ভারতীয় নৌবাহিনী তার সমুদ্রসীমা পেরিয়ে বৃহত্তর যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে মনোনিবেশ করেছে। তারা ১৫০টি বিমানবাহী ৩টি জাহাজ তৈরিকে কেন্দ্র করে নিজেদের নৌশক্তি পুনর্গঠনের মাঝামাঝি রয়েছে। বিষয়টিকে চিত্তাকর্ষক বলে মনে হলেও, শিগগিরই এটি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। ৩টি বিমানবাহী জাহাজের মধ্যে প্রাক্তন-সোভিয়েত আইএনএস বিক্রমাদিত্য নামে মাত্র বর্তমানে মাত্র একটি সক্রিয়। দ্বিতীয়টি আইএনএস বিক্রান্ত সমুদ্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে রয়েছে এবং ২০২২ সালের দিকে নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার কথা রয়েছে। উভয় জাহাজের ব্যয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং তৃতীয়টি আইএনএস বিশাল, যা এখনও বাস্তবে রূপ নেয়নি।
অন্যদিকে, চীনের বিশাল জাহাজ নির্মাণের কর্মসূচি শতভাগ সফল এবং পিএলএ নৌবাহিনী প্রতিটি মোড়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর তুলনায় আরও বেশি সংখ্যক এবং আধুনিক সাবমেরিনের পাশাপাশি, বৃহত্তর এবং দ্রুত বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ এবং করভেটস (উপকূলীয় টহলের জন্য ব্যবহৃত) বানিয়ে বাজিমাত করে দিয়েছে। এছাড়া, চীনের নিজস্ব দুটি বিমানবাহী বহর তৈরি করার পরেও দেশটির নৌবাহিনী ছোট, দ্রুত, ভারী অস্ত্রসজ্জিত এবং নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত জাহাজ তৈরির ওপরও মনোনিবেশ করেছে, যা ভবিষ্যতের যে কোনও যুদ্ধ পরিকল্পনার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের পণ্য সরবরাহের প্রধান পথটি আন্দামান সাগর এবং সরু মালাক্কা প্রনালীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। এটি চীনের একটি স্পর্শকাতর অংশ হওয়ায় দেশটি তা রক্ষা করার এবং সরবরাহের পথগুলিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। বিষয়টি তার বিশাল এবং চলমান অবকাঠামো প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর সাথে জড়িত যেখানে পাকিস্তান এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরে (সিপিসি) কোটি কোটি ডলারের চীনা বিনিয়োগ রয়েছে। গাওয়াদর বন্দর থেকে উত্তরে গিলগিট ও বালতিস্তান দিয়ে সব রাস্তা এবং রেল যোগাযোগের সমন্বয়ে এটি চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের কাশগারমুখী মহাসড়কগুলোতে সংযুক্ত হবে। প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরের মধ্যে একটি বড় শিপিং চ্যানেল হিসাবে কাজ করা মালয় উপদ্বীপ এবং সুমাত্রার মধ্যবর্তী সমুদ্রের এ রুটটি মালাক্কা প্রণালীতে সহজেই ব্যাহত হওয়া সরবরাহ চেইনের অতি প্রয়োজনীয় বিকল্প।
চীন সমগ্র ভারত মহাসাগরে, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে বিশাল অবকাঠামো এবং বন্দর প্রকল্প তৈরি করেছে। দেশটি মিয়ানমারে তার অবস্থান সুরক্ষিত করেছে এবং সে দেশের বন্দরের সুযোগ-সুবিধাগুলো পুনর্র্নিমাণে সহায়তা করেছে, যা য্দ্ধুকালীন সময়ে চীনা নৌ-জাহাজগুলোর সম্ভাব্য আশ্রয় এবং পুনর্সরবরাহ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে। ভারত মালাক্কা প্রণালীর কাছাকাছি নিজস্ব নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে এবং চীনের ধুমকেতুর মতো উত্থানে শঙ্কিত ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকার একটি চার-দেশীয় জোটকে সম্প্রতি পুনরুজ্জীবিত করেছে। যে কোনো সঙ্ঘাতের ক্ষেত্রে ভারতের পাশে তার কূটনীতিক মিত্ররা রয়েছে, চীনকে এ স্পষ্ট বার্তা দিতে গত নভেম্বরে এ ৪টি দেশই পূর্ব ভারত মহাসাগরে বৃহদাকারের অত্যাধুনিক নৌ মহড়ায় অংশ নেয়।
তবে একমাত্র ভারতই যে বাহির্সমর্থন লাভ করবে, তা নয়। পাকিস্তান কেবল অর্থনৈতিকভাবেই নয়, চীনের সামরিক বাহিনীর সাথেও গভীরভাবে আবদ্ধ। পাকিস্তানের বিমান তৈরিতে চীনের সহযোগিতা তুলনামূলকভাবে স্বল্প ব্যয়ের সক্ষম যোদ্ধা বিমান জেএফ-১৭ থান্ডারের জন্ম দিয়েছে, যার ১শ’ ১১টি এখন পাকিস্তান বিমান বহরের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। এগুলোর পারফরম্যান্স রেকর্ডটি এতটাই সফল যে, এখন রফতানির জন্য বিবেচিত হচ্ছে।
পাকিস্তান বর্তমানে যৌথভাবে চীনের সশস্ত্র ড্রোন উইং লুং ২ তৈরি করছে, যার মধ্যে ৪৮টি পাকিস্তান কামরাতে তার অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্সের জন্য তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তানের সম্পৃক্ততায় চীনের সাথে ভারতের সংঘর্ষ এবং দু’দেশের মধ্যে সম্ভাব্য বৃহত্তর যুদ্ধের ফলাফলের বিষয়ে শঙ্কিত ভারত এখর তার সমরশক্তি এবং মিত্রদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। সূত্র: আল জাজিরা। (সমাপ্ত)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন