছোট লঞ্চ যখন বন্ধ হয়েছে তখন তাৎক্ষণিকভাবে সি-ট্রাক দিয়েছি। আমরা বড় লঞ্চের ব্যবস্থা করেছি। আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনাল থেকে সাতটি রুটে প্রতিদিন ৭০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। সাতটি নৌপথ হলো নারায়ণগঞ্জ-হোমনা উত্তর থানা, নারায়ণগঞ্জ-মতলব থানা, নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ-শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-তালতলা ও নারায়ণগঞ্জ-বাঞ্ছারামপুর। তবে তালতলা ও বাঞ্ছারামপুর নৌপথে নাব্যতার কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। এসব নৌপথে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।
বিআইডব্লিউটিএ'র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মাসুদ কামাল বলেন, লঞ্চ বন্ধের পরে যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সি-ট্রাক সেবা চালু করা হয়েছে। এই নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। যে কারণে সি-ট্রাক চালু করা হয়েছে। সি-ট্রাক এই লঞ্চগুলোর (নারায়ণগঞ্জের লঞ্চগুলোর) তুলনায় নিরাপদ।
বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ-পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) বাবু লাল বৈদ্য জানান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর উদ্যোগে শুক্রবার থেকে নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর নৌপথে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন