রাজশাহীর বাগমারায় এক নব দম্পতির মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসা করে দেয়ার জন্য থানায় ডেকে ধর্ষণ মামলা গ্রহণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ ওই মামলার প্রধান আসামি কলেজ ছাত্র আরমান হোসেনকে গ্রেফতার দেখিয়ে গত মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
পুলিশের এই রহস্যজনক ভ‚মিকার প্রতিবাদে এলাকার লোকজন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার বুজরুককৌড় গ্রামের আনিসুর রহমানের কলেজ পড়–য়া ছেলে আরমান হোসেনের সঙ্গে একই উপজেলার একজন প্রবাসীর স্কুলে পড়া মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। উভয়ের মধ্যে ছয়মাস আগে বিয়ে হয়। এরপর গত অক্টোবর মাসে বৌভাত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে বসবাস শুরু করে। তবে সপ্তাহ খানেক আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়।
এই বিষয়ে কনের পক্ষে বাগমারা থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার বিকেলে সমঝোতার কথা বলে পুলিশ উভয় পক্ষকে থানায় ডাকে। সে মোতাবেক নব দম্পতিসহ তাদের অভিভাবকেরা থানায় আসেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম সমঝোতা বৈঠক থেকে আরমান হোসেনকে ডেকে থানা হাজতে আটকে রাখেন। রাতে তার স্ত্রীর কাছ থেকে একটি ধর্ষণ মামলা গ্রহণ করে গত মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আরমান হোসেনের বাবা আনিসুর রহমান অভিযোগ করেন, পুলিশ থানায় সমঝোতার কথা বলে ডেকে ধর্ষণ মামলা নিয়ে তার ছেলেকে কারাগারে পাঠিয়েছে। তিনি পুলিশের ভ‚মিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, উভয়ের মধ্যে বিয়ে হয়েছে এবং বৌ-ভাতের বড় আয়োজনের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রমাণাদিও তিনি দেখান। এরপর স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা গ্রহণ ও গ্রেফতার করায় পুলিশের ভ‚মিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই বিয়ের কালেমা পড়ানো মৌলবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি উভয় পক্ষের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে বিয়ের কালেমা পড়িয়েছেন।
ওই বিয়ের বরযাত্রী বাগমারা প্রেসক্লাবের সভাপতি আলতাফ হোসেন মন্ডল ও দফতর সম্পাদক আকবর আলী জানান, তারা তৎকালীন বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমানের অনুরোধে তাদের বিয়ের বরযাত্রি ছিলেন। উভয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসাবেই এক সঙ্গে থাকতেন বলে তারা জানান।
স্থানীয় অর্ধশত ব্যক্তি বলেন, বিয়ের পর তিনমাস ধরে আরমান এবং ওই স্কুলছাত্রী এক সঙ্গে বসবাস করে আসছেন। বরপক্ষ বৌ-ভাতেরও আয়োজন করেছে। স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, উভয়ের মধ্যে বিয়ে হয়েছে কী না তা তিনি জানেন না। তাকে থানায় ডেকে মামলা নিয়ে গ্রেফতারের বিষয় এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আসামি আরমান হোসেনকে এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছেন। এই বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে ছাত্রীর মায়ের সঙ্গে কমপক্ষে ২০ বার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে বন্ধ থাকায় কথা বলা যায়নি। অন্য আত্মীয়রাও ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা যায়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন