বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ রাজধানী ঢাকার কয়েকটি স্থাপত্যকর্মের অন্যতম এবং পৃথিবীর সুন্দর মসজিদগুলোর একটি। ঢাকার পল্টনে অবস্থিত এই বায়তুল মোকাররম, বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ।এর স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ও কারুকার্যময়। ৮.৩০ একর জমির উপর নির্মিত ও মাটি থেকে ৯৯ ফুট উচু এই মসজিদটি আল্লাহর ৯৯ নাম লিখে সজ্জিত করা হয়েছে। মুসল্লির ধারণক্ষমতা অনুযায়ী এটি পৃথিবীর ১০ম মসজিদ। পর্যটন কর্পোরেশন ও উইকিপিডিয়া সূত্র থেকে জানা যায়, আব্দুল লতিফ ইব্রাহিম বাওয়ানি প্রথম ঢাকাতে বিপুল ধারণক্ষমতাসহ একটি গ্র্যান্ড মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন।
ইতিহাসবিদ শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ঢাকা কোষ-এ বলা হয়েছে, পাকিস্তান আমলে সিন্ধুর স্থপতি টি এ এইচ থারিয়ানি এই মসজিদের নকশা প্রণয়ন করেন। পুরো কমপ্লেক্স নকশার মধ্যে দোকান, অফিস, লাইব্রেরি ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তাঁর ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ঢাকায় বিপুল মুসল্লি ধারণক্ষমতার একটি বড় মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় বাওয়ানি পরিবার। ১৯৫৯ সালে ‘বায়তুল মুকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠনের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার মিলনস্থলে মসজিদটির জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। স্থানটি নগরীর প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র থেকেও ছিল নিকটবর্তী। ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি এই মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৬২ সালে কাজটি মোটামুটি শেষ হয়। নামাজ শুরু হয় ২৫ জানুয়ারি ১৯৬৩। তবে সুসম্পন্ন হয় ১৯৬৮ সালে। জানা যায়, যে জায়গাটিতে এখন মসজিদ সেই জায়গগায় একটি পুকুর ছিল, যেটা পল্টন পুকুর নামে পরিচিত ছিল। সেই পুকুর ভরাট করে ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি মসজিদটির কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইউব খান।
এই মসজিদের প্রথম খতিব ছিলেন মাওলানা আবদুর রহমান কাশগরী (১৯১২-১৯৭১)এবং বর্তমান ও ৭ম খতিব হলেন প্রফেসর মাওলানা মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। এই মসজিদে একসঙ্গে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের প্রধান কক্ষটি তিন দিকে বারান্দা দিয়ে ঘেরা। মিহরাবটি অর্ধ-বৃত্তাকারের পরিবর্তে আয়তাকার। আধুনিক স্থাপত্য কর্ম অলংকরণই একটি বৈশিষ্ট্য-যা এই মসজিদে লক্ষনীয়। এর অবয়ব অনেকটা পবিত্র কাবা শরিফের মতো হওয়ায় মুসলমানদের হৃদয়ে এই মসজিদটি আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। ২৮ মার্চ ১৯৭৫ থেকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। এখন বায়তুল মোকাররম মসজিদ আটতলা। নিচতলায় বিপণি বিতান ও গুদামঘর। দোতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় নামাজ পড়া হয়। সব মিলিয়ে মুসল্লিরা বায়তুল মোকাররম মসজিদের ১ লাখ ২৫ হাজার ৬২ বর্গফুট এলাকা ব্যবহার করেন। সব তলাতেই অজুর ব্যবস্থা আছে। মসজিদের দোতলা থেকে খতিব সাহেব নামাজ পড়ান। তিনতলার উত্তর পাশে মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে মসজিদে প্রবেশ করা যায়। দেখা যায়, মসজিদটির ভেতরে বেশ খোলামেলা এবং প্রচুর আলোবাতাসের ব্যবস্থা আছে। কেউ চাইলেই যেকোনো দিন মসজিদে এসে নামাজ পড়তে পারেন। ২০০৮ সালে সউদী আরব সরকারের অর্থায়নে মসজিদটি সম্প্রসারিত করা হয়। ঈদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে মসজিদটির সাজসজ্জা সম্পন্ন হলে মানুষের আকর্ষণ বেড়ে যায় বহুগুণে। মসজিদটি দেখতে প্রায় দেশ বিদেশের বহু পর্যটক আসেন। সত্যি গর্ব করার মত একটি স্থাপত্যকর্ম আমাদের জাতীয় মসজিদ। ১৯৮২ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বায়তুল মোকাররমকে জাতীয় মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করলেও সেটা মুখে মুখে থেকে গেছে। শোনা যায়, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে কাগজে কলমে ‘জাতীয় মসজিদ’ স্বীকৃতি পাওয়ার কথা এই সুরম্য মসজিদটি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন