শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

লকডাউনের প্রতিবাদে রাজধানীতে ভাঙচুর

স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট খুলতে চান ব্যবসায়ীরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৫ এএম

লকডাউনে মার্কেট ও শপিং মল বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে বিক্ষোভ করছেন রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামপুর, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনীচকসহ আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে ব্যবসায়ীরা সেøাগান দেন, এবারের লকডাউন মানি না, মানবো না। সাত দিনব্যাপী লকডাউনের প্রথম দিন গতকাল নিউমার্কেটে শতাধিক দোকানমালিক, ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা মিলে বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে তারা গাড়ি ভাঙচুরও করেছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও যাত্রাবাড়ীতে গণপরিবহন না পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন কারখানাশ্রমিকেরা।

নিউমার্কেট জোনের এসি আবুল হাসান জানান, গতকাল সকাল নয়টার দিকে শুরু হয় বিক্ষোভ। তবে ব্যবসায়ীরা রাস্তা বন্ধ করেননি। যান চলাচল করে। তিনি আরো বলেন, দোকান মালিক সমিতির নেতাদের আমরা বুঝিয়েছি যে তাদের স্বার্থেই সরকার এই লকডাউন দিয়েছে। তারা বুঝেছে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ভাঙচুরের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত রোববার ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছিল। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় দুই মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, গত বছরের লকডাউনে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন মালামাল উঠিয়েছেন। লকডাউন থাকলে তাদের ব্যবসায় ধস নামবে।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, সবই চলছে। সবাই রাস্তায়। ঢিলেঢালা লকডাউন দিয়ে লাভটা কী? এ অবস্থায় আমাদের সুযোগ দেওয়া হোক।
তিনি আরও বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা হচ্ছে। কারও ঈদের অনেক আগে থেকে কাজ শুরু, কারওবা ১০ দিন আগে থেকে। এখন পাইকারি ব্যবসার মুভমেন্ট থাকার কথা ছিল। সব কলাপ্স (ধস নেমেছে) করেছে। আমিনুল ইসলাম বলেন, লকডাউন দিলে শতভাগ কার্যকর হোক। এখন আমাদের ওপর শুধু নিষেধাজ্ঞা কেন? আমরা তো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে নিউমার্কেট, চন্দ্রিমা, গাউছিয়া, চাঁদনীচক, এলিফ্যান্ট রোডে বড় কয়েকটি ব্র্যান্ডের দোকান, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স দেশের সবচেয়ে বেশি জমজমাট থাকে। ব্যবসায়ীরা সারা বছর ঈদুল ফিতরকে উপলক্ষ করে মুখিয়ে থাকেন। রোজার আগে মার্কেট বন্ধ থাকার কারণে গত রোববার বসুন্ধরা ও নিউমার্কেট এলাকায় বিক্ষোভ ছিল। এ জন্য আশপাশের সড়কগুলোতে যানজটও হয়েছিল বেশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা স্বাস্থ্যবিধি মানার পক্ষে, তবে মার্কেট বন্ধের বিপক্ষে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সরকার দোকান খোলার সময়সীমা বেধে দিলে আমরা উপকৃত হবো। ওই সময়ের মধ্যে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করতে চাই। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনায় মরতে হবে। আর দোকান পাট বন্ধ থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। এখন দুই দিকেই মরণ। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা দোকান খোলা রাখতে চাই। কারণ এই একটা দোকানের আয় দিয়ে আমাদের পরিবার চলে। আয় না থাকলে আমরা চলবো কি করে।

বিক্ষোভে থাকা এক ব্যবসায়ী বলেন, লকডাউনে ব্যবসায়ীদের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। গত বছর লকডাউনের কারণে তিন মাস আমরা ব্যবসা করতে পারিনি। তখন দোকান বন্ধ থাকার কারণেও দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়েছে। তিন মাস লকডাউনের পর ৯ মাস ব্যবসায় লোকসান গুণতে হয়েছে। এবার লকডাউন খুলে সীমিত আকারে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হোক। এখানে অনেক ব্যবসায়ী ভাইরা আছেন, যারা লোকসানে আছেন।

এদিকে, একই দাবিতে পুরান ঢাকার ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরাও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খুলে দেওয়ার দাবি জানান। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় লকডাউনের প্রথম দিনে ইসলামপুর-পাটুয়াটুলি রোডে কয়েকশো ব্যবসায়ী রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরিব মারার নিষেধাজ্ঞা আমরা মানি না, মানবো না। আগে মানুষের পেটে ভাত দিন, তারপরে নিষেধাজ্ঞা। গত বছর লকডাউনের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেটা এখনও পুষিয়ে না উঠতেই আবারও নিষেধাজ্ঞা। তারা আরও বলেন, সামনে ঈদ আসছে। তাই ঈদ উপলক্ষে দোকান খুলে দিতে হবে। এই ভরা মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা মানি না।

কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা গতকাল সকাল থেকে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করছিলেন। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন। আমরা তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছি।
অপরদিকে, যাত্রাবাড়ীতে গণপরিবহন না পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন কারখানাশ্রমিকেরা। রাজধানীর রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এই বিক্ষোভ হয়। ১৫ মিনিট পরে শ্রমিকদের সরিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, কিছু উৎসুক জনতা বাস না থাকার কারণে কর্মস্থলে যেতে পারেনি। ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কর্মস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বাস না পেয়ে তারা রাস্তায় নামেন। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের বক্তব্য ছিল মালবাহী গাড়ি চললেও বাস কেন চলে না।
দেশের বিভিন্ন স্থানে লকডাউন ঘোষণার বিরোধিতা করে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদন :
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায় : চট্টগ্রামে লকডাউন ঘোষণার বিরোধিতা করে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সোমবার বিকেলে নগরীর তামাকুমন্ডি লেইন থেকে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী, দোকান মালিক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা মিছিল নিয়ে নিউমার্কেট মোড়ে সমাবেশে যোগ দেন। ব্যবসায়ীদের সাথে যোগ দেন দোকান কর্মচারীরাও। ব্যবসায়ী নেতারা সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দোকান-পাট খোলা রাখার জানান। তা না হলে তাদের লোকসান দিতে হবে। হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী বেকার হয়ে যাবে।

এ আগে রোববার শপিংমল ও দোকানপাট নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রামের নেতারা। তারা একই দাবিতে চসিক মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, সিএমপি কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি দেন।

রাজশাহী ব্যুরো জানায় : রাজশাহীতে সাহেব বাজার আরডিএ মার্কেট খোলার দাবিতে সকালে মার্কেটের সামনে জড়ো হয়ে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভ করেছে ব্যবসায়ী ও কর্মচারিরা। এসময় তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এবং দোকান খুলে দেয়ার দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। পরে পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। তারা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন।

নোয়াখালী ব্যুরো জানায় : নোয়াখালীতে লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেছে ব্যবসায়ীরা। গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত জেলার প্রধান ব্যাণিজিক কেন্দ্র চৌমুহনী বাজারের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাধারণ কাপড় ব্যবসায়ী ও দোকানের কর্মচারীরা এ বিক্ষোভ মিছিল থেকে সরকারের সিন্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ সময় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সরকারের কাছে জোর দাবি জানান, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা রেখে ব্যবসা করতে চাই।

স্টাফ রিপোর্টার চাঁদপুর থেকে জানান : সাত দিন দোকান বন্ধ রাখার সরকারি নির্দেশনার বিরুদ্ধে চাঁদপুরে হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। দোকান খুলতে দেওয়ার দাবিতে শহরের শপথ চত্বর ও মুক্তিযোদ্ধা সড়কে বিক্ষোভ করে হকার্স মার্কেটের প্রায় সাড়ে ৩শ› ব্যবসায়ী। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, আমরা বিক্ষোভের কথা জানতে পেরে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়েছি। তারা যেন আর লকডাউন ভেঙে আন্দোলন করতে না পারে সে জন্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে লকডাউন না মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার দায়ে ১১জনকে ১৪হাজার টাকা অর্থদন্ড করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১.৩০টা পর্যন্ত দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে এ দন্ড করা হয়।
অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করায় হোসেনাবাদ বাজারের বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা তারাগুনিয়া-হোসনাবাদ সকড় অবরোধ করে। এসময় বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে বিক্ষোভকারীরা পালিয়ে যায়।

ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি (তদন্ত) শাহাদত হোসেন বলেন, হোসেনাবাদ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করলে তারা বিক্ষোভ করার চেষ্টা করে। পরে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন