সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

যে জীবন যুদ্ধের...

বাঁশখালির শ্রমিক আন্দোলন

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

এ জীবন যেন যুদ্ধের। আর সে যুদ্ধে হার মেনে পুলিশের গুলিতে বিদ্ধ রাজিউল (২২) লাশ হয়েই বাড়ি ফিরলেন। পরিবারের দাবি চিকিৎসার টাকার জোগান দিতে না পারায় মৃত্যু হয়েছে রাজিউলের।

গত ১৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বিদ্ধ শ্রমিক রাজিউল গত সোমবার ২০২১ রাত দেড় টায় চট্টগ্রামের বেসরকারি পার্ক ভিউ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করলে গত ২০ এপ্রিল রাতে রাজিউলের লাশ তার নিজ বাড়ি দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের নথন গ্রামে এসে পৌঁছায়। লাশ আসার খবরে স্বজনের আহাজারিতে আশপাশের বাতাস ভারি হয়ে উঠে। বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলা নিহতের মা ওয়াজীবন বেগম বলছিলেন, অভাবের সংসারে একটু সুখের আশায় ছেলে রাজেউল (২২) অল্প বয়সেই কাজের সন্ধানে চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে যায়। সেখানে গত ৬ মাস আগে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে (রিগাড়ি) শ্রমিক হিসেবে কাজে যোগদান করে। কিন্তু এত দ্উত ছেলের লাশ দেখে কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে জানা যায়,পারিবারিক অর্থ কষ্টে আব্দুল মান্নান মন্ডল ও ওয়াজীবন বেগমের ছোট ছেলে রাজেউল ইসলাম (২২) চট্টগ্রাম বাঁশখালি কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রিগাড়ি (মাল লোড-আনলোড) হিসেবে গত ৬ মাস আগে চাকরি নেন। সেখানে কাজ করতে গিয়ে নানা দুর্ভোগের কথাও ফোনে জানান রাজিউল। মালিক পক্ষ মাসের বেতন একমাস বিশ দিন পার হলেও দিতেন না। খাবার পানির সঙ্কট ছিল প্রবল। কষ্টের তুলনায় ন্যায্য মজুরী ছিল কম। এরপরেও শ্রমিক কাটিং (ছাটাই) এর ভয়ে মুখ বুঝে সব সহ্য করা শ্রমিক ন্যায্য দাবিতে মানববন্ধনে নামেন। সেখানেই পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রথমে বাঁশখালি হাসপাতাল থেকে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সবশেষে চট্টগ্রাম পার্কভিউ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন রাজিউল। নিহতের পিতা আব্দুল মান্নান বলেন,ঘটনার তিন দিন আগে ছেলে তাকে ফোনে আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলে। তিনি আন্দোলনে যেতে ছেলেকে নিষেধ করেন। তিনি বলেন কি দোষ ছিল আমার ছেলের? ন্যায্য দাবির কথা বলতে না হয় মানববন্ধনে অংশ নিয়েছে, আর তাতেই ওরা আমার ছেলেকে মেরে দিল। তিনি জানান,গুলি খেয়ে দীর্ঘক্ষণ পরে ছিল তার ছেলে। পুলিশ এবং মালিক পক্ষ প্রথমে হাসপাতালে নিতে দেয়নি । পরে বন্ধু-বান্ধব ঝুঁকি নিয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বাঁশখালি হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে বাইরে নিতে বলেন। পরে রাজেউলকে নেয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় চিকিৎসার গুরুত্ব না পেলে বন্ধুদের সহায়তায় চট্টগ্রাম বেসরকারি হাসপাতাল পার্ক ভিউতে নেয়া হয় তাকে। একদিন পার হতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। এই টাকার যোগান দিতে না পারায় ছেলে রাজিউল মৃত্যু হয় বলে দাবি করেন তিনি। নিহত রাজিউল ইসলামের লাশ গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় পারিবারিক কবস্থানে দাফন করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন