পাকিস্তানের নৌবাহিনীতে প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে চীনে তৈরি নতুন যুদ্ধজাহাজ। সোমবার পাকিস্তানের নৌবাহিনীতে যুক্ত হয় পিএনএস টুঘ্রিল নামের এই জাহাজ। এটি পাকিস্তানের নৌবাহিনীতে যুক্ত হতে যাওয়া চারটি ফ্রিগেটের প্রথমটি।
পাকিস্তান নৌবাহিনীর সংবাদ বিবৃতির উল্লেখ করে এতে বলা হয়, সোমবার করাচিতে পাকিস্তান নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ডে বহুমাত্রিক কাজে ব্যবহারযোগ্য পিএনএস টুঘ্রিল ফ্রিগেটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের জুনে এই যুদ্ধজাহাজের চারটি সরবরাহের জন্য চীনের সঙ্গে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে পাকিস্তান।
২০২০ সালের আগস্টে সাংহাইয়ে এই জাহাজ চালু করা হয়েছিল। আর ২০২১ সালের নভেম্বরে তা পাকিস্তান নৌবাহিনীর কাছে সরবরাহ দেয়া হয়েছে। চায়না স্টেট শিপ বিল্ডিং করপোরেশন এই জাহাজের নির্মাতা। চীন এ যাবত যেসব যুদ্ধজাহাজ রপ্তানি করেছে তার মধ্যে এই ফ্রিগেটটি সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে অত্যাধুনিক সারফেস কমব্যাট ভ্যাসেল। জাহাজটি সরবরাহ করার সময় এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে নির্মাতারা।
চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (সিপিইসি) নিরাপত্তা জোরদার করতে এই যুদ্ধজাহাজ সহায়ক বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। তিনি চীন ও পাকিস্তানের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, এই যুদ্ধজাহাজের কারণে ওই করিডোরে সামুদ্রিক রুটে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।
তিনি বলেছেন, এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ গভীর সম্পর্কের প্রকাশ ঘটেছে। এর মধ্য দিয়ে সময়ের পরীক্ষিত ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্কের সহযোগিতারও প্রকাশ ঘটেছে। প্রতিদিনই এই দুটি দেশের মধ্যে বন্ধন শক্তিশালী থেকে শক্তিশালী হতে থাকবে। এক্ষেত্রে জোর দেয়া হবে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও শান্তি।
পাকিস্তান নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল মুহাম্মদ আমজাদ খান নিয়াজি ওই অনুষ্ঠানে বলেছেন, টাইপ ০৫৪এ/পি হলো একটি উল্লেখযোগ্য প্লাটফর্ম। এতি রাষ্ট্রের অস্ত্র ও সেন্সর হিসেবে কাজ করবে। এই যুদ্ধজাহাজটি বহুমাত্রিক হুমকির মতো পরিবেশে যুদ্ধ করতে পারে। এটি প্রয়োজনীয় বহুমাত্রিক ডোমেইন সৃষ্টি করে ভূমি থেকে ভূমিতে সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র, সাবমেরিন বিরোধী টর্পেডোর বিরুদ্ধে শক্তি সঞ্চয় করে কার্যকর হতে পারে।
একই সঙ্গে যুদ্ধ ব্যবস্থাপনা, ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ার ব্যবস্থাও আছে এতে। যা সমসাময়িক নৌপথে যুদ্ধে চলমান প্রবণতায় পাকিস্তান নৌবাহিনীকে সক্ষম করে তুলবে। এ সময় পিএনএস টুঘ্রিলের ট্রায়াল এবং কমিশনিংয়ে সমর্থন দেয়ার জন্য চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভির কমান্ডার এডমিরাল ডং জুন’কে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পাকিস্তানি নৌবাহিনী প্রধান।
এর বাইরে দুই দেশের মধ্যে আরো যেসব নৌবিষয়ক বড় প্রকল্পের সহযোগিতা ও সমন্বয় নিয়ে কাজ হচ্ছে তার মধ্যে আছে এফ-২২পি ফ্রিগেট। এর সঙ্গে আছে অর্গানিক জেড-৯ হেলিকপ্টার, জরিপ চালানো পিএনএস বেহর মাসাহ, আজমত-শ্রেণির দ্রুত আক্রমণে সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্র এবং হাঙর শ্রেণির সাবমেরিন।
এ নিয়ে ২০২১ সালে গ্লোবাল টাইমসে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন পাকিস্তানি নৌবাহিনী প্রধান নিয়াজি। তিনি বলেছিলেন, আটটি হাঙর শ্রেণির সাবমেরিন, চারটি টাইপ ০৫৪এ/পি যুদ্ধজাহাজ, মধ্যম উচ্চতায় মনুষ্যবিহীন যুদ্ধ বিষয়ক যান চীনের কাছ থেকে কেনার চুক্তি করেছে পাকিস্তান নৌবাহিনী। সূত্র: গ্লোবাল টাইমস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন