পাকিস্তান-চীন সম্পর্কিত স্টিয়ারিং কমিটি তার প্রথম বৈঠকে প্রদেশগুলোকে এনে তার সদস্যপদ সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরকে (সিপিসি) আরো দুটি মন্ত্রিসভা এবং বিধিবদ্ধ সংস্থার উপস্থিতিতে তার ভূমিকা স্পষ্ট করে জানিয়েছে। চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের সব দিক দেখাশোনার জন্য নির্ধারিত এ স্টিয়ারিং কমিটি গত শুক্রবার প্রথমবারের মতো পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রী আসাদ উমরের সভাপতিত্বে বৈঠক করে।
আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল সিপিইসি, সিপিইসি কর্তৃপক্ষ এবং পাকিস্তান-চীন সম্পর্ক পরিচালন কমিটির মন্ত্রিসভা কমিটির ভূমিকা সংজ্ঞায়িত করা। বৈঠকে কমিটি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে প্রদেশ, আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর এবং গিলগিত-বালতিস্তানকে কমিটির সদস্যদের প্রধান সচিব করার জন্য সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওমর। তিনি এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের সাথে আলাপকালে বলেন, ‘প্রথম সভার উদ্দেশ্য ছিল সিপিইসি ও সিপিসি কর্তৃপক্ষের মন্ত্রিপরিষদ কমিটির উপস্থিতিতে স্টিয়ারিং কমিটির ভূমিকার সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা দেয়া’।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক্সপ্রেস নিউজের প্রোগ্রামে, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সিনেটর মুশাহিদ হুসেন সৈয়দ বলেছিলেন যে, স্টিয়ারিং কমিটি সিপিসি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ক্ষুণ্ন করবে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেউ কেউ নতুন স্টিয়ারিং কমিটির ভূমিকা সম্পর্কে স্পষ্টতা চেয়েছিলেন বলে সভার অপর অংশগ্রহণকারীরা বলেন।
মন্ত্রী বলেন যে, সিপিইসি কর্তৃপক্ষ সিপিসি-র তত্ত্বাবধান করবে, তবে স্টিয়ারিং কমিটি একটি আন্তঃসংযোগ সংস্থা হয়ে সিপিসি-র অগ্রগতির ক্ষতি করতে পারে এমন বিষয়গুলোর সমাধান করবে। উমর বলেন, সিপিসি সম্পর্কিত মন্ত্রিপরিষদ কমিটি নীতিগত গাইডলাইন সরবরাহ করবে। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে উমর স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, সিপিসি কর্তৃপক্ষকে গুরুত্বহীন করার জন্য পাকিস্তান-চীন সম্পর্কিত স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, স্টিয়ারিং কমিটির মাধ্যমে চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আপত্তি নেই। সিপিইসি কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান স্টিয়ারিং কমিটির প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সূত্রগুলো জানিয়েছে যে, উমর দৃঢ়ভাবে বলেছেন, স্টিয়ারিং কমিটির উদ্দেশ্য নির্দিষ্টভাবে কেবল সিপিসিই নয়, বরং এটি সব ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদারে কাজ করবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জারি হওয়া একটি সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান-চীন সম্পর্ক পরিচালন কমিটি প্রথম বৈঠকে ‘কমিটির ক্ষেত্র এবং যুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছে’।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সম্প্রতি পাকিস্তান-চীন সহযোগিতা জড়িত প্রকল্প ও উদ্যোগ বাস্তবায়নে আরো গতি আনতে পাকিস্তান-চীন সম্পর্ক পরিচালনা কমিটি গঠন করেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলছে, উচ্চ পর্যায়ের ফোরাম প্রতিষ্ঠা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গিতে পাকিস্তান-চীন সম্পর্কের বিশেষ মর্যাদার প্রতিফলন।
এতে যোগ করা হয়েছে, বৈঠকে কমিটির কার্যপ্রণালী ও রেফারেন্সের শর্তাদি (টিওআর) নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয় এবং পাকিস্তান-চীন সম্পর্ক আরো গভীর করতে কমিটিকে কীভাবে আরো কার্যকর ও দক্ষ করা যায় সে সম্পর্কে পরামর্শও চেয়েছিল।
১৫ সদস্যের এই স্টিয়ারিং কমিটিতে পরিকল্পনা কমিশনের উপ-চেয়ারম্যান, পরিকল্পনা সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, অভ্যন্তরীণ সচিব, রেলপথ সচিব, বিদ্যুৎ সচিব, অর্থ সচিব, জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা, সিপিসি কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং গওয়াদার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- যৌথ স্টাফ সদর দফতরের মহাপরিচালক, সাধারণ কর্মী প্রধান/সামরিক অভিযানের মহাপরিচালক, কর্মচারী নৌ সদর দফতর এবং আইএসআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল ইন্টেলিজেন্স / বিশ্লেষণ।
প্রাথমিক ভাবে ৪৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে পাকিস্তান ও চীন ছয় বছর আগে সিপিইসি চালু করেছিল। পরে বাড়িয়ে ৬০ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। তবে মূলত পিএমএল-এন সরকারের আমলে প্রকৃত বিনিয়োগ এর চেয়ে অনেক নিচে ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মন্ত্রিপরিষদের কাছে সিপিইসি কর্তৃপক্ষের উপস্থাপনায় বলা হয়, পাইপলাইনে থাকা প্রকল্পগুলোর অংশ ২৮ মিলিয়ন ডলার। এখনও অবধি ১৩ বিলিয়ন ডলারের ১৭টি প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রায় ২১টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে যাতে ব্যয় হয়েছে ১২ বিলিয়ন ডলার।
কমিটির রেফারেন্সের শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে একাধিক ডোমেনের অধীনে চীন-পাকিস্তান সহযোগিতার অগ্রগতি তদারকি করা এবং নেতৃত্ব দেওয়া, বিলম্ব এড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা এবং অনুসরণ বাস্তবায়ন এবং প্রতিক্রিয়া সিস্টেম তৈরি করা। প্রকল্পের সমন্বয়, চূড়ান্তকরণ ও সম্পাদনের পথে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সৃষ্টি এবং বাধা ও প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য এ স্টিয়ারিং কমিটিও দায়বদ্ধ থাকবে। মন্ত্রী কমিটির সদস্যদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, কমিটির বৈঠকে তাদের ব্যক্তিগতভাবে অংশ গ্রহণ করা উচিত এবং আলোচনাকে ফলপ্রসূ রাখার স্বার্থে তাদের অধীনস্থদের প্রেরণ করা উচিত নয়। সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন