শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

নৈরাজ্যবাদীরা বিকারগ্রস্ত

প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য টুটুল : একটি সমাজ কতটা অস্থির তা বুঝা যায় সেই সমাজের বসবাসরত জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবনের প্রতিদিনের চালচিত্র দেখে। কাউকে বলে দিতে হবে না, চলমান ধারায় আমাদের চারপাশে কতটা নির্লজ্জ বেহায়াপনা চলছে। রাষ্ট্র যখন তার বিভিন্ন বিভাগের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তখন নৈরাজ্যবাদীরা মাথাছাড়া দিয়ে উঠে। যেখানে সেখানে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যায়। কখনও দলভুক্তভাবে কখনও বা একার সিদ্ধান্ত থেকে নৈরাজ্যবাদীরা নিজেদের কর্মকা- অব্যাহত রাখে। নৈরাজ্যবাদীরা থাকে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। তারা যা কিছু সুন্দর কিংবা যা কিছু সহজ-সরল সে সবের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেয়। আমাদের চলমান সময়ে নৈরাজ্যবাদীদের দাপট প্রবল। এমনিতে হয়ত দেখা যাবে তাদের কোন বিশেষ রাজনৈতিক দল নেই। কিন্তু তারা লুকিয়ে আছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগে। তারা হয়তো প্রকাশ্যে রাষ্ট্র ক্ষমতা চায় না বা চাইলেও রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে পারবে না। কিন্তু তারা মানসিকভাবে মনে প্রাণে নৈরাজ্যবাদকে সমর্থন করে। অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই জানে না কি করছে। আবার অনেক সময় সচেতনভাবে বিকৃত আনন্দের উল্লাস থেকে চরম নৈরাজ্যকর কর্মকা- অব্যাহত রাখে। কোন কালেই রাষ্ট্র তাদের চিরতরে দমন করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে বলে মনে হয় না। তবে রাষ্ট্র ইচ্ছে করলে তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তখনই রাষ্ট্র তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে যদি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলটিতে নৈরাজ্যবাদীদের আধিক্য কম থাকে সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, গত ৯ জানুয়ারি রাত্রি ১১টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশনা ও যোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থেকে কল্যাণপুরের বাসায় ফেরার পথে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গোলাম রাব্বী নামে ওই কর্মকর্তা একটি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে বের হওয়ার সময় আচমকা দেখতে পান পিছন থেকে পুলিশ তার শার্টের কলার চেপে ধরেছে। ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে ইয়াবা আছে বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্য অভিযোগ তোলেন। এ নিয়ে পুলিশের সাথে ব্যাংক কর্মকর্তার কথা কাটাকাটি হয়। শেষে ওই পুলিশ তাকে টেনেহিঁচড়ে এসআই মাসুদের কাছে নিয়ে যান। এসআই মাসুদ শিকদার ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে ইয়াবা আছে বলে অভিযোগ করেন। এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করলে ব্যাংক কর্মকতাকে পুলিশের টহল গাড়িতে তুলে নেয়া হয়। অভিযোগ করা হয়, ব্যাংক কর্মকর্তা নিজের পরিচয় প্রকাশ করলে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এসআই মাসুদ। ব্যাংক কর্মকর্তা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় এবং ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করে বেড়িবাঁধে ফেলে রাখা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। শেষে ব্যাংক কর্মকর্তার নির্যাতনের খবর তার সহকর্মী ও পরিচিতজনরা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে এলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ব্যাংক কর্মকর্তার ওপর নির্যাতনের রেশ কাটতে না কাটতেই পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা। যদিও বলা হয়েছে এখানে ভুল বুঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছে। তবে বাস্তবতা বলে অন্য কথা। এসব দেখে মনে হয় আমরা যেন কোনো পুলিশী রাজত্বে বাস করছি। আমাদের রাজা-মন্ত্রী সবাই পুলিশ। এসব ঘটনা নতুন কোনো ব্যাপার নয়। সবার নিশ্চয়ই মনে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল কাদেরের উপর কতোটা অন্যায় করা হয়েছিল এবং কিভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল।
সবাই জানেন, পুলিশের নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সে নির্দোষ। তিনটি মামলার কোনটিতে তার জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। কাদেরকে নির্যাতনের সময় থানায় উপস্থিত এক পুলিশ কর্মকর্তা একটি দৈনিক পত্রিকাকে বলেন, ওসি অসংলগ্ন কথা বলতে বলতে কাদেরের পায়ে কোপ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত পুলিশের তদন্ত কমিটিও কাদেরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি। এসব কথা একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। কাদেরের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া লোকটি গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, গ্রেফতারের পর সেদিন ভয়ে কাদেরকে তার সহযোগি বলেছিল- সে কাদেরকে চেনে না। এখানে যে বিষয় উল্লেখ করার মতো তা হচ্ছে পুলিশই বলছে কাদের নির্দোষ। অর্থাৎ অভিযুক্ত ওসি’র বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত করে বলেছে কাদের নির্দোষ। আগেই বলা হয়েছে যে, নৈরাজ্যবাদীরা থাকে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। তারা বিকৃত আনন্দের জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠে। ক্ষমতার দাপটে নৈরাজ্যবাদীরা আরও ভয়ঙ্কর কর্মকা- সংঘটিত করে থাকে। খিলগাঁও থানার অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ তিন পুলিশ সদস্য, যাদের আব্দুল কাদেরকে নির্যাতনের জন্য দায়ী করা হচ্ছে, তারা মূলত মানসিকভাবে ছিল বিকারগ্রস্ত চরম নৈরাজ্যবাদী। ক্ষমতার দাপটে তাদের চোখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাদেরকে মানুষই মনে হয়নি। নৈরাজ্যবাদী কিছু লোক আমাদের পুলিশ বিভাগে রয়েছে। তাদের ঔদ্ধ্যত্যপূর্ণ বিচরণ সর্বত্র। আমাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেও (যারা ক্ষমতায় বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকে) তাদের অবাধ বিচরণ রয়েছে। তাছাড়া রাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদেও তাদের শক্ত অবস্থান পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। নৈরাজ্যবাদীদের অবস্থান একটি রাষ্ট্রে তখনই শক্ত হয়, যখন সেই রাষ্ট্রের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দল নৈরাজ্যবাদীদের কাছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জিম্মি হয়ে পড়ে কিংবা বলা যায় একটি দেশের বিরোধী দল ও সরকারি দলের মধ্যে যখন সমন্বয়ের অভাব থাকে, তখন নৈরাজ্যবাদীদের উৎপাত বাড়ে। আমাদের দেশের সরকারি দল ও বিরোধী দলের সম্পর্ক হল দা-কুমড়ার শত্রুর মতো। একদল আরেক দলকে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না।
আমরা দেশবাসী বিশ্বাস করতে চাই না, আমরা কোনো পুলিশী রাজত্বে বসবাস করছি। আমরা বিশ্বাস করি, একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাই আমাদের মুক্তি দিতে পারে। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পুলিশ যদি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে তাহলে গণতন্ত্রের সুফল কখনো জনগণের ঘরে উঠবে না।
লেখক : কবি, গল্পকার ও আইনজীবী
কালী বাড়ি রোড, হবিগঞ্জ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন