ভ্রাতৃঘাতী সঙ্ঘাত, হানাহানি, অপতৎপরতা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এসব কাজে কোনো প্রকার সহযোগিতা করা, দূর থেকে কোনো প্রকার ইন্ধন যোগানো, বিভেদের পালে হাওয়া যোগানো কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। মুসলিম সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ জেগে উঠে মহান আল্লাহ তায়ালার অসীম রহমত ও দয়ায়। এখন কেউ যদি এমন সব তৎপরতার সাথে জড়িয়ে যায়, যে কারণে মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে পড়ে সঙ্ঘাত, উস্কে উঠে বিভেদ তাহলে আল্লাহ তায়ালার কাছে সে একজন জঘন্য অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে।
সুরা হুজরাতের ৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘মুমিনদের দুই দলে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে, অতঃপর তাদের একদল অপর দলকে আক্রমণ করলে আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে, যদি তারা ফিরে আসে তবে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’
এ আয়াতে যারা বিভেদ সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে মুসলিম সমাজকে যুদ্ধ ঘোষণা করতে বলা হয়েছে। যদিও এতে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, নতুন করে ফেতনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে, তথাপি আল্লাহ তায়ালা কেন এই কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন? কারণ, মুসলিম সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানে ঝগড়া-ফাসাদ ছড়িয়ে দেয়া আরো বড় ধরনের অপরাধ।
আজকের সমাজে কতিপয় মানুষ আছে যাদের কাজই হলো দ্বন্দ্ব লাগানো। সমাজে এক ধরনের মানুষ আছে এই ঝগড়া লাগিয়ে আনন্দ পায়। এর মধ্যে নিজেদের আয়-উন্নতি অনুসন্ধান করে। বিশেষ করে কতিপয় রাজনীতিবিদ, আইনবিদ এরা এতটাই নোংরা মানসিকতার যে, তারা চেষ্টা করে যে কোনোভাবে সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে যেন ঝগড়া লেগেই থাকে। তারা সমাধানের পথে না গিয়ে কিভাবে ঝগড়া আরো বাড়বে, তার চেষ্টা করে। মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে দ্ব›দ্ব জিইয়ে রাখার উপাদান তৈরি করে দেয়। তারা আল্লাহ তায়ালার দরবারে কী জবাব দিবে?
ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত সমাজ শক্তিশালী সমাজ। যে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা নেই, সে সমাজের মানুষ চরম অশান্তিতে ভুগতে থাকে। তাদের অন্যরা সহজেই ব্যবহার করতে পারে। এটা শুধু পরিবারের মধ্যেই সীমিত নয়, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্রই কুরআনিক এই নির্দেশনা প্রযোজ্য। কোনোভাবে এর ব্যত্যয় ঘটে এমন কোনো কাজ কোনো ঈমানওয়ালা করতে পারে না। পবিত্র কুরআনে সকল মুমিনকে পরস্পরে ভাই হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া হতে পারে। এটা অসম্ভব নয়।
কিন্তু কোনো কারণে ঝগড়া হলে অন্য ঈমানদারদের কাজ হলো সেটা মিটিয়ে দেয়া। দূর করা। সমঝোতা করে দেয়া। যে কোনোভাবেই হোক ভাইয়ে-ভাইয়ে, সমাজে-সমাজে, পাড়ায়-পাড়ায় ছড়িয়ে পড়া ভুল বোঝাবুঝি, রেষারেষি, আক্রোশ, প্রতিহিংসা ইত্যাদি বিষয়গুলো দূরীভূত করা। এটা ঈমানী দায়িত্ব। অনেক পুণ্যের কাজ। আমাদের সমাজে কিছু ইবাদতগুজার মানুষকে দেখা যায়, যারা বাহ্যিকভাবে মনে হয় খুব ভালো মুমিন, হাতে তাসবীহ, প্রথম কাতারে নামায, বছরে বছরে হজও করেন, অথচ তার ভেতরটা থাকে খুবই অপরিষ্কার। এরা সমাজে শুধু পেজগি লাগায়। ঝগড়ায় ইন্ধন দেয়।
পবিত্র কুরআন এ জন্যই ঘোষণা করেছে যে, তোমাদের মধ্যে সেই অতি উত্তম যে তাকওয়াবান। তাকওয়াবান বলতে স্বশাসিত মানুষকে বোঝায়। আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী মানুষকে বোঝায়। যে অন্যায়কে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেয় না। নিজে অন্যায় করে না, কেউ অন্যায় করলে সেটা প্রশ্রয় দেয় না। উপরন্তু কোথাও অন্যায় হতে দেখলে তা সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করে।
আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভালো মানুষ সাজতে পছন্দ করি, কিন্তু ভালো মানুষ হতে পছন্দ করি না। অন্যের দোষ ধরতে অভ্যস্ত হলেও নিজের দোষ দেখতে পাই না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমাদের মুসলিম সমাজকে সুন্দরভাবে পরিচালনায় সাহায্য করুন। তাঁর অসীম দয়ায় আমাদের পরস্পরে মিলে-মিশে একসাথে থাকার তৌফিক দান করুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন