শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশে একজনও না খেয়ে নেই

অর্থনৈতিক ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকার ৭ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন ‘স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮’-এর সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দেশের একজন মানুষও না খেয়ে নেই। ‘কয়েক দিন আগে একটি গবেষণা সংস্থা বলেছে, বাংলাদেশে এখন প্রবৃদ্ধির হার ৪২ শতাংশ’, এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী হিসেবে মতামত জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘তিনি কয়টি গ্রামে গেছেন, কয়জন মানুষের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে এবং কীভাবে তিনি এ তথ্য সংগ্রহ করলেন সেটা আমাদের জানা দরকার। আমাদের দেশের মানুষের সংখ্যার তুলনায় পাঁচশ, সাতশ কিংবা তিনশ মানুষের মতামত পুরোটাই অযৌক্তিক। আপনারাও (সাংবাদিক) গ্রামে যাচ্ছেন, শহরে যাচ্ছেন। আপনাদের ধারণা কী? আমাদের দেশে গরিবের হার বেড়ে গেছে?
আপনাদের হিসাবে দারিদ্র্য বেড়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অতি কাছাকাছি সময়ে আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরো এটার কাজ করেছে বলে আমার মনে হয় না। এটা কোভিডের আগে যে সব ফিগার ছিল, সেগুলো আমরা ব্যবহার করি। পরে তারা যখন আবার জরিপ চালাবে তখন আমরা আবার লেটেস্ট পজিশন জানতে পারব।

গতকাল অর্থনৈতিক ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। অনলাইনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সভায় এক হাজার ১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদদিকদের জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড থেকে ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক স¤প্রসারণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় ২৩ হাজার ৬৫০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি (এসপিসি পোল) ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো সরবরাহ করবে ‘বাংলাদেশ মেশিন টুল্স ফ্যাক্টরি লিমিটেড’। এতে ব্যয় হবে ৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

তিনি জানান, বৈঠকে ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ সদস্যদের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ডেমরা পুলিশ লাইন্স এলাকায় ২০তলা আবাসিক ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজের ঠিকাদার নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যৌথভাবে এ কাজটি পেয়েছে ‘দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড’ ও ‘দ্য অরবিটাল বাংলাদেশ’। এতে ব্যয় হবে ৮০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, বৈঠকে শহর এলাকায় ‘স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য উন্নত জীবন ব্যবস্থা (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের পরামর্শক সেবা ব্যয় বাড়ানোর একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘আইএমসি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’। এতে পরামর্শক ব্যয় বাড়ছে ১৩ কোটি ৪ লাখ টাকা।

তিনি জানান, বৈঠকে ‘সুনামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা-আজমিরিগঞ্জ-হবিগঞ্জ মহাসড়কের শাল্লা জলসুখা সড়কাংশ নির্মাণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডবিব্লিডি-০২-এরপূর্ত কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যৌথভাবে এ কাজটি করবে ‘এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড’, ‘মেসার্স জন্মভ‚মি নির্মাণ’ ও ‘অহিদুজ্জামান চৌধুরী (এমএনও)’। এতে ব্যয় হবে ১৫১ কোটি ২২ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রী জানান, বৈঠকে ‘চার-লেনে উন্নীত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক (এন-১) (দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম অংশ)-এর চার বছরের জন্য পারফরম্যান্স বেইজড অপারেশন ও দৃঢ়করণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-০১-এর আওতায় চট্টগ্রাম অংশের পূর্ত কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ কাজটি করবে ‘তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড’। এতে ব্যয় হবে ২৯০ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, বৈঠকে ‘চার-লেনে উন্নীত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক (এন-১) (দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম অংশ)-এর চার বছরের জন্য পারফরম্যান্স বেইজড অপারেশন ও দৃঢ়করণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-০১-এর আওতায় কুমিল্লা অংশের পূর্ত কাজ সম্পাদনে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ কাজটি করবে যৌথভাবে ‘আবদুল মোনেম লিমিটেড’ ও ‘স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড’। এতে ব্যয় হবে ৫৫৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রী জানান, বৈঠকে ‘ক্রস-বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (বাংলাদেশ)’ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বাড়ানোর একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী পরামর্শক সেবা বাবদ ১৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ছে। এ প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে রয়েছে যৌথভাবে জাপানের ‘ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্টস গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড’ ও ‘পাডেকো কোম্পানি লিমিটেড’ এবং এসএমইসি জেবিএসএল ডিডিসি বিসিএল’।

‘স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮’-এর সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন: ‘স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮’-এর সংশোধনী প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’।
জানা গেছে, সংশোধনী নীতিমালার আওতায় দেশে বৈধ উপায়ে অপরিশোধিত বা আকরিক স্বর্ণ ও আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। বিদ্যমান নীতিমালায় স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কার আমদানির বিধান থাকলেও অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানির বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। এ প্রেক্ষিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি করে তা নিজস্ব পরিশোধনাগারে পরিশোধন-পূর্বক বিভিন্ন গ্রেডের স্বর্ণবার ও স্বর্ণমুদ্রা তৈরি, বিপণন ও রপ্তানিতে আগ্রহ প্রকাশ করে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রসঙ্গত: ভারত, আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো অপরিশোধিত স্বর্ণ পরিশোধন করে থাকে। এজন্য উন্নত প্রযুক্তি, অত্যাধুনিক মেশিনারিজ ও দক্ষ জনবলের প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অপরিশোধিত/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ পরিশোধন করার মতো কোনো পরিশোধনাগার নেই।

অনুমোদিত সংশোধিত নীতিমালায় স্বর্ণ পরিশোধনে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিশোধনাগার স্থাপন ও স্বর্ণ মানের বিশুদ্ধতার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়। এদিকে ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিদ্যমান স্বর্ণ নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কার আমদানির লক্ষ্যে ডিলার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি গাইড-লাইন নির্ধারণ করেছে। প্রণীত গাইড-লাইনের আলোকে স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কার আমদানিতে স্বর্ণ খাতের ১৮টি প্রতিষ্ঠান ও ১টি ব্যাংককে ‘গোল্ড ডিলার’ হিসেবে লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ডিলারের মাধ্যমে বর্তমানে দেশে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি শুরু হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন