মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হাদীসের আলোকে মিরাজুন্নবী-২

মাওলানা মুহাম্মাদ ত্বহা হুসাইন | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

এরপর জিবরীল (আ.) নবীজীকে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশের পানে ছুটলেন। সেখানেও দ্বার উন্মুক্ত করতে বলা হলে জিজ্ঞাসা করা হলো, কে? তিনি জবাব দিলেন, জিবরীল। প্রশ্ন করা হলো, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দিলেন, মুহাম্মাদ। আবার প্রশ্ন হলো, তিনি কি আহূত হয়েছেন? তিনি বললেন, হাঁ, তাঁকে আনার জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি। দ্বার উন্মুক্ত করা হলে সেখানে দু’খালাত ভাই অর্থাৎ হযরত ঈসা (আ.) ও ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলো। তাঁরা উভয়ই নবীজীকে মারহাবা বলে দুআ করলেন। এরপর জিবরীল তাঁকে তৃতীয় আকাশে নিয়ে গিয়ে পূর্বের মতো প্রশ্নোত্তর পর্বের পর দ্বার উন্মুক্ত হলে সেখানে হযরত ইউসুফ (আ.)-এর সাথে মুলাকাত হলো। আল্লাহ তাআলা তাঁকে গোটা রূপ-সৌন্দর্যের অর্ধেকটাই দান করেছিলেন। তিনিও নবীজীকে মারহাবা বলে উষ্ণ অভিবাদন জ্ঞাপন করলেন।

একই পদ্ধতিতে চতুর্থ আকাশে পৌঁছালে সেখানে হযরত ইদরীস (আ.)-এর সাথেও শুভেচ্ছা বিনিময় হলো। নবীজী বলেন, আমরা যখন সেখান থেকে সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছিলাম, তখন হযরত মূসা (আ.) ক্রন্দন করতে লাগলেন। কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, এই যুবক আমার পরে প্রেরিত হয়েছে। তদুপরি তাঁর উম্মত আমার উম্মতের চেয়েও অনেক বেশি জান্নাতে যাবে। একথা ভেবেই আমি কাঁদছি। সেখান থেকে নবীজীকে সপ্তম আকাশে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তিনি হযরত ইব্রাহীম (আ.)-কে দেখলেন, তিনি বায়তুল মা‘মুরে ঠেস দিয়ে উপবিষ্ট। বায়তুল মা‘মুর সেই স্থান যেখানে প্রত্যহ এমন সত্তর হাজার ফেরেশতা ইবাদত করার জন্য প্রবেশ করে, যাদের পালা এরপর আর কখনো আসে না।

হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও নবীজীকে দেখে অভ্যর্থনা জানালেন। অতঃপর তিনি নবীজীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, মুহাম্মাদ! আপনার উম্মতকে আমার সালাম বলুন এবং তাদেরকে অবগত করুন যে, জান্নাতের মাটি পবিত্র, এর পানি সুমিষ্ট। জান্নাত হচ্ছে খুব পরিচ্ছন্ন ও সমতল। এর বৃক্ষ হচ্ছে- সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহু আকবার ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লালি আলিয়্যুল আযীম। (তিরমিযী : ৩৪৬২)।

অতঃপর নবী কারীম (সা.)-কে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হলো। পৃথিবী থেকে যেসকল বস্তু অথবা রূহ উপরে আরোহণ করে, সেগুলো এখানে পৌঁছে থেমে যায়। তদ্রুপ ঊর্ধ্বজগৎ থেকে নিম্ন আগমনকারী সবকিছু এখানে এসে থেমে যায়। নবীজী বলেন, সিদরাতুল মুনতাহার পাতা ছিল হাতির কানের মতো, আর ফল ছিল বড় মটকার মতো। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ যখন বৃক্ষটিকে ঘিরে নিলো, তখন সে এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হলো। কোনো মানুষের সাধ্য নেই সে সৌন্দর্য বর্ণনা করার। নবীজী বলেন, সিদরাতুল মুনতাহা পেরিয়ে এত ঊর্ধ্বে পৌঁছে যাই, যেখান থেকে আমি আল্লাহর হুকুম-আহকাম লিপিবদ্ধ করার কাজে ব্যস্ত ফেরেশতাদের ‘কলমের’ আওয়াজ শুনতে পেলাম।

অতঃপর, আল্লাহ নবীজীকে যা দিবার ছিল তা দিলেন। তিনি দিনরাত্রিতে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করলেন। ফিরে আসতে হযরত মূসা (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি নবীজীকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার রব আপনার উম্মতের উপর কী ফরয করেছেন? নবীজী বললেন, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। তিনি বললেন, আপনি মহান রবের কাছে ফিরে যান এবং আরও হ্রাস করার আবেদন করুন। এতটুকু পালনের সাধ্য আপনার উম্মতের নেই।

আমি তো বনী ইসরাঈলকে এর চেয়ে অনেক কম ফরয দিয়ে খুব পরীক্ষা করে দেখেছি। নবীজী ফের মহান রবের কাছে ফিরে গেলেন এবং বললেন, রাব্বুল আলামীন! আমার উম্মতের জন্য নামাজ আরো হ্রাস করুন। আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কমিয়ে দিলেন। ফিরে আসার সময় পঁয়তাল্লিশ ওয়াক্ত নামাজের কথা হযরত মূসা (আ.)-কে জানালে তিনি বললেন, আপনার উম্মতের এতটুকু পালন করার সামর্থ্য নেই। অতএব আরও হ্রাস করার আবেদন করুন। নবীজী বললেন, আমি এমনিভাবে বারবার আপন রব ও মূসা (আ.)-এর কাছে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম। আর প্রতিবারই পাঁচ-পাঁচ করে কমতে থাকল।

অবশেষে আল্লাহ পাক ইরশাদ করলেন, মুহাম্মাদ! দিবা-রাত্রির মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই মাত্র। প্রত্যেক নামাজের জন্য দশ নামাজের সওয়াব, ফলে সেই পঞ্চাশ নামাজই হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি সৎকাজের ইচ্ছা করবে, এরপর তা আমলে পরিণত করবে না, তার জন্যও একটি নেকী লেখা হবে। আর যে ইচ্ছা করার পর আমলেও পরিণত করবে, সে দশটি নেকী পাবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মন্দ কর্মের কেবল ইচ্ছা করে, আমলে পরিণত করে না, তার কোনো গুনাহ লেখা হবে না। আর যদি আমলেও পরিণত করে তবে একটি মাত্র গুনাহ লিপিবদ্ধ হবে।

নবীজী বলেন, এরপর আমি নেমে এসে হযরত মূসা (আ.)-এর কাছে গেলাম। তাঁকে সবকিছু অবগত করলে তিনি বললেন, আপনার রবের কাছে গিয়ে আরো হ্রাস করার আবেদন করুন। আমি বললাম, মহান প্রভুর কাছে অনেকবার গিয়েছি, আবেদন করেছি। এখন আমার লজ্জা হচ্ছে। অবশেষে জান্নাত, জাহান্নাম ও সপ্তাকাশের দীর্ঘ সফর করে মহান মাওলার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়ে নবীজী ফিরে এলেন মক্কায়। নবীজী (সা.) এ পবিত্র রজনীতে মুসলমানদের জন্য তিনটি বিষয় হাদিয়াস্বরূপ নিয়ে এসেছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, সূরা বাকারার শেষ আয়াতসমূহ এবং পুরো উম্মতের মধ্যে শিরক থেকে আত্মরক্ষাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য মাগফিরাত ও ক্ষমার ঘোষণা। এ ছিল উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য মিরাজের পুরস্কার। (মুসলিম : ২৭৯)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Md Shahdat Hosen ১২ মার্চ, ২০২১, ১:১১ এএম says : 0
সুবহানাল্লাজী আসর বিআবদিহী লাইলাম্ মিনাল মাসজিদিল হারমি ইলাল মাসজিদিল আকসাল্লাজি বারকনা হাওলাহু লিনুরিয়াহু মিন আয়াতিনা, ইন্নাহু হু-অস সামিউল বাচির।' অর্থাৎ পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্ত্বা তিনি যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (আল কুরআন)
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ১২ মার্চ, ২০২১, ১:১২ এএম says : 0
ইসরা ও মিরাজের সফর আত্মিক ছিল না; বরং সাধারণ মানুষের সফরের মতো স্বশরীরেই ছিল- এ কথা কোরআন ও হাদিসে প্রমাণিত।
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ১২ মার্চ, ২০২১, ১:১৩ এএম says : 0
ইসরা সম্পর্কে সব মুসলমানের ঐকমত্য রয়েছে। শুধু ধর্মদ্রোহী যিন্দীকরা একে মানেনি। মেরাজ থেকে ফিরে এসে ভোরবেলা যখন নবীজি (সা.) রাতের সফরের ঘটনা শোনালেন, তখন কোরাইশ নেতারা তা অস্বীকার করতে লাগল। এত অল্প সময়ে মক্কা শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে গমন তাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলো। তাদের মধ্যে যে এর আগে মসজিদে আকসা ভ্রমণ করেছে সে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা বায়তুল মুকাদ্দাসের কিছু বিবরণ শোনান দেখি। অমনি আল্লাহ তায়ালা মসজিদের বাস্তব চিত্র নবীজি (সা.)-এর সামনে হাজির করে দিলেন আর তিনি দেখে দেখে সব বলে দিলেন। (বুখারি-৪৭১০)
Total Reply(0)
বাদল বাদল ১২ মার্চ, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
সত্য কথা হলো, নবী (সা.) ইসরা সফর জাগ্রত অবস্থায় করেন, স্বপ্নে নয়। মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত এ সফর বোরাকযোগে করেন। বায়তুল মুকাদ্দাসের দ্বারে উপনীত হয়ে তিনি বোরাকটি অদূরে বেঁধে নেন এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদে প্রবেশ করে কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। এরপর সিঁড়ির সাহায্যে প্রথম আকাশ, তারপর অন্যান্য আকাশে যান। ওই সিঁড়িটির স্বরূপ সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ১২ মার্চ, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
শবেমেরাজ, শবেকদরের মতো বিশেষ রাত নয়। মেরাজ রজনী শবেকদরের মতো হলে এর মাস তারিখ সংরক্ষণেও গুরুত্ব দেওয়া হতো। যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শবেকদরের। যেহেতু এ রাতের তারিখ সংরক্ষিত নেই, তাই ২৭ তারিখকে শবেমেরাজ নির্ধারণ করাও কঠিন।
Total Reply(0)
নাঈম বি এস এল ১২ মার্চ, ২০২১, ১:১৫ এএম says : 0
ইসলামের ইতিহাস ও বিশ্বনবির জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় মেরাজ। এটি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতের অনেক বড় একটি মুজিজা আর উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য অনেক বড় একটি নেয়ামত।
Total Reply(0)
Masud ১২ মার্চ, ২০২১, ১১:০২ এএম says : 0
যা ইচ্ছে তাই মানের লেখা। মুহাম্মাদ (সা:)/ নবীজি (সা:) এর পরে (সা:) লেখা হয় নি! অথচ এমন বেয়াদবদের ধ্বংস চেয়ে জিবরাঈল (আ:) দুআ করেছেন আর প্রিয়নবী (সা:) সেই দুআ'র পরে আমিন বলেছেন। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, মুহাম্মাদ (সা:) এর নামের পড়ে আল্লাহ তায়ালা নিজে ও ফেরেশতারা দরূদ পড়ে, এবং আমাদের জন্য এটা ফরজ। অন্য নবীদের কেউ মহানবী (সা:) কে সালাম দেয়নি; শুধু মারহাবা / শুভেচ্ছা / অভ্যর্থনা জানিয়েছে! এই মাওলানা হাদীস পড়েছে কোথায় - ঠাকুরবাড়িতে? ভাল পত্রিকা হলে এমন ভূল লেখা ছাপার পর সম্পাদকের চাকরি থাকার কথা না। অন্তত তওবা পড়ে একটা সংশোধনী ছাপাবেন।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন