মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

তুমি একজন ভালো মানুষ হও

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২১, ১২:০৫ এএম

অনেক সময় দেখা যায়, বাসে হেল্পারের সাথে মারমুখী তর্ক-বিতর্ক। ভালো ভালো শিক্ষিত মানুষের দ্বারাও এটা হয়। এটা এখন এক ধরনের রেওয়াজ হয়ে গেছে। হেল্পারের সাথে, রিকশাওয়ালার সাথে তর্ক-বিতর্ক করা, কষাকষি করাকেই কিছু মানুষ বীরত্ব মনে করেন। আসলে এটা বীরত্ব নয়। বীরত্বের ক্ষেত্রগুলোতে আমরা অনেকেই বীরত্ব প্রদর্শন করতে পারি না। সমাজের দরিদ্র অভাবী অশিক্ষিত মানুষগুলোর সাথেই আমাদের বীরত্ব! এটা ঠিক যে, অশিক্ষিত হওয়ার কারণে ওদের আচরণও সব সময় সভ্য-শালীন হয় না। কিন্তু সে তো অশিক্ষিত। আল্লাহ পাক আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা দিয়েছেন। সভ্যতা-ভব্যতা দান করেছেন। আমরা কেন ওদের পর্যায়ে নেমে আসব?

সামাজিকতার ক্ষেত্রেও অনেক ছোট ছোট ভালো কাজের সুযোগ আমাদের সামনে আসে। এক গুরুত্বপূর্ণ ভালো কাজ, যা আমাদের জন্য খুব সহজ, কিন্তু প্রয়োজনগ্রস্তের জন্য অনেক বড়। তা হচ্ছে, আগন্তুককে পথ চেনানো। একজন মানুষ কোনো এলাকায় নতুন। যে বাসায় তিনি যাবেন তা খুঁজে পাচ্ছেন না। তার জন্য এটা অনেক বড় পেরেশানী। তার অনেক সময় ব্যয় হবে। অনেক পেরেশানী হবে। কিন্তু আমি যদি চিনিয়ে দিই, আমার জন্য খুব সহজ। আমি তো এই এলাকায়ই থাকি, এলাকার গলি কয়টা, বাসা কয়টা, কোন বাসা কোথায়, এগুলো সবই আমার জানা। আমি খুব সহজেই শুধু দু’টি বাক্য ব্যবহার করে, দুই মিনিট সময় ব্যয় করে এই ব্যক্তির সহযোগিতা করতে পারি। আমার জন্য খুবই সহজ। তার অনেক উপকার।

এভাবে নিজের কোনো কাজের সাথে অরেকজনের একই ধরনের কাজটি করে দেয়া সহজ। আমি টিউবওয়েল চেপে পানি নিচ্ছি বা অজু করছি, আরেকজন এলো, দুই মিনিট সময় ব্যয় করে তার পাত্রটি ভরে দিলাম। দু’টো চাপ দিয়ে তার অজু করা সহজ করে দিলাম। বাজার থেকে নিজের জিনিসের সাথে সঙ্গীর বা প্রতিবেশির টুকটাক জিনিসটি এনে দিলাম। এরকম কত কিছুই তো হতে পারে।

বিখ্যাত মনীষী সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর আরেকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে : ‘তোমাদের জুতার ফিতার চেয়েও জান্নাত তোমাদের হাতের নাগালে আর জাহান্নামও তেমনি।’ (সহীহ বুখারী : হাদীস ৬১২৩)। আল্লামা ইবনুল জাওযী রাহ. বলেন, হাদীসের অর্থ, জান্নাতে যাওয়া খুব সোজা। শুধু নিয়ত শুদ্ধ কর আর আল্লাহর হুকুম মান। তেমনি জাহান্নামের যাওয়াও কঠিন নয়। মনমতো চল আর গুনাহ কর।
ইবনে বাত্তাল রাহ. বলেন, উপরের হাদীসে এই বার্তা আছে যে, আল্লাহর ফরমাবরদারী জান্নাতে পৌঁছায় আর আল্লাহর না-ফরমানী জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফরমাবরদারী ও নাফরমানী দু’টোই হয় খুব সহজ কাজে।

উপসংহারে সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন, সুতরাং প্রত্যেকের কর্তব্য, সামান্য ভালো কাজও সামান্য ভেবে ছেড়ে না দেয়া। আর সামান্য গুনাহতেও সামান্য ভেবে লিপ্ত না হওয়া। কারো তো জানা নেই, কোন ভালো কাজটি তার জন্য আল্লাহর করুণা বয়ে আনবে। তেমনি কোন মন্দ কাজ তাকে আল্লাহর নারাজির শিকার করবে। (ফতহুল বারী : ১১/৩২১)।

দেখুন, এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এই যে, মানুষ যখন একটি নেক আমল করে আল্লাহ পাক এর বিনিময় এভাবেও দান করেন যে, তার আরেকটি নেক আমলের তাওফীক হয়। সুতরাং ছোট ছোট ভালো কাজের মাধ্যমে বড় বড় ভালো কাজেরও তাওফীক হয়ে যায়।

আর সব কথার শেষ কথা হচ্ছে, ইসলামের এই যে এত সব শিক্ষা ও নির্দেশনা এর সারকথা কী? একজন বড় জ্ঞানী ব্যক্তি অনেক কিতাব-পত্রের মাঝে বসে গবেষণা করছেন। এক মাজযুব মানুষ এসে হঠাৎ করে সেই বড় আলিমকে জিজ্ঞাসা করলেন : ‘আপনি জানেন কী আপনার চারপাশের এই বই-পত্র আপনাকে কী বলছে?’ আলিম সাহেব বুঝতে পারলেন, এই মানুষটির মনে বিশেষ কোনো ভাবের উদয় ঘটেছে। তিনি বললেন, আপনিই বলে দিন, এই সকল বই-পত্র আমাকে কী বলছে? ঐ মাজযুব বললেন, এই সকল বই-পত্র আপনাকে বলছে : ‘তুমি একজন ভালো মানুষ হয়ে যাও’। তো আমাদের সকল শিক্ষা-দীক্ষা, সেটা জাগতিক শিক্ষা হোক বা ধর্মীয় শিক্ষা, প্রকৃত অর্থে যা শিক্ষা তার সারকথা হচ্ছে ‘তুমি একজন ভালো মানুষ হও’।

রাসূলে কারীম (সা.) তাঁর পবিত্র হাদীসে এবং তাঁর মোবারক সীরাত ও জীবনাদর্শে আমাদেরকে ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষাই দান করে গেছেন। আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাঁর সীরাত ও হাদীস থেকে নূর ও আলো গ্রহণের তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
কাজী হাফিজ ১৪ মার্চ, ২০২১, ৬:৫৭ এএম says : 0
মানুষ তার উত্তম ব্যবহার ও চরিত্র দ্বারা পরিবারসহ সমাজকে অলোকিত করে থাকে। যে সুন্দর চরিত্রের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় নবী জীবনে।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ১৪ মার্চ, ২০২১, ৬:৫৮ এএম says : 0
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন জ্যোতিষ্মান প্রদীপ বিশেষ। তাঁর প্রশংসা করতে গিয়ে জনৈক আরব কবি বলেন, ‘হে জ্যোতির্ময়! হে মানব শ্রেষ্ঠ! তোমার পূত চেহারার দীপ্তি থেকেই চাঁদ আলোক প্রাপ্ত হয়েছে। ’
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ১৪ মার্চ, ২০২১, ৬:৫৮ এএম says : 0
যার হৃদয় যত পবিত্র ও কলুষমুক্ত- তিনি তত কোমল ব্যবহারের অধিকারী হন, তিনি হন সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারা অধিকারী। পৃথিবীতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে পবিত্র মন, আকর্ষণীয় আচরণের অধিকারী আর কোনো ব্যক্তির আগমন ঘটেনি এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে না। সর্বক্ষেত্রে তাকেই আমাদের অনুসরণ করতে হবে।
Total Reply(0)
চাদের আলো ১৪ মার্চ, ২০২১, ৬:৫৯ এএম says : 0
দ্বীন ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে আল্লাহর খাঁটি বান্দাহ হিসেবে গড়ে তোলা। ইবাদত বন্দেগী একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত করা এবং তার পাশাপাশি উত্তম আচার ব্যবহার অবলম্বনে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
Total Reply(0)
গাজী মোহাম্মদ শাহপরান ১৪ মার্চ, ২০২১, ৬:৫৯ এএম says : 0
আমরা নামায রোযার ন্যায় উত্তম চরিত্র ও আচার ব্যবহারকেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল হিসেবে তেমন গুরুত্ব দেই না, এটা ঠিক না।
Total Reply(0)
মাওলানা মামূনুর রশীদ ১৪ মার্চ, ২০২১, ১০:০৫ এএম says : 0
মাশাআল্লাহ। চমৎকার শিরোনাম এবং হৃদয়স্পর্শী লেখা। জাযাকাল্লাহ।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন