শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পবিত্র হজ

প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হজ ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির একটি। আরবী হজ শব্দের অর্থ ও মর্ম খুবই ব্যাপক এবং বিস্তৃত। শব্দার্থের দিক দিয়ে হজ হলো, কোনো কাজের ইচ্ছা করা বা দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা। বৈয়াকরণ খলীলের ভাষায়, হজ অর্থ কোনো মহৎ ও বিরাট কাজের জন্য বারবার ইচ্ছা ও সংকল্প করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় হজ হলো, আল্লাহর ঘরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কতকগুলো বিশেষ ও নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে আল্লাহর ঘরের জিয়ারতের সংকল্প করা। এ প্রসঙ্গে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী বলেছেন, আল্লাহর ঘরের সম্মান ও মাহাত্ম্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে এর জিয়ারতের সংকল্প করাই হলো হজ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, আল্লাহরই জন্য লোকদের কর্তব্য হলো, আল্লাহর ঘরের হজ করাÑসে লোকের জন্য যার সেই পর্যন্ত যাতায়াতের সামর্থ্য আছে। রাসূলে করিম (সা.) হজ ফরজ হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করে বলেছেন, আল্লাহর ঘরের হজ আদায় করো যদি সেখানে যাতায়াতের সামর্থ্য তোমাদের থাকে। হজ, বলাই বাহুল্য, সুপ্রাচীন কাল থেকে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এর সঙ্গে আদি মানব-মানবী হযরত আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.), হযরত ইব্রাহীম (আ.), হযরত ইসমাঈল (আ.) ও মহানবী (সা.)-এর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ নির্মিত হয় তা তো বাক্কায় (মক্কায়), তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী। এই গৃহ নির্মাণ করেছিলেন হযরত আদম (আ.)। পরবর্তীকালে হযরত ইব্রাহীম (আ.) তা পুনর্নির্মাণ করেন। কাবাগৃহের ১২ কিলোমিটার দূরে আরাফাত ময়দান। এই ময়দানে হযরত আদম (আ.)-এর সঙ্গে হযরত হাওয়া (আ.)-এর পুনর্মিলন হয়। স্বীয় ভুলের জন্য তিনি আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেন এবং সে মোনাজাত কবুল হয়। হাজীদের এই আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আরাফাতই তো হজ। যে ব্যক্তি মুজদালিফায় যাপন করা রাতের ফজরের নামাজের পূর্বে এখানে এসে পৌঁছবে, তার হজ পূর্ণ হয়ে গেল। আরাফাত ময়দানে জাবালে রহমত অবস্থিত। এই পর্বতের ওপরে দাঁড়িয়ে মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণ দেন। খানায়ে কাবা থেকে মিনার দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার। এ প্রান্তরে হজের আগে ও হজের পরে তাঁবুতে অবস্থান করতে হয়। মিনা প্রান্তরে রয়েছে মসজিদে খায়ের, যেখানে আদিকাল থেকে মহানবী (সা.) পর্যন্ত বহু নবী ইবাদত-বন্দেগী করেছেন।
হজ সম্পাদনে হাজীদের সুনির্দিষ্ট ও নির্ধারিত কিছু কাজ করতে হয়। এগুলো হলো খানায়ে কাবা তাওয়াফ করা। রুকনে ইয়ামানি ও হজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা, মাকামে ইব্রাহীমের পশ্চাতে নামাজ পড়া, সাফা ও মারওয়ায় সাঈ করা, মিনায় গমন করা, মুজদালিফায় অবস্থান করা, শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করা, কোরবানি আদায় করা, তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করা, বিদায়ী তাওয়াফ সম্পন্ন করা। এসব করার মাধ্যমে হজের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতের পাহাড় দৃষ্টিগোচর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজীরা ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিয়ামাতা লাকা ওয়ারমুলক লা শারিকা লাকা’ পড়তে থাকেন। এটা মূলত হযরত ইব্রাহীম (আ.) হজের দাওয়াতেরই জবাব। মক্কায় হজ সম্পন্ন করার পর হাজীরা মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা জিয়ারতে যান। এটা সুন্নাত। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে হজ করল কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না, সে আমার প্রতি জুলুম করল। তিনি আরো বলেছেন, যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত হয়ে গেল। মদীনায় অবস্থানকালে হাজীদের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো, মসজিদে নববীতে হাজিরা দেয়া এবং সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। মসজিদে নববীতে এক রাকাত নামাজের সওয়াব ৫০ হাজার রাকাত নামাজের সমান। হজের এসব ইবাদতের মূল্য কত অপরিসীম, সহজেই তা বোঝা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ করে, আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না, তার পূর্ববতী গোনাসমূহ মাফ করে দেয়া হয়।
হজের ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক দিক ছাড়াও আরো নানা দিক রয়েছে। হজ বিশ্ব মুসলিমের এক মিলনমেলা। সারাবিশ্বের মুসলমানগণ একই পোশাক পরে, লাব্বাইক ধ্বনি উচ্চারণ করে, একই অবস্থানে অবস্থান করে মহান আল্লাহর রেজামন্দি লাভের জন্য কাতরভাবে প্রার্থনা জানায়। তাদের দেহ-মনে থাকে ক্ষমা ও মুক্তিলাভের উদগ্র বাসনা। আল্লাহ পাকের সান্নিধ্য লাভের জন্য তারা ব্যাকুল ও বেকারার থাকে। দুনিয়ার লোভ ও মোহ থেকে তারা থাকে বিমুক্ত ও পবিত্র। তাদের প্রার্থনা, কাতরোক্তি এতই গ্রহণযোগ্য হয় যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের সমুদয় গোনাখাতা মাফ করে দেন। মানুষের জন্য এর চেয়ে বড় খোশখবর আর কিছু হতে পারে না। হজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত নানা বর্ণ, গোত্র, ভাষার মানুষের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধি ও সংহত করে। পরস্পরকে জানার এর চেয়ে বড় সুযোগ আর কোনো বিশ্ব সম্মেলনে সম্ভব নয়। হজ আল্লাহপাকের ক্ষমা, করুণা ও নৈকট্য লাভের অছিলা হোক, বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য-সংহতি ও সৌভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখুক, আমরা একান্তভাবে সে কামনাই করি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন