শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্পে ভারত বাগড়া দিচ্ছে কেন?

ড. মইনুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৮ এএম

সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় করা একটি খবর হলো, প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত হয়ে যাওয়া সত্তে¡ও ভারতের প্রবল আপত্তির মুখে সেটা অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপন করা হচ্ছে না। প্রায় তিন বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্প প্রণয়নের জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-কে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, যাতে ‘চীনের দুঃখ’ হিসেবে একদা বিশ্বে বহুল পরিচিত হোয়াংহো নদী বা ইয়েলো রিভারকে চীন যেভাবে ‘চীনের আশীর্বাদে’ পরিণত করেছে ঐ একই কায়দায় বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর জনগণের জন্য প্রতিবছর সর্বনাশ ডেকে আনা তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনাকেও একটি বহুমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা যায়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে সাড়া দিয়ে সম্পূর্ণ চীনা অর্থায়নে প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পর প্রকল্প প্রস্তাবটি চীনের পক্ষ থেকে কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একই সাথে চীন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে ঋণ প্রদানের প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশও ঐ প্রস্তাব গ্রহণ করে।

প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্পে বাংলাদেশের সীমানার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর ১১৫ কিলোমিটারে ব্যাপক খনন চালিয়ে নদীর মাঝখানের গভীরতাকে দশ মিটারে বাড়িয়ে ফেলা হবে এবং নদীর প্রশস্ততাকে ব্যাপকভাবে কমিয়ে ফেলা হবে। একইসাথে, রিভার ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক ভূমি উদ্ধার করে চাষাবাদের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। নদীর দুই তীর বরাবর ১১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে। উপযুক্ত স্থানে বেশ কয়েকটি ব্যারেজ-কাম-রোড নির্মাণ করে নদীর দু’তীরের যোগাযোগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বর্ষাকালে প্রবাহিত নদীর বিপুল উদ্বৃত্ত জলরাশি সংরক্ষণের জন্য জলাধার সৃষ্টি করে সেচখাল খননের মাধ্যমে নদীর উভয় তীরের এলাকার চাষযোগ্য জমিতে শুষ্ক মৌসুমে সেচের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। উপরন্তু, নদীর উভয় তীরের সড়কের পাশে ব্যাপক শিল্পায়ন ও নগরায়ন সুবিধাদি গড়ে তোলা হবে।

ইন্টারনেটে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির বর্ণনা জেনে আমার মনে হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সত্যিসত্যিই তিস্তা প্রকল্প বাংলাদেশের সবচেয়ে দারিদ্র্য-পীড়িত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর জনজীবনে একটা যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটাতে সমর্থ হবে। আমি প্রকল্প প্রস্তাবের অনুমোদন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি সেজন্যই অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্রতিবেদনে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পটির অনুমোদন হয়ে যাবে।

কিন্তু, নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারী তিন মাস প্রকল্প-প্রস্তাবের কোন নড়াচড়া না দেখে খবরাখবর নিয়ে জানা গেল, এই প্রকল্পে বাগড়া দিচ্ছে ভারত। ভারত নাকি এই প্রকল্পে চীনের অংশগ্রহণকে তাদের দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক ঘোষণা করে বাংলাদেশকে প্রকল্প বাতিল করার জন্য সরাসরি চাপ দিয়ে চলেছে।

ভারতের দাবি, তাদের শিলিগুড়ি করিডরের ‘চিকেন নেকের’ এত কাছাকাছি তিস্তা প্রকল্পে কয়েকশ’ বা হাজারের বেশি চীনা নাগরিকের অবস্থানকে ভারত মেনে নেবে না। অতএব, বাংলাদেশকে এই প্রকল্প থেকে সরে আসতে বলা হচ্ছে। ভারত নাকি বাংলাদেশ আশ্বাস দিয়েছে, আগামী মার্চ-এপ্রিলে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জীকে ক্ষমতা থেকে হটানো গেলে ২০১১ সাল থেকে আটকে থাকা ‘তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি’ স্বাক্ষরে ভারতের আর কোন বাধা থাকবে না। ভারতের মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন খবর থেকে বোঝা যাচ্ছে, গত অক্টোবরে বাংলাদেশে এসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা হয়তো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এই ‘সন্দেশ’ দিয়ে গেছেন!

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস এসোসিয়েশান, বাংলাদেশ (ডিক্যাব)-এর এক আলোচনা সভায় দাবি করেছেন,‘ভারত বাংলাদেশের সাথে ‘দাদাগিরি’ করে না’। উপরের ব্যাপারটা কি ‘ভারতের দাদাগিরি’ নয়? একটা নদীখনন প্রকল্পে নিয়োজিত চীনা প্রকৌশলী এবং টেকনিশিয়ানরা কেন ভারতের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে? ওরা কি তাহলে প্রকৌশলীর ছদ্মবেশে চীনা সৈন্য-সামন্ত-গোয়েন্দা? যে এলাকা দিয়ে তিস্তা নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে সেখান থেকে ‘শিলিগুড়ি চিকেন নেক করিডর’ অনেক দূরে। আর, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার অভ্যন্তরে প্রকল্প এলাকায় অবস্থানরত চীনা নাগরিকরা ভারতে কীভাবে গোয়েন্দা তৎপরতা চালাবে? তিস্তা নদীর দক্ষিণ-পূর্বদিকের ভাটিতে যতই প্রকল্পের কাজ এগোবে ততই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকা থেকে প্রকল্প এলাকার দূরত্ব বাড়তে থাকবে।

আমার মতে, ভারতের এ-ধরনের আবদার ‘ক্লাসিক দাদাগিরি’, যে ধরনের ‘দাদাগিরি’ দেখিয়ে তারা ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভেটো দিয়ে চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশের সোনাদিয়ায় নির্মিতব্য গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি ভন্ডুল করে দিয়েছিল। ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে একটি ভাল বিকল্প গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সুযোগ পেয়ে যাওয়ায় এখন জাপানের অর্থায়নে ঐ বন্দরের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ ও চীনের দীর্ঘদিনের প্র্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়-বিক্রয়ের সম্পর্কটি বরাবরই ভারতের কাছে ‘আপত্তিকর’। বছর তিনেক আগে ভারত সরাসরি উষ্মা প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে দুটো সাবমেরিন সংগ্রহের পর।

ভারতকে বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ বা শত্রুপক্ষ বিবেচনা করে এই দুটো সাবমেরিন ক্রয় করার প্রশ্ন অবান্তর হলেও ভারত পুরো ব্যাপারটায় তাদের অসম্মতির বিষয়টি মোটেও গোপন করেনি। উপরন্তু, ২০১৭ সালের ৭-১০ এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ভারত একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বাংলাদেশের ওপর প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করেছিল। যেটাকে আমি ভারতের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশকে তার প্রভাব বলয়ে বন্দী করে ফেলার একটা আধিপত্যবাদী কৌশলই বলব। চীনের সাথে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত নীতি গ্রহণের সার্বভৌমত্বকে খর্ব কিংবা হরণ করার জন্যেই মোদি সরকার এহেন প্রতিরক্ষা চুক্তি বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মত ‘আঞ্চলিক দাদাগিরি’র (regional hegemony) মরিয়া প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।

অতএব, যে প্রশ্নটির জবাব আমাদের রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন মহলকে দিতেই হবে তাহলো, ভারতের এহেন দাদাগিরির কাছে নতজানু হওয়ার জন্য কি ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে? শেখ হাসিনা কি ভয় পাচ্ছেন যে ভারতের এসব অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করলে ভারত তাঁর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবে? ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র, কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার কোন অধিকার ভারতের থাকতে পারে না। ভারতের অন্যায় চাপাচাপি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের সীমা-লঙ্ঘন, যা প্রত্যেক দেশপ্রেমিক বাঙালির জন্য মর্যাদাহানিকর।

ভারতের কাছে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক কোন দিক থেকেই বাংলাদেশ নির্ভরশীল নয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোনভাবেই ভারতের দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভর করে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন আর খয়রাত-নির্ভর লজ্জার অবস্থানে নেই। এদেশটি এখন খাদ্যশস্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, খাদ্যশস্যে উদ্বৃত্ত দেশের কাতারে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। দেশের আমদানি বিল রফতানি আয়ের চাইতে এখনো বেশি থাকায় যেটুকু বাণিজ্য ভারসাম্যের ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে তা দ্রুতই কমে যাচ্ছে। ঐ বাণিজ্য ঘাটতি মেটানোর জন্যে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স যথেষ্ট প্রমাণিত হয়ে চলেছে, যার ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি, করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবেলায়ও বাংলাদেশ ভারতের তুলনায় অনেক বেশি সফল হয়েছে।

ভারত থেকে বাংলাদেশে রফতানির বার্ষিক প্রবাহ সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মত, অথচ বাংলাদেশ থেকে ভারতে বছরে রফতানি হয় মাত্র ৬৮ কোটি ডলারের পণ্য। উল্টোদিকে, বাংলাদেশে যেসব ভারতীয় অভিবাসী কর্মরত রয়েছে তারা প্রতি বছর আরো প্রায় চার থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স হুন্ডির মত অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে ভারতে পাঠাচ্ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। অথচ, ভারত থেকে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য রেমিট্যান্সই আসে না। এমনকি, বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগকেও এখনো উল্লেখযোগ্য বলা যাবে না। তাহলে বারবার ভারত তাদের সংকীর্ণ ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য কীভাবে বাংলাদেশের নীতি-প্রণেতাদের হাত মোচড়ানোর ধৃষ্টতা দেখিয়ে যাচ্ছে? চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত-বিরোধ সত্তে¡ও ভারত চীনের সাথে ২০১৯ সালে ৮৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক বাণিজ্য চালিয়েছে। অথচ, বাংলাদেশ নিজের অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য চীন থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিতে গেলেই ভারত বারবার নানা অজুহাতে বাগড়া দিয়ে চলেছে। আমাদের জানা আছে যে, ভারত বাংলাদেশকে নানা প্রকল্পে যে ঋণ-সহায়তা অফার করেছে সেগুলো এতই কঠিন শর্ত-কণ্টকিত যে, বাস্তবে বাংলাদেশ ঐ ‘টাইড এইডের’ অতিক্ষুদ্রাংশই গ্রহণ করেছে। এগুলোকে আর দশটা ‘সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের’ চাইতে বেশি সুবিধাজনক আখ্যায়িত করার কোন যুক্তি নেই।

এসব ঋণের আসল উদ্দেশ্যই হচ্ছে ভারতের সাথে বাংলাদেশের ‘কানেকটিভিটি’ বাড়ানো এবং সুগম করা। এখানে কোন দয়া-দাক্ষিণ্যের ছিঁটেফোটাও নেই। মজার ব্যাপার হলো, একসময় বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ অভিবাসী কিংবা শরণার্থীর যে বিপুল প্রবাহের অভিযোগ তুলে ভারত শোরগোল বাধিয়ে দিত এখন ঐ শরণার্থী স্রোতের অস্তিত্ব আর তেমন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভারতীয় গরুর ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা যে ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে সেটাও এখন পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। (ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখন বাংলাদেশী মুসলিমদেরকে গরুর গোশত খাওয়ার অভ্যাস ভুলিয়ে ছাড়বেন বলে যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন, সেটা বোধ হয় তাঁর জীবদ্দশায় ঘটবে না!)

তিস্তা নদী ঐতিহাসিকভাবেই অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং খামখেয়ালি আচরণের একটি নদী, যার বন্যার কবলে পড়ে প্রায় প্রতি বছর বর্ষায় বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল একাধিকবার বিধ্বস্ত হয়ে চলেছে। আবার, শুষ্ক মৌসুমে তুলনামূলকভাবে খরাগ্রস্ত এই এলাকার মানুষ তিস্তা নদীর পানিস্বল্পতাহেতু সেচসুবিধা থেকেও বঞ্চিত থাকে। তাই বলা হয়, এলাকার জনগণের জীবন ও জীবিকার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ তিস্তা নদী। তিস্তা নদীর উজানে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবায় ভারত একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণ করে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানি সম্পূর্ণভাবে আটকে দেওয়ার পর তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশ বছরের বেশির ভাগ সময়ই প্রায় পানিশূন্য থাকছে।

বাংলাদেশ বন্ধুরাষ্ট্র হলেও একটি আন্তর্জাতিক নদীর উজানে এহেন একতরফা বাঁধ নির্মাণের আগে ভারত একবারও বাংলাদেশের সাথে আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেনি। বরং, দীর্ঘ তিন দশকের কূটনৈতিক আলোচনার পথ ধরে যখন ২০১১ সালে দু’দেশ তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি স্বাক্ষরের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর অন্যায় আবদারের কাছে নতি স্বীকার করে ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং চুক্তি স্বাক্ষর থেকে পিছিয়ে গিয়েছিলেন। দুটো সার্বভৌম দেশের সম্পর্ক একটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জটিলতার কাছে জিম্মি হতে পারে না। অথচ, ভারত এই অজুহাতেই এক দশক ধরে এই ইস্যুতে বাংলাদেশকে বঞ্চিত রেখেছে। এখন আবার প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্পকে ভন্ডুল করার জন্য তারা বাংলাদেশের সামনে তিস্তা চুক্তির মুলা ঝুলিয়েছে! কিন্তু তিস্তা চুক্তি আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প মোটেও সাংঘর্ষিক নয়। তিস্তা চুক্তি হোক বা না হোক তিস্তা প্রকল্প ঐ অঞ্চলের জনগণের জীবন ও জীবিকায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। চুক্তি হলে শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানিপ্রবাহ খানিকটা হয়তো বাড়বে, কিন্তু বর্ষায় গজলডোবা ব্যারেজের সব গেট খুলে দেওয়ায় এতদঞ্চলের জনগণ যে একাধিকবার বন্যায় ডুবছে তার তো কোন সমাধান হবে না!

প্রস্তাবিত প্রকল্পের জলাধারগুলোর সংরক্ষিত পানি পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হলে এই সমস্যার টেকসই সমাধান মিলবে। এই প্রকল্পের বিভিন্ন ডাইমেনশানের বর্ণনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকার জনগণের মধ্যে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন গেঁড়ে বসেছে, খুশিতে মাতোয়ারা তারা। প্রকল্পটির আশু বাস্তবায়নের জন্য দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মানববন্ধন ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেজন্যই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, তিস্তা প্রকল্প অনুমোদনে আর বিলম্ব করবেন না।
লেখক: একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (21)
হাসান সোহাগ ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৩৮ এএম says : 0
Amader notojanu sarkar ar Golamir jonno amra ato pisiye asi
Total Reply(1)
আসাদ ৪ মার্চ, ২০২১, ৪:৫৭ পিএম says : 0
ইতিহাসে নিজের নাম সর্নাক্ষরে লিখতে চাইলে ভারতের কথা না শুনে দেশের মানুষের কথা শুনতে হবে।
Zaynul Abedin ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৪০ এএম says : 0
ভারত দিতে জানে না। শুধু নিতেই জানে।ভারত নাকি আমাদের বন্ধু। ভারত বন্ধু হয় কেমনে। ভারতে গেলে বুঝা যায় ভারত আমাদের কেমন বন্ধু। ভারতে গেলে একটা লোক আমাদের সংগে ভাল ব্যাবহার করেনা।
Total Reply(0)
রোদেলা ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৪০ এএম says : 0
এটাই ভারতের স্বভাব
Total Reply(0)
Siraz Uddin ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৪১ এএম says : 0
ভারত কখনো তিস্তা চুক্তি করবেনা। তাই চীনা অর্থায়নে নুতন এই প্রকল্পটি অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত। তা না হলে বাংলাদেশ মরুকরণ শুরু হবে।
Total Reply(0)
M. Abdus Samad ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৪৩ এএম says : 0
চিনের সাথে এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে আশা করা যায় ভারতের পানি বন্ঠন বিষয়ক বাংলাদেশের সাথে রংবাজি চিরতরে শেষ হবে।
Total Reply(0)
Tareq Anam ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:০৬ পিএম says : 0
আঙুল ঢোকানোর মতো ছিদ্র পাচ্ছে বলেই হাত ঢুকিয়ে দিচ্ছে ভারত।আর তাতেও মজা ই পাচ্ছে ইনি। কি আর বলবো,ভারতের জন্য ইনার হ্রদয়ের দরজা পুরাটাই খোলা।
Total Reply(0)
Showkot Chowdhury ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:০৬ পিএম says : 0
দালালদের কে জিগ্গেস করেন।ভাই সংবাদিক
Total Reply(0)
Md Kbir Ahmed ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:০৭ পিএম says : 0
বসতে দিলে সুইতে চাবেই এটাই নিয়ম,,,,, যদি ভারত কে দৈরের উপরে রাকতো তাহলে বসার আগে দওরে পালাতো,,,
Total Reply(0)
Jack+Ali ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:০৮ পিএম says : 0
Our government turned our country to be slave of India. O'Allah our back is behind the wall. O'Allah rescue us from corrupt governmen and install a Muslim Leader who will rule be Qur'an the way our Beloved Prophet [SAW] and his rightly guided Khalifa and also Omar Bin Abdul Aziz.
Total Reply(0)
Milon777 Milon777 ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৮:৩১ পিএম says : 0
কটিন জবাব হবে এবার
Total Reply(0)
Imam Hasan Imon ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:০৮ পিএম says : 0
সরকার যদি আমাদের ভালো না বুঝে,, তাহলে কি চায়নার এতো মায়া লাগছে কি। কোথায় সরকার তাড়াতাড়ি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে তা না করে ....................... বসে আছে। ওরা আমাদের কেও না বরং শত্রু। আগে দেশ,,, কোন দেশের কি হবে এইসব ভাবার সময় নেই
Total Reply(0)
সাকিব হাসান ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:২০ এএম says : 0
ভারত কি আমাদের একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না। তাদের কি খেতি করেছি আমরা।
Total Reply(0)
Tariqul Islam ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৫২ পিএম says : 2
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেশের উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলের মাটি ও মানুষকে রক্ষা করুন এবং সেই সাথে উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্রোতধারা বজায় রাখুন।
Total Reply(0)
Tariqul Islam ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৫৩ পিএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেশের উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলের মাটি ও মানুষকে রক্ষা করুন এবং সেই সাথে উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্রোতধারা বজায় রাখুন।
Total Reply(0)
এম এ বাদশা ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৫ এএম says : 1
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে আমরা উত্তর অঞ্চলের বন্যা ও নদীভাঙ্গনের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা আকুল আবেদন করছি,আপনি দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে আমাদের দুঃখকষ্টগুলোর অবসান করে স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করুন।তিস্তার করালগ্রাসেে আমরা সর্বশ্রান্ত হয়েছি।হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি, সৃত্মিবিজড়িত বসতভিটা,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,মসজিদ-মন্দির তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।মাননীয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তিস্তা পাড়ের মানুষেরা তো এদেশেরই সন্তান।তাদেরও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে।আপনি মাননবতার মা হয়ে তাদের কথা চিন্তা করে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুন।
Total Reply(0)
Md. Safiul Alam ২ মার্চ, ২০২১, ৩:১০ পিএম says : 0
এই ...........র দল (অভিশপ্ত জাতি) মুসলিম অধ্যুষিত বালাদেশের চির শত্রু যারা কোনো দিন বাংলাদেশের সাফল্য সহ্য করতে পারেনা I
Total Reply(0)
Zakiul+Islam ৩ মার্চ, ২০২১, ১২:২০ পিএম says : 0
মমতা চলে গেলে পানি দেব, এটা বানরের পিঠা ভাগ ছাড়া কিছুই নয় ।
Total Reply(0)
Nurul Islam Bablu ৪ মার্চ, ২০২১, ১০:৩৫ এএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তিস্তার ব্যপারে আপনি ভারতের সাথে কোন আপস করবেন না। আপনার বাবাও আপস করে নি । হয়ত এইজন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছে। তিস্তার ব্যাপারে এইদেশের 20 কোটি জনগন আপনার সাথে আছে দল মত নিরর্বিশেষে। চায়নার সাথে থাকেন কারন ভারত একটা নিম্ম মনমানুষিকতার দেশ।ভারত আজ এত পিছিয়ে আছে ধর্ম নিয়ে মারামারির জন্য। তাদের সাথে কোন প্রতিবেশী দেশের সাথে ভালো অবস্থানে নেই তাদের এই নিম্ম মনমানুষিকতার জন্য।
Total Reply(0)
A Rahman ৪ মার্চ, ২০২১, ১:১২ পিএম says : 0
The only country in the world is India, for which we are suffering in every sector. Killing at border, supply of Phensedyl, dams on every river flowing to Bangladesh, illegal Indian's job in Bangladesh, political interference, support to vote rigging, and many many others. It is not friend of Bangladesh, rather an enemy under the coat of friendship. It is an exploiter. WE must shun India.
Total Reply(0)
salman ৫ মার্চ, ২০২১, ৫:১৮ এএম says : 0
ora naki amade'r Bondhu? asole Vator jader Bondhu? tade'r Sotrur dorkar nai.
Total Reply(0)
মোঃ রাসেল ৬ মার্চ, ২০২১, ১১:৩৬ এএম says : 0
ভারত আমাদের উন্নয়ন দেখতে পারে না। ভারত হলো বাংলাদেশের সব একমাত্র শত্রু রাষ্ট্র
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন