শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ফারাক্কার ধাক্কায় কাহিল দক্ষিণ-পশ্চিমের নদ-নদী

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২১, ৮:২৫ এএম

যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা, নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের নদ-নদীর চেহারায় বলে দিচ্ছে ফারাক্কার ধাক্কা আর সহ্য করতে পারছে না। হয়ে পড়েছে কাহিল। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নির্ভরশীল পদ্মা ও গড়াইএর শাখা নদী মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, আপার ভৈরব, কুমার, মধুমতি, ফটকি, চিত্রা, কপোতাক্ষ, নবগঙ্গা ও অভিন্ন নদী ইছামতি ও কোদলাসহ অর্ধ শতাধিক নদ-নদীর ওপর। সিংহভাগ নদ-নদী পরিণত হয়েছে মরা খালে। এতে কৃষি, শিল্প, বনজ, মৎস্য সম্পদের পাশাপাশি পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, তলদেশ ভরাট হয়ে অনেক নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারণে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন এবং মংলা সমুদ্রবন্দর ও নওয়াপাড়া নদী বন্দরের অবস্থাও শোচনীয়। মানুষের জীবন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, সভ্যতা-সংস্কৃতি, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণে নদ-নদীর ভুমিকা অত্যন্ত বলিষ্ট ও নিবিড়। কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পদ্মাপাড় থেকে সমুদ্রপাড় পর্যন্ত প্রায় সকল নদ-নদীর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। নদপাড়ের লোকজন এসব নদ-নদী শুকিয়ে মারার জন্য ভারতে সরাসনরি দায়ি করে বলেন, পদ্মার শাখা প্রশাখার সব ক’টি নদীর অবস্থা দিনে দিনে করুণ হয়েছে।

ঝিনাইদহের গাড়াগঞ্জ পয়েন্ট থেকে শৈলকুপা পর্যন্ত রাস্তার ধার দিয়ে প্রবাহিত কুমার নদীর চেহারা দেখে নদপাড়ের কয়েকজন আফসোস করলেন, ভারত এভাবে নদ-নদী গলা টিপে মারছে অথচ কোন বাদ-প্রতিবাদ নেই। একসময় কুমার নদীতে ঢেউ খেলতো। এখন পায়ে হেটে পার হওয়া যায়। নদীর বুকে চাষাবাদ হয়। ঝিনাইদহ শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা নদীরও একই অবস্থা। ক্যাসেলব্রিজ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আরাপপুরের বাসিন্দা তকব্বর জানালেন, নদী কি আর নদী আছে প্রায় সব নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে নরেন্দ্রপুর গ্রামে যেতে হাসপাতালের সামনে চিত্রা উপর ব্রিজ পার হওয়ার সময় দেখা গেল নদীর অস্তিত্ব প্রায় মুছে যাবার উপক্রম হয়েছে।

যশোরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদের চেহারা দেখলে যে কারো চোখে পানি আসবে। এমনভাবে দখল হয়েছে যে নদ হয়ে পড়েছে কোথাও খাল আবার কোথাও ড্রেন। অবশ্য বর্তমানে ২৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভৈরব নদ খনন হচ্ছে। খনন কাজে দুর্নীতিতে ভৈরব নদে আবার আগের মতো ঢেউ আসবে তেমন বলার সুযোগ নেই। শিল্পশহর নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদে যে পানি আছে তা কালো হয়ে গেছে। শিল্পবর্জ্য ফেলার কারণে নদেও মাছ মরে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ঠিকাদারদের গড়িমসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ভৈরব নদের খুলনা অংশেও যশোরের মতো দখলের পর দখল হয়েছে। যশোরের শার্শার বেতনা নদী, যশোরের মুক্তেশ্বরী, বেনাপোলের হাকরখাল, নড়াইলের মধুমতি, মাগুরার নবগঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ নদ-নদী শুকিয়ে দিনে দিনে খাল হয়ে যাচ্ছে। ফারাক্কার কারণে এ অঞ্চলের গঙ্গানির্ভর নদ-নদী এবং মিনি ফারাক্কার কারণে ইছামতি, কোদলা ও সোনাই নদী মৃত্যুপ্রায় অবস্থায়।

সংশি¬ষ্ট বিশেষজ্ঞদের কথা, সারাদেশের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩৭ শতাংশ ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। নদ-নদী বাঁচানো এবং জীবন-মরণ সমস্যার সমাধানের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে এর আগে অসংখ্যবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অতীতের মতোই বিষয়টি ‘ওভারলুক’ করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। নদ-নদীকে ঘিরেই মূলত কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, মৎস্য ও বনজ সম্পদ সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। রক্ষা হয় পরিবেশ। কিন্তু এর ব্যতয় ঘটছে নদ-নদী প্রায় পানিশূন্যতায়। সংশি¬ষ্ট সুত্র জানায়, এ অঞ্চলের ৩ সহস্রাধিক কিলোমিটার নদী পথের দেড় সহস্রাধিক কিলোমিটার প্রায় শুকিয়ে গেছে।

নদী বিশেষজ্ঞদের কথা, সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূলভিত্তি নদ-নদীর। এর প্রাণ রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেই।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন